ব্রিটিশ আমল থেকে বিবর্তনের মধ্য দিয়েও অমলিন নিউ দিল্লি কালীবাড়ির পুজো

নিউ দিল্লি (New Delhi) কালীবাড়ির (Kalibari) পুজো শুধু রাজধানীর বুকে নয়, সারা দেশেই যথেষ্ট পরিচিত। শুধু দিল্লি নয়, আশপাশের জায়গা থেকেও এই পুজো দেখতে প্রবাসী বাঙালিরা ভিড় জমান রাজধানীর রাজপথে। আর হবে নাই বা কেন, এ দুর্গাপুজো তো হালফিলের নয়, শুরু হয়েছিল সেই ইংরেজ আমলে। রাজধানী স্থানান্তরিত হল দিল্লিতে। আর তার সঙ্গে কলকাতা থেকে বাঙালি বাবুরা পেশার তাগিদে দিল্লিতে বসবাস করতে শুরু করলেন। তাঁদের হাত ধরেই পুজোর শুরু।

১৯৩১ সালে শুরু হওয়া সেই পুজো, যা একদিন নিউ দিল্লি দুর্গাপূজা সমিতির নামে শুরু হয়েছিল,আজ তা ‘নিউ দিল্লি কালীবাড়ি পূজা’ নামে বিখ্যাত। একদিকে আরাবল্লি পর্বতের শুরু, অন্যদিকে রাইসিনা হিলস। আর মাঝের এই জায়গাটুকু ঘিরে গড়ে উঠেছে কালীমন্দির। সেখানেই হয় শারদীয়ার আবাহন। তখন সরকারি বাঙালি বাবুরা নিজেদের বসবাসের জন্য এই জায়গাটিকে বেছে নিয়েছিলেন। কারণ পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে অন্যান্য সরকারি ভবন, সবই কাছাকাছির মধ্যে। আর যেখানে বাঙালি, সেখানে দুর্গাপুজো তো হবেই।

তবে অনেক আগে কিন্তু এরকম ছিল না। তখন আজকের নিউ দিল্লি কালীবাড়ির পুজো নির্দিষ্ট এক জায়গায় হত না। পুজোর সম্পাদক যিনি হতেন, মায়ের পুজো হত তাঁর বসবাসের এলাকায়। এই অসুবিধার ফলেই তখনকার ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন করা হয় মায়ের পুজোর জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচনের। সেই সময় সরকারের কাছ থেকে ‘উপহার’ হিসাবে পাওয়া ১ একর জমিতেই গড়ে উঠেছিল আজকের কালীবাড়ি । যেখানে এখন প্রতি বছর শরৎকালে মহা সমারোহে পালিত হয় দুর্গাপুজো।

৯০ বছরের এই পুজো আজ হাতবদল হয়ে কালানুক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ প্রজন্মের হাতে। কিন্তু তাও ফাঁকি নেই নিয়মনিষ্ঠার। প্রত্যেক বছর ভক্তিভরে, নির্ঘণ্ট মেনে দেবীর আরাধনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রকমারি বাঙালি খাবারের স্টল বসে এখানে। সেজে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গণ। যদিও অতিমারির আবহে কাটছাঁট অনেক জায়গাতেই। কমিটির তরফে স্বপন গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, করোনাকালে পুজোর অনুমতি মিলেছিল গত বছরেও। কিন্তু তখন কার্যত নিয়মরক্ষায় পুজো সারতে হয়েছিল। এ বছরেও মাত্র দশদিন আগে অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যেই দ্রুত প্রস্তুতি নিয়ে সম্পূর্ণ কোভিড বিধি মেনে হবে মায়ের আবাহন। প্রতিমা দর্শন, অঞ্জলি, ভোগ বিতরণ সবই থাকবে, তবে সরকারি নির্দেশিকা মান্য করে। করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখেই এবারে এখানে হবে না কোনও পংক্তি ভোজন। প্রত্যেকবারের মতো এবারেও কৃষ্ণনগর থেকে কারিগর এসেই মূর্তি তৈরি করেছেন, বোলপুর থেকে এসে গিয়েছে ঢাকিরাও। সবমিলিয়ে হাতেগোনা ১০ দিনের প্রস্তুতিতেই সেজে উঠেছে দিল্লি কালীবাড়ির দুর্গাপুজো। এক উদ্যোক্তা আক্ষেপের সুরে জানালেন, গোটা দিল্লিতে প্রায় তিনশোর কাছাকাছি দুর্গাপুজো হয়। আগে নিয়ম ছিল রাজধানীর সমস্ত দুর্গাপ্রতিমা এখানে এসে জড়ো হবে। তারপর এখান থেকে শোভাযাত্রা বেরোবে। উদ্দেশ্য ছিল, দিল্লিবাসীকে বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। কিন্তু বছর তিনেক আগে যমুনা দূষণের কারণে দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে এই নিরঞ্জন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই আজ তাই আক্ষেপের সুরে বলেন কালীবাড়ি প্রাঙ্গন দশমীর দিনে যে মিলনক্ষেত্রে পরিণত হতো সেটার অভাব এখনও তাঁরা অনুভব করেন।

advt 19

 

 

 

Previous articleঢাক ছাড়া পুজো হয় না, কেমন আছেন ঢাকিরা?
Next article২০৩৬ সালে অলিম্পিক্স আয়োজন করার ভাবনা ভারতের