গড়িয়াহাট জোড়া খুন: ভিকির সঙ্গী বাপি-জহিরের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত

অগ্রিম কড়কড়ে দেড় হাজার টাকা। কাজ মিটলে আরও ৫০ হাজার। ছোটবেলার বন্ধু বাপি মণ্ডলকে ফোনেই টোপ দিয়েছিল ভিকি হালদার। লোভ সামলাতে পারেনি বাপি। ভিকির কথায় আরও এক বিশ্বাসী জাহির গাজিকে জোগাড় করে বাপি। খুনের আগে এই তিনজনই ঢুকেছিল কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকির কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে। গড়িয়াহাট জোড়া খুন কাণ্ডে বাপি-জাহিরকে গ্রেফতরের পর বড়সড় ব্রেক থ্রু পায় করল কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী গোয়েন্দারা।

শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। জেরায় ভেঙে পড়ে বাপি-জাহির। স্বীকার করে অপরাধ। সেই বাপি মণ্ডল এবং জাহির গাজীকে শনিবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে ঘটনার গুরুত্ব বুঝে আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

সরকারি আইনজীবী আদালতে আরও জানান, মৃত সুবীর চাকীর মানি ব্যাগ, হিরের আংটি, মোবাইল এখনও উদ্ধার করা যায়নি। সেগুলি এই মামলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি এই মামলায় আগেই গ্রেফতার হওয়া মিঠু হালদারের সঙ্গে এই বাকি দুই অভিযুক্তকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চান গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। সবটা শোনার পরেই তাঁদের ৫ই নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার আবেদন মঞ্জুর করেন আলিপুর আদালতের বিচারক।

advt 19

উল্লেখ্য, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতেই পাথরপ্রতিমার শেষপ্রান্ত বুড়োবুড়ির তটে বাপির বোনের বাড়িতে হানা দিয়ে আটক করা হয় ২৭ বছরের বাপি, ২৫ বছরের জাহিরকে। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় অপরাধের কথা স্বীকার করেছে তারা।

জানা গিয়েছে, ডায়মন্ডহারবারের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নাইয়াপাড়ার বাসিন্দা বাপি। স্থানীয়ভাবে ভাড়াবাড়ির দালালি তার পেশা। স্ত্রী বন্দনা পরিচারিকার কাজ করেন। সেই সূত্রে মিঠুর সঙ্গে আলাপ। পুলিশ সূত্রে খবর, মিঠু-ভিকি বুঝতে পেরেছিল, এ কাজ দু’জনের সাধ্য নয়। তাই ফোন যায় বাপির কাছে। পরে একদিন মদের আসরে বসিয়ে তার মগজধোলাই করে ভিকি। তখনই অগ্রিম টাকা চায় বাপি। এরপর মিঠু বাড়ি বয়ে এসে বাপির স্ত্রী বন্দনাকে বলে যায়, ‘আমরা একটা ভালো বাড়ির খোঁজ পেয়েছি। বিক্রি হলে ভালো টাকা পাব। বাপিকেও ভালো কমিশন দেব।’ দেড় হাজার টাকা বন্দনার হাতে গুঁজে দেয় সে। তারপর বাপির হাত ধরেই দলে যোগ দেয় জাহির।

এরপর পুজোর মধ্যেই আলোচনায় বসে চারজন। সেখানে পুরো পরিকল্পনা ছকে নেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে দাবি, সেইমতো সুবীরবাবুর বাড়িতে দরদাম নিয়ে গণ্ডগোলের পর কর্পোরেট কর্তার কাছে টাকা দাবি করে ভিকিরা। ছুরি বের করে হুমকি দেয়, ‘টাকা না দিলে আপনাকে খুন করব।’ সুবীরবাবুর কাছে তখন নগদ ছিল না। সেকথা জানাতেই প্রথম কোপ মারে ভিকি। এরপর তার দুই বন্ধু কোপাতে শুরু করে সুবীরবাবুকে। এই ফাঁকে ছাদে উঠে লোকজন ডাকতে যাচ্ছিলেন গাড়িচালক রবীন মণ্ডল। তাঁকে ধাওয়া করে মারে ভিকিরা। এরপর সুবীরবাবুর মানিব্যাগ, আংটি হাতিয়ে তিনজন বেরিয়ে যায়। মানিব্যাগে থাকা ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড দিয়ে টাকা তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। যদিও জেরায় ক্রমাগত বয়ান বদল করছে মিঠু। সে এও জানিয়েছে, প্রথমে দোতলায় উঠে গাড়িচালককে খুন করে তারা। পরে সুবীরবাবুকে মারা হয়। তদন্তকারীদের ধারণা, বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে মিঠু। ভিকিকে গ্রেপ্তার হলেই আসল ঘটনা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

জানা গিয়েছে, ঢাকুরিয়া স্টেশনে বাকি টাকা দাবি করে বাপি-জাহির। ডায়মন্ডহারবারে নামার পর মিঠু তাদের গা ঢাকা দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এই খুনের কিনারা করা দুঁদে গোয়েন্দাদের জালে ধরা দেয় মূল অভিযুক্ত ভিকি হালদারের দুই বিশ্বস্ত সঙ্গী বাপি ও জাহির।

আরও পড়ুন- ‘এটা আপনার প্রোডাকশন হাউস নয়’, দেরিতে হাজিরা দেওয়ায় অনন্যাকে ‘ধমক’ দিলেন সমীর ওয়াংখেড়ে

 

 

Previous articleজয় দিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপের অভিযান শুরু অস্ট্রেলিয়ার
Next articleহিন্দুদের সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চেয়ে মোদিকে চিঠি হিরণের