Friday, August 22, 2025

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি। আট মাস আগে গত ২ মে বেহালা পূর্ব থেকে রেকর্ড মার্জিনে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। যা ২০১৬ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মার্জিনে থেকে দ্বিগুণের বেশি ছিল। ঠিক একইভাবে আজ ২১ ডিসেম্বর কলকাতা পুরভোটে শোভনের ১৩১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১০,২০৬ ভোটে জিতে রেকর্ড গড়লেন রত্না। যা ২০১৫ সালের নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মর্জিনের দ্বিগুণেরও বেশি। অর্থাৎ, একই বছরে ব্যাক টু ব্যাক শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মুখে জোড়া ঝামা ঘষলেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। এবং রাজনৈতিকভাবে শোভনবাবুর শেষ সম্বলটুকু ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে কার্যত জীবন্ত জীবাশ্ম পরিণত করলেন রত্না। এদিন ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর বিপুল মার্জিনে জয়ের পর এলাকাবাসীদের উচ্ছ্বাস উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। যেন তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া এই ওয়ার্ডের কোনও গদ্দার-বেইমান-মীরজাফরকে উচিত শিক্ষা দিলেন তাঁরা। রত্নার জয়কে কেন্দ্র করে তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে আবির খেলা থেকে বাজি কিংবা ডিজেতে ‘খেলা হবে’ তালে তালে নাচ ছিল চোখে পড়ার মতো।

অন্যদিকে, মানুষের দ্বারা বর্জিত স্বঘোষিত “হিম্মতওয়ালা” প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় যে আদপে রয়েল বেঙ্গল টাইগার নয়, বরং বাঘ ছাল পড়া বিড়াল, সেটা ফের একবার প্রমাণ করলেন। শোভনবাবু তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ৩৬ বছর ছিলেন কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর। ছিলেন বোরো চেয়ারম্যান। ছিলেন দেড়বারের মেয়র। ছিলেন একাধিক দপ্তরের মন্ত্রী। ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত মাথার উপর ছিল বলে সবকিছুই “ছিলেন” শোভনবাবু। তিনি দলের সঙ্গে গদ্দারি করে বান্ধবীকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানেও টিকতে পারেননি। এখন আবার সবকিছুই অতীত। শ্যাম-কূল হারিয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে রাজনৈতিক অজ্ঞাতবাসে। বেশ কয়েক বছর অন্য সঙ্গে পড়ে তাঁর মতিভ্রম হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

জনপ্রতিনিধি হয়ে মানব সেবার শপথ নিয়ে তিনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার পরিবর্তে এলাকার মানুষকে অভিভাবকহীন করে বছরচারেক বেপাত্তা। পরিবর্তে তিনি বান্ধবীর সন্তানকে নিজের সন্তান করার শপথ নিয়েছেন। ভালো করেছেন। ব্যক্তিগত ব্যাপার। করতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন, মানুষের ভোটে জিতে মানুষকে কেন “অনাথ” করেছেন?

খুব স্বাভাবিকভাবে আপদে-বিপদে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে কাছে না পেয়ে গোটা বেহালা অঞ্চলের মানুষ তাঁর ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ। সেটা তিনি এই কয়েক বছরে বিভিন্ন সময় টের পেয়েছেন। এবং সেই কারণেই শোভনবাবু তাঁর নিজের এলাকা ও ওয়ার্ডে জনরোষের মুখে পড়তে পারেন আঁচ করেই সাদার্ন অ্যাভেনিউ-এর অট্টালিকা থেকে বেরিয়ে রবিবার নিজের বুথে ভোট দেওয়ার সাহসটুকু পর্যন্ত দেখাতে পারেননি। তিনি আবার নিজেকে জননেতা বলে আত্মপ্রচার করেন। তিনি আবার গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লের মতো হিম্মতের কথা বলেন। তাঁর দৌড় আগেও বাংলার মানুষ দেখেছে, ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে এবারও ভোট দিতে না আসায় নতুন করে তা দেখা গেল। আরে এদিন রত্না চট্টোপাধ্যায় রেকর্ড মার্জিনে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জেতার পর তো শোভনবাবুর শিব রাত্রির সলতেও নিভে গেল। শোভনবাবু রাজনৈতিকভাবে তাঁর শেষ সম্বলটুকুও হারালেন। ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডেও শোভনবাবুর অপছন্দের প্রার্থী রত্নাদেবী তাঁর মুখে ঝামা ঘষে দিলেন। রত্না চট্টোপাধ্যায়কে দুই হাত তুলে আশীর্বাদ করে ওয়ার্ডের মানুষ বুঝিয়ে দিলেন শোভন তাঁদের কাছে এখন এক অন্ধকার অতীত। আসলে কথায় আছে না, “মুর্দা লাখ বুরা চাহে হোতা নেহি/ওহি হোতা জো মঞ্জুরে খুদা হোতা…!”

 

Related articles

সোনা জয়ী অভিনবকে শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ জুনিয়র (Asian Shooting Championship) এয়ার রাইফেল বিভাগে বাংলার অভিনব সাউয়ের (Abhinaba Shaw)। তাঁর এই সাফল্যই...

পুজোর আগে রাজ্য পুলিশের শীর্ষস্তরে রদবদল! পরিবর্তন হল ৬ জেলার এসপি-ডিসি

পুজোর মুখে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ পদে বড়সড় রদবদল করল নবান্ন। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, একাধিক জেলায় পুলিশ...

‘নোরা ফাতেহি’ হতে হবে! স্ত্রীকে জোর করে শরীরচর্চা করিয়ে গর্ভপাত শিক্ষকের

যোগীরাজ্যে স্কুলশিক্ষকের ফ্যান্টাসির চূড়ান্ত নমুনা! স্ত্রীকে হতে হবে রোগা ছিপছিপে চেহারার। আর সেই চেহারা বানাতে গিয়েই স্বামীর নির্মম...

গান-কবিতায় সংসদে সরব তৃণমূল! বয়কট রাজ্যসভার চা-চক্র

বৃহস্পতিবার অধিবেশনের শেষ দিনে সংসদ উত্তাল হল বাংলা গান, কবিতা, বিক্ষোভ, প্রতিবাদে। সংসদের অন্দরে যেমন কালাকানুন, এসআইআর, ভাষাসন্ত্রাসের...
Exit mobile version