Sunday, August 24, 2025

Birthday of Salil Choudhury সলিল চৌধুরীকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই : প্রদীপ্ত চৌধুরীর কলম

Date:

Share post:

সলিল চৌধুরীকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই । তাঁর একটা বিখ্যাত গান প্রথম আলো দেখেছিল কলকাতার বহুল পরিচিত চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ‘চাং ওয়া’-য়। সেখানে এক বিকেলে সলিল চৌধুরীর সঙ্গী হয়েছিলেন তৎকালীন মেগাফোন কোম্পানির কর্তা কমল ঘোষ। কমলবাবুর অনুরোধে সলিল চৌধুরী মেনুকার্ডের আইটেমগুলির (পাওচিন, মান্ডারিন, গার্লিক চিকেন, রেড পিপার চিলি, সালাড)  আদ্যাক্ষর নিয়ে নিমেষের মধ্যে সুর সহযোগে একটি গানের মুখরা তৈরি করে ফেলেছিলেন। লতার গাওয়া সেই মন-কেমন-করা গানটি হল ‘পা মা গা রে সা/  তার চোখের জটিল ভাষা’।

সলিল চৌধুরীর সুরে মানবেন্দ্রর একটি জনপ্রিয় গান হল ‘যদি জানতে গো তুমি জানতে’। সলিলীয় সুরের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য গানটায় ভরপুর। সলিল এ-গানের সুরটা করেছিলেন আগে। আর লিখে রেখেছিলেন শুধু মুখরাটুকু। রিহার্সালেও গানের বাকি অংশটা উনি লা-লা-লা করেই মানবেন্দ্রকে তুলিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গণ্ডগোলটা বাঁধল রেকর্ডিং-এর ঠিক আগের মুহূর্তে। দেখা গেল, বাকি গানটা লিখতে তিনি বেমালুম ভুলে গেছেন। শুনে তো সকলের মাথায় হাত। সেই চরম বিপদেও মানবেন্দ্র সলিলকে রসিকতার সুরে বললেন, ‘দাদা, হাতে আজ সময় তো খুবই কম। এবার কিন্তু আপনাকে প্রতিভার পরীক্ষায় বসতে হবে।’ সলিল চৌধুরী ততক্ষণে একটা সিগারেটের প্যাকেট ছিঁড়ে তার সাদা দিকটায় বাকি গানটা খুদে খুদে অক্ষরে লিখতে শুরু করে দিয়েছেন। রেকর্ডিং ফ্লোরে নয়, সামনের সবুজ লনে একটা চেয়ারে বসে। বড়জোর মিনিট দশেক। ব্যস, তার মধ্যেই গোটা গানটা লেখা হয়ে গেল। মানবেন্দ্র-সহ উপস্থিত সকলেই তখন হতবাক। সদ্য লেখা লাইনগুলি ছিল এইরকম…’তুমি জান কি / আমি এলাম জীবনদিগন্তে / সান্ত্বনা মোর এই শুধু / আমি পাড়ি দিয়েছি বসন্তে / ধরা ফুলে ফুলে গেছে ছেয়ে / এই জীবন বন-বনান্তে’।

এই সলিল চৌধুরীই একবার চার্লি চ্যাপলিনের ‘লাইমলাইট’ দেখে হল থেকে বেরিয়েছেন। অসম্ভব ভালো লেগেছে ছবিটা। কিন্তু মাথা থেকে কিছুতেই বেরোচ্ছে না ছবির থিম সং-টা। বাড়ি ফেরার আগেই সেই সুরের আদলে মনে মনে রচনা করে ফেললেন ‘পল্লবিনী গো সঞ্চারিনী’। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া সেই গানের জনপ্রিয়তা এখনও পুরোদস্তুর অটুট ।

একবার কোনও একটা ছবির কাজে বিমানে চেপে দক্ষিণ ভারত যাচ্ছিলেন সলিল। মাঝপথে ঝড়ের কবলে পড়ল সেই বিমান। পরিস্থিতি একটা সময় বেশ বিপজ্জনক হয়ে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ পর অবশেষে অক্ষত বিমান নিয়েই এয়ারপোর্টে নামলেন পাইলট। ততক্ষণে সলিলও তাঁর আতঙ্কটা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন। মৃত্যুভয়ের অন্ধকার কেটে গিয়ে আবার ফুটে উঠছে বেঁচে থাকার আলো। সেই মনোভাবেরই অব্যর্থ প্রতিফলন উঠে এল তাঁর গানের খাতায়। অবিলম্বে ভূমিষ্ঠ হল আরও একটি মাইলফলক গান…‘আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা’।

 

আজ তাঁর জন্মদিন।

spot_img

Related articles

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে নাম নথিভুক্তি শুরু

পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার্থে এবার আরও এক পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির আওতায় দুয়ারে সরকার শিবিরেও...

‘নিখুঁত ভুলগুলি’, উৎপল সিনহার কলম

একটা দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান হয়ে ওঠে ...একটি দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান...

ষোলতেই ১৩০ কেজি! ছেলের খাবার জোগাতেই নাজেহাল বাবা-মা

মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার কাবিলপুর পঞ্চায়েতের মথুরাপুর গ্রাম। এখানেই থাকেন দিনমজুর মুনশাদ আলি। তাঁর ছোট ছেলে জিশান আলি...

কবে থেকে শুরু জয়েন্টের কাউন্সেলিং? দিনক্ষণ জানিয়ে দিল বোর্ড

ফলপ্রকাশের পর এবার ১৫ দিনের মধ্যেই কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া তথা ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। এবার কাউন্সেলিং...