শোভন জননেতা নয়, নেত্রীর আলোয় আলোকিত ছিল: দাবি একদা ছায়াসঙ্গী সুশান্তর

মমতাদি না থাকলে শোভন কিংবা আমাকে কেউ চিনত না

সোমনাথ বিশ্বাস: বাম জমানায় খুব অল্প বয়সে জেতা কাউন্সিলর। এরপর বিধায়ক। একাধিক দফতরের মন্ত্রী। জেলার সংগঠনের শীর্ষ পদ। কলকাতা পুরসভার (KMC) দু’বারের মেয়র (Mayor)। এসব এখন অতীত। শ্যাম-কূল দুই হারিয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovon Chatterjee) এখন রাজনৈতিক অজ্ঞাতবাসে। ভোট আসলেই মাঝেমধ্যে জেগে ওঠেন। হতাশা ঝেড়ে ফেলার তাগিদে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন। কেউ কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না দেখে আরও বেশি হতাশ হয়ে পড়েন। এবং কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আকাশচুম্বী অট্টালিকার ব্যালকনিতে বসে দিবাস্বপ্ন দেখেন আর আবল-তাবোল বকেন।

মাটিতে পা নেই। আকাশ থেকেই পুরভোটের ঠিক আগে
শোভনবাবু পরোক্ষে আবার দাবি করছেন, তিনি মেয়র হিসাবে কলকাতা পুরসভার দায়িত্ব ছাড়ার পরও আরও যা যা কাজ হয়েছে বা হবে, সবই নাকি তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। তিনি সব রূপরেখা তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। যাইহোক, এরমধ্যেই চলে এসেছে আরও একটি পুরভোট। বহু বছর পর শোভন চট্টোপাধ্যায় পুরভোটের দৃশ্যপটে নেই। তাঁকে ছাড়াই এবার তৃণমূল কংগ্রেস যে আরও বেশি ওয়ার্ড দখল করতে চলেছে তা কার্যত পরিষ্কার। এবং সমস্ত ওয়ার্ড থেকেই আরও বেশি বেশি মার্জিনে ঘাসফুল প্রার্থীরা যে জিতবেন, সেটাও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। একুশের বিধানসভা ভোট হোক, কিংবা আসন্ন কলকাতা পুর নির্বাচন (KMC Election), শোভন চট্টোপাধ্যায়ের যে কোনও রাজনৈতিক ভ্যালু নেই, তা প্রমাণ হয়েছে এবং প্রমাণ হবে।

মন্ত্রিত্ব, মেয়র, বিধায়ক কিংবা দলের সাংগঠনিক পদ আগেই হারিয়েছেন। জার্সি বদল করেও দল নেই তাঁর। এবার শেষ রাজনৈতিক সম্বলটুকুও হাতছাড়া হতে চলেছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। একদা তাঁর বিধানসভা এলাকা বেহালা পূর্বের (Behala East) লক্ষ লক্ষ মানুষকে অভিভাবকহীন করার শাস্তি পেয়েছেন ২ মে। আসন্ন ২১ নভেম্বর নিজের পাড়াতেও শোভনবাবুর রাজনৈতিকভাবে নাম ও নিশান চিরতরে মুছতে চলেছে।

সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এক সময়কার শোভনবাবুর ছায়াসঙ্গী, তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী, নির্বাচনী এজেন্ট ও অভিন্ন হৃদয় বন্ধু সুশান্ত ঘোষ (বুয়া) শোভন সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বললেন, “দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) হাত মাথায় না থাকলে আমাদের ব্যক্তিগত কোনও পরিচয় নেই। মমতাদি না থাকলে শোভন কিংবা আমাকে কেউ চিনত না। আমরা আজ যা কিছু হয়েছি সব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। শোভন রাজনৈতিক ভাবে বা প্রশাসক ভাবে যে উচ্চতায় পৌঁছে ছিল, তার সব অবদান দলনেত্রীর। ওর নিজের কোনও ক্যারিশমা ছিল না। সেটা প্রমাণিত।”

শোভন চট্টোপাধ্যায় কোনও জননেতা নয়, তাঁর কথায় বা প্রভাবে রাজনীতির কোনও ধারা পরিবর্তন যে হবে না তা গোটা বাংলার মতো বেহালার মানুষও জানেন। ১২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা শোভনের একসময়কার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মী সুশান্ত ঘোষ (Sushanta Ghosh) বলেন, “একুশের বিধানসভা ভোটের আগে গত কয়েক বছর আমাদের বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায় এলাকায় ছিলেন না। বিধায়ক থাকলে ভাল হতো। তবে শোভন না থাকায় বেহালা পূর্বের কোনও ওয়ার্ডে কোনও সমস্যা হয়নি। বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কোনও অভাব বুঝতে দেননি।বেহালা পূর্বের কোনও সমস্যা নিয়ে গেলে তিনি সমাধান করেছেন। কাউন্সিলররাও নিজ নিজ ওয়ার্ডে তাঁদের দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করেছেন। মানুষের সমস্যায় ছুটে গিয়েছেন। সমাধান করেছেন। বিধায়ক শোভনের প্রয়োজন অনুভূত হয়নি।”

তবে শোভন চট্টোপাধ্যায় বিধায়ক বা মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরও এলাকায় না থাকায় এবং তাঁর দল বদলের আগে পর্যন্ত অনেক মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। এ প্রসঙ্গে সুশান্ত ঘোষ বলেন, “আমি শোভনের নির্বাচন এজেন্ট ছিলাম। অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ছিল আমার। বছরের পর বছর ওর জন্য মানুষের কাছে ভোট চাইতে গিয়েছি। তারপর জিতে চলে যাওয়ার পর মানুষের কাছে আমাদের জবাব দিতে হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা না হলেও ওর এভাবে বিধানসভা এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি।”

আপনার সঙ্গে কি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের এখনও যোগাযোগ আছে? কথা হয়? উত্তরে সুশান্ত ঘোষ বলেন, “বিধানসভা ভোটের আগে শেষবার ব্যক্তিগত স্তরে ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল, তারপর থেকে আর কোনওরকম কোনও যোগাযোগ নেই। অনেক আগে একবার আমি শোভনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেন এমন করছে, জবাব পাইনি। বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে। আমিও ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে আর মাথা ঘামাইনি।”

একুশের ভোটে বেহালা পূর্ব রত্না চট্টোপাধ্যায়কে আরও বেশি ভোটে জিতিয়ে নতুন বিধায়ক করেছে। বিধায়কের অভাব পূরণ হয়েছে? সুশান্ত বলেন, “নতুন বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায় জেতার পর কাউন্সিলরদের সঙ্গে একবার বসেছিলেন। তারপর কাজের জন্য বেশি সময় পাওয়া যায়নি। পুরভোট মিললে বিধায়কের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করা যাবে।”

আরও পড়ুন:Kolkata: কলকাতায় ১ কোটি টাকা-সহ গ্রেফতার এক, টাকার উৎস খুঁজছে পুলিশ

Previous articleKolkata: কলকাতায় ১ কোটি টাকা-সহ গ্রেফতার এক, টাকার উৎস খুঁজছে পুলিশ
Next articleLakhimpur Kheri Case: লখিমপুরকাণ্ডে প্রবল চাপে মন্ত্রী-পুত্র, পরিকল্পিত খুনের চেষ্টা-সহ কড়া ধরায় অভিযোগ সিটের