গর্বের ১২৫ বছর পার মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেইন) এর

পরতে পরতে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্যের পরশ। বিশ্বেশ্বর মিত্র প্রতিষ্ঠিত মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেইন) এর ১২৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস ৫ জানুয়ারি অত্যন্ত ঘরোয়া পরিবেশে কোভিডবিধি মেনে উদযাপিত হলো।
বিশ্বেশ্বর মিত্র মহাশয় এর প্রপৌত্র তীর্থঙ্কর মিত্র  প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন  বিশ্বরূপ দে । নৃত্য, লোকগীতি ও সেতার বাদনের মধ্য দিয়ে সর্বাঙ্গীন সুন্দর হয়ে ওঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

১৮৯৮ সালের ৫ জানুয়ারি  বিশ্বেশ্বর মিত্রের উদ্যোগে |৪৫, বেনিয়াটোলা লেন-এ হওয়া কলকাতার শীর্ষস্থানীয় ও ঐতিহ্যপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিত্র ইনস্টিটিউশন(মেন) এবছর পদার্পণ করেছে ১২৫ বছরে। প্রত্যেকের কাছে এই মুহূর্ত একই সঙ্গে আনন্দের এবং গৌরবের।

বিশ্বেশ্বরবাবু সেই অর্থে শিক্ষাবিদ ছিলেন না।কাজ শুরু করেছিলেন দমদম গোলাবারুদ কারখানার একজন করণিক হিসেবে। শিক্ষার প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল গভীর। তাই করণিকের চাকরি তাঁকে খুব বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। মাত্র ৫জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১৮৯৮ সালে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার যাত্রা শুরু করলেও অচিরেই লাভ করেছিল জ্ঞানী-গুণী মানুষের সান্নিধ্য। ওই বছরই স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন উপাচার্য স্যার আলেকজান্ডার পেডলার এর পৃষ্ঠপোষকতায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি লাভ করেছিল।

পরবর্তীকালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের অনুরোধে বিশ্বেশ্বর মিত্র ১৯০৫ সালে ভবানীপুর-এর ১৬এ, বলরাম বোস ঘাট রোড এ বিদ্যালয়ের আর একটি শাখার প্রতিষ্ঠা করলে সূর্য সেন স্ট্রীট এর এই বর্তমান শাখাটি মিত্র ইনস্টিটিউশন(মেন)রূপে পরিচিতি লাভ করে।১৯০১ সালে উত্তরপাড়ার রাজা প্যারিমোহন মুখোপাধ্যায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথম সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন।

১৯০৬ সালে মিত্র ইনস্টিটিউশন মেন-এর শিক্ষার্থীদের প্রথম এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসার মধ্যে দিয়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গৌরবোজ্জ্বল আর একটি অধ্যায়-এর সূচনা হয়েছিল। ১৯১৩ সালের যে  এন্ট্রান্স পরীক্ষায় কটকের রেভেনশ কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র হিসেবে দ্বিতীয় হয়েছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সেই পরীক্ষাতেই প্রথম ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন এই বিদ্যালয়েরই ছাত্র প্রমথনাথ সরকার ও সতীশচন্দ্র সেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এই বিদ্যালয়ে নিজেদের পদধূলি দিয়ে এই ঐতিহ্যপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। যাদের মধ্যে উল্লখযোগ্য ছিলেন বিখ্যাত চরমপন্থী নেতা বিপিন চন্দ্র পাল, কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতা ও মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক গুরু গোপালকৃষ্ণ গোখলে,১৯১৪ সালে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ভূপেন্দ্রনাথ বোস, বিখ্যাত ব্যঙ্গাত্মক নাটক রচয়িতা রসরাজ অমৃতলাল বসু, শোভাবাজার ৮ নম্বর রাজবাড়ীর অজয়কৃষ্ণ দেব প্রমুখ।এছাড়াও যে পাঁচজন ছাত্রকে নিয়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরু হয়েছিল তাদের অন্যতম অটলবিহারী বসু পরবর্তীকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। বিশিষ্ট কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর আত্মজীবনী ‘ নীরবিন্দু’- তে লিখেছেন যে তিনি এই বিদ্যালয়-এ একবছর পড়াশোনা করেছিলেন। ব্যকরণবিদ ও কবি কৃষ্ণদয়াল বসুও এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে বিশেষ উল্লখযোগ্য ছিলেন সতীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মলচন্দ্র মিত্র প্রমুখ।

তদানীন্তন রিপণ কলেজ (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) tar অধ্যয়ন  আগে এই বিদ্যালয়ভবনেই হতো।স্বামী বিবেকানন্দ যখন আমেরিকার শিকাগো শহরে ‘Parliament of Religion’ এ বক্তৃতা দিয়ে হিন্দু বেদান্ত দর্শনকে বিশ্বের আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করে ভারতে ফিরে আসেন(১৮৯৭ সালে) তখন এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই তদানীন্তন রিপণ কলেজের পক্ষ থেকে তাঁকে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯তারিখ -এ বিশেষ সম্বর্ধনা দেওয়া হয়েছিল।

১৯০১ সালে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন-এ রিপণ কলেজ একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছিল। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী এই অধিবেশনেই কংগ্রেসের সভ্য হয়ে বিদ্যালয়প্রাঙ্গণে পদার্পণ করেছিলেন।

এইভাবে শতাব্দীপ্রাচীন মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেন) বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের অবদান রেখে তার জয়যাত্রা আজও অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে চলেছে।।

Previous articleপ্রয়াত মজিবুরকে ত্রিপুরায় চোখের জলে শেষশ্রদ্ধা তৃণমূল নেতৃত্বের, শুক্রবার শেষকৃত্য
Next articleউদ্বেগ বাড়ছে: ২৪ ঘন্টায় ১৫ হাজার পেরোলো রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা