শেষ সম্বলটুকুও থাকবে না, রত্নার নিশ্চিত জয় জেনেই হতাশায় ভুগছেন শোভন

সোমনাথ বিশ্বাস:আর কয়েক দিনের অপেক্ষা মাত্র। আগামী ২১ ডিসেম্বর রাজনৈতিকভাবে তাঁর শেষ সম্বলটুকুও চিরতরে হাতছাড়া হতে চলেছে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র (Mayor) শোভন চট্টোপাধ্যায়ের (Sovon Chatterjee)। শ্যাম-কূল সব হারিয়ে শোভনবাবু বেশ কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক অজ্ঞাতবাসে। তৃণমূল (TMC) ছেড়ে বিজেপিতে (BJP) নিজেকে বিরাট কিছু ভেবে কর্তৃত্ব ফলাতে গিয়ে বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। তবে ভোট এলেই নিজেকে সংবাদে আনতে হঠাৎ হঠাৎ জেগে ওঠেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। আসন্ন কলকাতা পুরভোটের (KMC Election 2021) আগে ফের জেগে উঠেছেন তিনি। তবে সংবাদ মাধ্যমে সাময়িক আলোচনায় হাসির খোরাক হলেও রাজনৈতিক মহলে একেবারেই পাত্তা পাচ্ছেন না শোভন চট্টোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন:Bank Strike:রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে আজ থেকে দু’দিনের ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক

বিধায়ক-মন্ত্রী-কাউন্সিলর কিংবা মেয়র হওয়ার পর ঈশ্বরের কাছে মানুষের জন্য কাজ করার শপথ নিয়েও একান্তই ব্যক্তিগত কারণে বেপাত্তা শোভন চট্টোপাধ্যায়। যদিও তাঁর রাজনীতিতে থাকা না থাকার কোনও প্রভাবই পড়েনি এই কয়েক বছরে। বরং তাঁর পুরোনো দলের জন্য তা শাপে বর হয়েছে। কথায় বলে, “দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।” তাই দুষ্টু গরুরা যত বিদায় নিয়েছে, তৃণমূলের ততই রাজনৈতিক লাভ হয়েছে। জনমানসে দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ হয়েছে।

বিধানসভা ভোটে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কেন্দ্র বেহালা পূর্ব থেকে রেকর্ড মার্জিনে জিতে বিধায়ক হয়েছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সব আসনেই বড়সড় ব্যবধানে জিতেছে তৃণমূল। শোভনবাবুর একাধিক দফতরের মন্ত্রীত্ব চলে যাওয়ার পর নতুন যাঁরা দায়িত্বে এসেছেন, তাঁরা দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ সামলাচ্ছেন। তাঁর জায়গায় মেয়র পদে ফিরহাদ হাকিম দায়িত্ব নেওয়ার পর গত কয়েক বছরে যা কাজ করেছেন, বিশেষ করে করোনা ও আমফানের সময়ের কাজ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে কলকাতা পুরসভার ইতিহাসে।

শোভন চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রিত্ব ও মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিধায়ক কিংবা কাউন্সিলর পদ আগলে ছিলেন। তবে শপথ নিয়েও অভিভাবকহীন করেছিলেন নিজের বিধানসভা ও পুরসভা এলাকার বাসিন্দাদের। ইতিমধ্যেই বিধায়ক পদ চলে গিয়েছে তাঁর, নতুন বিধায়ক পেয়েছে বেহালা পূর্ব। আর ২১ ডিসেম্বরের পর ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর শোভন চট্টোপাধ্যায় তাঁর শেষ রাজনৈতিক সম্বলটুকুও হারাতে চলেছেন। সেই জায়গায় নতুন কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। ওয়ার্ডের যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সেখানে তৃণমূল প্রার্থী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের জয় কার্যত নিশ্চিত।

আর এই সবকিছু দেখেই সাদার্ন অভিনিউয়ের অট্টালিকায় বসে প্রবল হতাশায় ভুগছেন প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এবং আবোল-তাবোল বকছেন। এক সময় তাঁর ছায়াসঙ্গী, নির্বাচনী এজেন্ট, বিধানসভা এলাকার কাউন্সিলরা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সহকর্মী কেউ নেই শোভনবাবুর পাশে। তিনি মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে মানুষের সঙ্গে যেভাবে প্রতারণা করেছেন, তাতে শোভনবাবুর সঙ্গে যে এমনটাই হবে সেটাই স্বাভাবিক। তিনি যে জননেতা নন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া তাঁর রাজনৈতিক অস্তিত্ব নেই, সেটা শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজেও বুঝতে পারছেন। তা না হলে অন্তত নির্দল হয়ে বিধানসভা অথবা পুরসভা ভোটে দাঁড়িয়ে মানব সেবায় ব্রতী হতেই পারতেন। কিন্তু দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শোভন চট্টোপাধ্যায় হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন, তিনি যেখানেই দাঁড়াবেন গো-হারা হারবেন।

শোভনবাবুর এই হতাশার বহিঃপ্রকাশের সর্বশেষ নিদর্শন, তিনি বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন, তাঁর ছায়াতেই নাকি ভোট হচ্ছে ১৩১ নম্বরে। তাঁর নাম ব্যবহার করে নাকি ভোটে লড়ছেন কোনও প্রার্থী। আর এইসব করে নাকি শোভনবাবুকে কেউ বা কারা শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি মেয়র পদ ছাড়ার পর থেকে নাকি বিশেষ কোনও উন্নয়ন হয়নি কলকাতার। তাঁর আমলের প্রস্তাবিত কাজই নাকি এখনও শেষ করে উঠতে পারেনি কলকাতা পুরসভা। ইত্যাদি ইত্যাদি ফিরিস্তি দিয়ে যাচ্ছেন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। যা শুনে বাচ্চারাও হেসে পাগল। আসলে শোভনবাবু নিজেই নিজের ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

প্রবল হতাশার মাঝে শোভনবাবু ভুলেই গিয়েছেন, মানুষের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর মানুষকে ঠকিয়ে তিনি ওয়ার্ড ছেড়ে প্রায় চারবছর নিরুদ্দেশ। জনতা জনার্দন। মানুষ বোকা নয়, সেটা বিধানসভায় বেহালা পূর্ব শোভনবাবুকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এবার কলকাতা পুরভোটে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষও জবাবটা তাঁকে ২১ ডিসেম্বর সকাল সকাল দিয়ে দেবেন। শোভনবাবু, আর তো কয়েকটা দিন। তাই রাজনৈতিকভাবে শেষ সম্বলটুকু হারানোর বেদনা ও হতাশা থেকে ভুলভাল না বকে, ব্যক্তি কুৎসা, মিথ্যাচার, ব্যাভিচার থেকে বিরত হয়ে অপেক্ষা করুন। ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ আপনাকে “দেখ কেমন লাগে…” জবাব দিতে তৈরি।

Previous articleJammu & Kashmir:উপত্যকায় বড়সড় সাফল্য, কাশ্মীরে যৌথবাহিনীর গুলিতে খতম ২ জঙ্গি
Next articleKMC : কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে বিজেপির আর্জি খারিজ, কলকাতা পুরভোটে রাজ্য পুলিশেই আস্থা কলকাতা হাইকোর্টের