‘আর ভাইফোঁটা হবে না আমাদের’: তনিমা চট্টোপাধ্যায়

ভাঙল প্রথা। এবার আর ভাইফোঁটা হল না আমাদের। দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের ভাইবোনেদের এই মিলন উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিলেন আমাদের প্রিয় দাদা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সেই দাদাই এবার নেই। প্রতি বছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম আমরা বোনেরা। সব বোন এক জায়গায় জড়ো হতাম। দাদা আসবে।

আরও পড়ুন:‘থিম নয় সাবেকিয়ানা’:স্বপন মহাপাত্র

আমার বাড়িতেই হত এই অনুষ্ঠান। দাদাও অপেক্ষায় থাকত আমাদের মতোই। কোন কোন মিষ্টি চাই, আগেই জানিয়ে দিতেন। শুধু বলাই নয়, কোন দোকান থেকে আনতে হবে তাঁর পছন্দের মিষ্টি তাও বলে দিতেন দাদা। সেই সঙ্গে ছিল খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। দাদা খুব বেশি খেতেন না। তবে একাধিক পদ ছিল তাঁর পছন্দ। সবই খেতেন একটু একটু করে। সব নিজেই ঠিক করে আমাদের বলে দিতেন। আমরা শুধু আয়োজন করতাম। এসব কত কথা আজ মনে পড়ছে। আর খাওয়ার পর পছন্দের একটা বড় আতা দাদার চাই। যাই কিছু ঘটে যাক ওই আতা দাদার চাই। খাওয়ার পর দাদা বসে বসে খুব তৃপ্তি করে সেই আতা খেতেন। দাদার জন্য গড়িয়াহাট মার্কেট থেকে সেই আতা আমি আগেই কিনে রাখতাম। একটা আতার দামই ছিল দু’আড়াইশো টাকা। নির্দিষ্ট দোকান থেকে সেই আতা দাদার জন্য কিনে আনতাম। ভাইফোঁটায় কী উপহার চাই তাও দাদা নিজেই বলে দিতেন। আমরা বোনেরা এক-একজন এক-একটা দাদার প্রিয় জিনিস উপহার দিতাম। আর ভাইফোঁটার পোশাকটা দিতাম আমি। আমার দেওয়া পোশাক পরেই সবার ফোঁটা নিতেন দাদা। দাদাও আমাদের নানা উপহার দিতেন। সব মিলিয়ে ভাইফোঁটার দিনটা ছিল আমাদের ভীষণ আনন্দের। সারা বছর এই দিনটা ভাইবোনেরা মিলে কাটাতাম। সেটাও ছিল একটা বড় পাওনা। কারণ, দাদাকে তো খুব বেশি কাছে পাওয়া যেত না।

আগে আমি থাকতাম এন্টালির কাছে সিআইটি রোডে। কিন্তু বয়স যত বাড়ছিল দাদা বলতেন, সবাই কাছাকাছি থাক। তাই আমাদের সবাইকে দাদা দক্ষিণ কলকাতায় টেনে আনে। দাদার কথা মেনেই এন্টালি ছেড়ে গত কয়েক বছর আমিও দক্ষিণ কলকাতাবাসী। ভাইবোনেরা সবাই একসঙ্গে কাছাকাছি থাকব, এটাই ছিল দাদার ইচ্ছে। তাঁর কথামতো আমরা কাছে এলাম, কিন্তু আজ সেই দাদাই আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন দূরে, বহুদূরে। ফলে এতদিনের প্রথা ভেঙে এবার আর ভাইফোঁটা হল না আমাদের। আর হবেও না। দিনটা কীভাবে কাটবে জানি না, বিশেষ করে দাদাকে ছাড়া। সকাল থেকে আমরা বোনেরা পালা করে বউদির সঙ্গে ছিলাম। তবে এই শূন্যতা তো কোনও কিছুতেই পূরণ হওয়ার নয়। উনি তো নামেই আমাদের দাদা। আসলে ওঁর ভূমিকাটা ছিল অনেকটা বাবার মতোই। সবাইকে আগলে রাখতেন। সেই মানুষটাই হঠাৎ এভাবে চলে গেলেন। জানি না এই শূন্যতা কীভাবে কাটবে।

Previous article‘থিম নয় সাবেকিয়ানা’:স্বপন মহাপাত্র
Next article‘সংসদে সুব্রতদা গেলে বদলাত বাংলার চিত্র’:সমীর চক্রবর্তী