বাংলার ট্যাবলো বাতিল নেতাজির অপমান: কেন্দ্রের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বুদ্ধিজীবী মহল

সাধারণতন্ত্র দিবসের(Republic Day) অনুষ্ঠানে কেন্দ্রের তরফে বাংলার ট্যাবলো বাদ দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ গোটা বাংলা। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে(Central) চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(MamataBanerjee)। এবার এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করল রাজ্যের বুদ্ধিজীবী মহল। তাদের দাবি, এই ধরনের সিদ্ধান্ত শুধু বাংলা ও বাঙালিদের প্রতি অপমান নয়, সুভাষচন্দ্র বসু সহ স্বাধীনতা আন্দোলনে যে সমস্ত বাঙালি অংশ নিয়েছিল তাদেরকে অপমান করছে মোদি সরকার।

বাংলার ট্যাবলো বাদের বিষয়ে বিশ্ব বাংলা সংবাদকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অভিনেতা কৌশিক সেন, চিত্র পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, অভিনেতা বাদশা মৈত্র, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, সংগীতশিল্পী রূপঙ্কর বাগচী ও প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্যের মত ব্যক্তিত্বরা।

কৌশিক সেন: ঘটনা সত্যি অবাক করেছে। গত নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি যথেষ্ট আদিখ্যেতা করেছিল নেতাজীকে নিয়ে। নেতাজিকে কংগ্রেস যথাযথ সম্মান দেয়নি বলে দাবি করেছিল তারা। এত কথা বলার পর তাদের এই কাজটা তাদের আসল চরিত্রটাকে বের করে এনেছে। এটাই আসলে ওদের দর্শন। আরএসএসের নেতাজিকে সহ্য করার কথা নয়।

সুদেষ্ণা রায়: এই ঘটনা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রাজ্যের প্রতি বৈমাতৃসুলভ আচরণ। স্বাধীনতা আন্দোলনে ওরা বাংলার যোগদানকে হেয় করছে। বাংলা চিরকাল বিদ্রোহী, আন্দোলন করে উঠে এসেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার যোগদানকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা চলেছে সব সময়। সেটাকে আরও বেশি করে দাবিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চলছে এখন। যেভাবে ওরা নেতাজির ট্যাবলো বাতিল করেছে তা সরাসরি নেতাজিকে ছোট করা অপমান করা। এবং বাংলা থেকে যারা স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল তাদের সকলকে অপমান করা হয়েছে। বাঙালিকে অবমাননা করা হয়েছে।

বাদশা মৈত্র: এটা অত্যন্ত খারাপ একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হলো। একেবারেই কাম্য নয়। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলার ট্যাবলো থাকবে না পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হিসেবে এই সিদ্ধান্তের আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ মানসিকতা। যারা দেশ চালান সরকার চালান সেই প্রশাসককে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে হয়। না হলে প্রশাসক হিসেবে তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সংকীর্ণ মানসিকতাকে আমি একেবারেই সমর্থন করছি না।

পবিত্র সরকার: যেকোনো বাঙালির কাছে এটা দুঃখজনক। এটা এক ধরনের অসম্মান নেতাজির স্মৃতির প্রতি। বাঙালি প্রতি। রাজ্যের সঙ্গে আগে কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল কোন যুক্তিতে তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। থিম পরিবর্তন কিংবা অদল বদল করার পরামর্শ দিতে পারতেন। কিন্তু পুরো বিষয়টা একেবারে প্রত্যাখ্যান করে কেন্দ্রীয় সরকার আহাম্মকের কাজ করেছে। এর পিছনে কোন রাজনীতির যোগ আছে কিনা তা আমি বলতে পারব না। তবে বিষয়টা শুধু বাংলা নয়, সারা পৃথিবীর কাছে দৃষ্টিকটু।

রূপঙ্কর বাগচী: ভীষণ খারাপ লাগছে, সুভাষচন্দ্র বসু আমাদের গর্ব তার প্রতি অবমাননা নিশ্চিত ভাবে অত্যন্ত দুঃখজনক।

মানস ভট্টাচার্য: এটা একটা অপদার্থ কেন্দ্রীয় সরকার। এরা বোঝে না দেশপ্রেমিক কাকে বলা হয়। বাংলাকে অপমান করার জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান করার জন্য যেভাবে হোক বাংলার সবকিছু বাতিল করো। এই ধরনের মানসিকতা চলছে। নেতাজি বাঙালির হৃদয়ে রয়েছে এবং রাজ্য সরকার নেতাজিকে নিয়ে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে এটা পছন্দ হচ্ছে না। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে চূড়ান্ত ধিক্কার জানাই। নেতাজিকে অপমান করা মানে বাংলাকে অপমান করা।

Previous article৬৩বছরেও ভাইরাল চাকাচক ‘ডান্সিং দাদি’ 
Next articleমতুয়া ক্ষোভ সামলাতে এবার আসরে দিলীপ ঘোষ