ধর্মীয় ভাবাবেগ শোভন-বৈশাখীর আঘাত, উত্তাল নেটদুনিয়া! আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি রত্নার

বাঙালির কাছে মা দুর্গা শুধু একটি মূর্তি নয়। দুর্গা বাঙালির আবেগ। দুর্গা বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতি। দুর্গা নারী শক্তির প্রতীক। সর্বোপরি সতী দুর্গা প্রতিটি বাঙালির ঘরের মেয়ে। বিদায় বেলায় সেই উমার সামনে দাঁড়িয়েই ব্যাভিচার করলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। দশমীতে সিঁদুর পরিয়ে পরকীয়া আর অবৈধ সম্পর্কে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা। শোভন-বৈশাখীর এই কাণ্ড দেখে ছিঃ ছিঃ পরে গিয়েছে। তাঁরা দু’জনে মা দুর্গার সামনে সিঁদুরের অপমান করে বাঙালি ও হিন্দুর ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করেছেন অভিযোগ তুলে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন নেটিজেনরা। দুর্গাপুজোর মতো বাঙালির শ্রেষ্ঠ ও পবিত্র উৎসব জুড়ে যেভাবে অবৈধতা ও পরকীয়ার বিজ্ঞাপন শোভন-বৈশাখী করলেন, তাতে এই জুটির নিন্দায় উত্তাল নেটদুনিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, বাংলায় এমন অসভ্যতামি বরদাস্ত করা হবে না। নিজেদের পরকীয়াকে স্বীকৃতি দিতে মা দুর্গাকে অপমান করেছেন শোভন-বৈশাখী, যা মেনে নেবে না বাঙালি। এই “অবৈধ” জুটিকে সামাজিক ভাবে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে কোনও কোনও মহল থেকে।

শোভন চট্টোপাধ্যায়কে লম্পট, চরিত্রহীন, ব্যাভিচারি, অসভ্য, নোংরা ইত্যাদি ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করে তাঁর বিবাহিত স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, হিন্দু বিবাহ আইনে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কোনওরকম আইনি বিবাহ বিচ্ছেদ ছাড়া অন্য কারও সিঁথিতে সিঁদুর দিলে, সেটাকে বিয়ে বা স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হয় না। ওই মহিলাকে ওই পুরুষের রাখেল বা রক্ষিতা বলা হয়। তাই সিঁথিতে সিঁদুর দিলেও বৈশাখী কোনওভাবেই শোভনের স্ত্রী নয়। শোভনের রক্ষিতা। রত্না চট্টোপাধ্যায় আরও জানান, এ জন্মে তিনি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ডিভোর্স দেবেন না। এমনকি, আইনি পথে হেঁটে শোভনকে আদালতে দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন রত্না।

দশমীতে বাবার এমন কাণ্ড কারখানা দেখে চুপ থাকতে পারেননি শোভন পুত্র ঋষি চট্টোপাধ্যায়। তার কথায়, “সিঁদুর খেলা দুর্গাপুজোয় হতেই পারে। কিন্তু, আমার একটা প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের দেশে শরিয়ত আইন মানা হয় না। দুর্গাপুজো হিন্দুদের উৎসব। আইনত যখন শোভন চট্টোপাধ্যায় বিবাহিত, তখন তিনি কী করে এমন একজনের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন যিনি অন্যের স্ত্রী এবং তাঁরও বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি!

এখানেই শেষ নয়। ঋষি আরও বলেন, ”শোভন চট্টোপাধ্যায় স্নান করে বেরোনোর পর কালী পুজো করেন। তিনি যখন হিন্দু ধর্ম মানেন, তখন এত বড় আইন কী করে ভাঙেন! দুর্গাপুজোয় মহিলাকে সর্বোচ্চ শক্তি হিসেবে আরাধনা করা হয়। আমরা বলি, সব মহিলার মধ্যে দুর্গা রয়েছেন। আজ তিনি দুর্গাপুজোয় নিজের স্ত্রীকে অপমান করে অন্যের স্ত্রীকে সিঁদুর পরিয়ে দিচ্ছেন। ইসলামেও বলা হয়েছে যদি আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান তাহলে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু, এখানে তো উনি বেলেল্লাপনা করে বেড়াচ্ছেন।

মিডিয়ার সামনে তা তা থৈ থৈ করে নাচা হচ্ছে, তাঁরা সব কিছু রোমান্টিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু, এতবড় আইন ভঙ্গ হল, সমাজের মানুষজনের কি প্রশ্ন তোলা উচিত নয়? শোভন চট্টোপাধ্যায় কোনও সাধারণ ব্যক্তিত্ব নন। তিনি কলকাতার মেয়র থাকাকালীন মন্ত্রিত্ব সামলেছেন। ওঁর বাড়ি থেকে সোনিয়া গান্ধীর বাড়ি পর্যন্ত শাড়ি যেত। আমার উত্তর চাই, শোভন চট্টোপাধ্যায় ধার্মিক বিষয় নিয়ে কেন খেলছেন? এবার দেশের মানুষের কাছে তাঁকে উত্তর দিতে হবে।”

জামাইয়ের এমন কাণ্ড দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন শোভনের শ্বশুর দুলাল দাসও। “ওকে আমার জামাই পরিচয় দিতেই লজ্জা লাগে। অসভ্য, শয়তান কোথাকার। আমার মেয়ে শুধু নয়, নাতি-নাতনির জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে। চরিত্রহীন। ও জানেই না, কারও কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিলেই তারা স্বামী-স্ত্রী হয়ে যায় না। দেশে আইন বলে একটা বিষয় রয়েছে। তবে এই নিয়ে যা পদক্ষেপ নেওয়ার মেয়ে স্বাধীন ভাবেই (রত্না চট্টোপাধ্যায়) নেবে।”

এদিকে ঘরে-বাইরে-সমাজে চাপের মুখে পড়ে ফের কৌশলী শোভন চট্টোপাধ্যায়। নতুন করে স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর ও বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন শোভন। রত্না তাঁর দুই সন্তানকে ‘’কুশিক্ষা’’ দিচ্ছেন বলে দাবি করেন শোভন। বৈশাখীর কোনও অপমান তিনি সহ্য করবেন না বলেই জানাচ্ছেন শোভন। শোভনের কথায়, ‘‘সাত পাকে বাঁধা পড়েও রত্না রক্ষিতা হয়ে গেছে। অথচ বৈশাখী সাত পাকে বাঁধা না পড়েও সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।’’

সংবাদ মাধ্যমে শোভনের আরও দাবি, একাধিক কারণেই তিনি রত্নার কাছ থেকে দূরে সরে এসেছেন। তাঁর অভিযোগ, স্ত্রী রত্না বেশ কয়েক বছর ধরেই অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন। তাঁর আরও দাবি, রত্না যে মোবাইল ফোন নম্বরটি ব্যবহার করতেন তা শোভনের কাগজপত্র ব্যবহার করে নেওয়া। তাই ওই ফোনের গত কয়েক বছরের যাবতীয় কল রেকর্ড তাঁর কাছে রয়েছে। সেখান থেকেই তিনি প্রমাণ পেয়েছেন রত্না গোপনে কলকাতার বাইরে যেতেন। ক্রেডিট কার্ডের বিস্তারিত তথ্য-সহ আরও অনেক কিছু সামনে আনবেন বলে দাবি শোভনের। তিনি বলেন,‘‘অন্য কাউকে দোষ দেওয়ার আগে রত্না যে ব্যভিচারী জীবনে লিপ্ত হয়েছেন, সেটা দেখা উচিত। সেই ব্যভিচারী জীবনের জন্য আমি নির্দিষ্ট করে আইনগত ভাবে ডিভোর্সের মামলা করেছি। বিভিন্ন সময়ে যে উনি মুম্বইয়ের বিভিন্ন হোটেলে গিয়েছেন, তার প্রমাণ আমার ডিভোর্স পিটিশনে দেওয়া আছে।’’ তাই বৈশাখীকে রক্ষিতা বলে স্বাভাবিক সম্পর্ককে বিকৃত করা হচ্ছে বলে মনে করেন শোভন। তাঁর কটাক্ষ,‘‘আমাকে অকর্মণ্য বলা হচ্ছে, আর তিনি যে কাজের পরপুরুষের সঙ্গে লুকিয়ে অন্য জায়গায় ঘুরে এলেন!’’

একইসঙ্গে ছেলে ঋষি এবং মেয়ে সুহানিকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলার পরিবর্তে তাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন শোভন। তাঁর কথায়,‘‘সন্তানরা যে ভাষায় কথা বলছে তাতে তাদের মায়ের অশিক্ষার প্রতিফলন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।’’

শুধু জীবনযাপনই নয় ‘দাস এন্ড চ্যাটার্জি’ এবং ‘ডিআরএসএস’ সংস্থার টাকা তছরুপেরও অভিযোগ করেন শোভন। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘আমার যত জমি আছে তা ভাড়া খাটিয়ে ওরা রোজগার করেছে। গত চার পাঁচ বছরে যে কোটি কোটি টাকা তছরুপ করেছে তার হিসাব দিক আমাকে। আমি এটা নিয়েও মামলা করেছি, আমি আমার হিসাব ঠিক বুঝে নেব।’’

এ বিষয়ে রত্না চট্টোপাধ্যায় খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “আমি নয়, গোটা সমাজ শোভন বৈশাখীকে ছিঃ ছিঃ করছে। আমার ছেলে-মেয়ে তাদের মা-কে চেনে। তারা এটাও দেখছে বাবা সবকিছু ছেড়ে এক বাইরের মহিলার সঙ্গে লিভ ইন আর লম্পটগিরি করে বেড়াচ্ছে। যে বাবা অন্য মহিলার সঙ্গে ফূর্তি করতে গিয়ে পুজোর সময় ছেলেমেয়েদের খোঁজ পর্যন্ত নেয় না, তার মুখে সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে কোনও কথা মানায় না। মানুষ সব দেখছে বুঝছে।”

এরপরই রত্না চট্টোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে তোলা শোভনের অভিযোগ নিয়ে জানান, “উনি (শোভন চট্টোপাধ্যায়) শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। আমি আইনের পথে হাঁটবো। আদালতেই এই সবকিছুর বিচার হবে। শোভন চট্টোপাধ্যায় দেখি আমার বিরুদ্ধে কী প্রমাণ আনে। মিথ্যা অভিযোগ ছাড়া আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাবেন না উনি, বরং ওনার বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি প্রমাণ নিয়ে আমি তৈরি আছি আইনি লড়াইয়ের জন্য। আদালতেই দেখা হবে, আর আদালতেই আইনি ভাবে শেষ দেখে ছাড়ব!”

আরও পড়ুন:গড়িয়াহাটে বন্ধ তিনতলা বাড়ি থেকে উদ্ধার জোড়া মৃতদেহ

advt 19

 

 

Previous articleগড়িয়াহাটে বন্ধ তিনতলা বাড়ি থেকে উদ্ধার জোড়া মৃতদেহ
Next articleধানবাদ-কলকাতা রুটের বাসে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার, জালে ১ মহিলা-সহ ৩