আমলানীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ফের তোপ মুখ্যমন্ত্রীর

বিষয় দেশের আইএএস ক্যাডারদের কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য আইন পরিবর্তন

আর সে নিয়ে এবার প্রধানমন্ত্রীকে আরও কড়া ভাষায় চিঠি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একই বিষয় নিয়ে এক সপ্তাহে দু’দুবার চিঠি। নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। আর এই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর উদ্বেগ ঢেকে না রেখে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, এতে দেশের সংবিধানের ‘লৌহকঠিন কাঠামো’ আঘাতপ্রাপ্ত হবে। প্রশাসনের মধ্যে ভয় আর চাপ তৈরি হবে। উন্নয়নে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। স্বাধীনতার ৭৫ পূর্তিতে তা মোটেই আপামর ভারতবাসীর কাছে কাম্য হতে পারে না। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর বড় আঘাত হতে চলেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরেই মুখ্যমন্ত্রী দু’পাতার এই চিঠি পাঠিয়েছেন। শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ১৩ জানুয়ারির চিঠিতে আইএএস ক্যাডার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আপনাকে চিঠি দিয়েছিলাম। সেখানে পরিস্কার জানিয়েছিলাম,আইএএস ক্যাডার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কেন্দ্র যে সংশোধনী প্রস্তাবনা আনছে, সে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঘোর আপত্তি রয়েছে। কিন্তু আমাকে দ্বিতীয়বার চিঠি লিখতে হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি লিখতে বাধ্য হলাম। তার কারণ, এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে তাদের কড়া অবস্থান ফের ঘোষণা করে পুনর্বার নতুন সংশোধনী প্রস্তাব পাঠিয়েছে। যা দেখে আমার বারবার মনে হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর চরম অভিঘাত আনতে চলেছে। প্রথমবারের চাইতে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবনাটি আরও সাংঘাতিক, সর্বগ্রাসী। যা আমাদের ঐতিহ্যশাল যুক্ত্ররাষ্ট্রীয় আধারের পরিপন্থী। যা আমাদের সংবিধানের মূল কাঠামো থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে।

মুখ্যমন্ত্রী উদাহরণ তুলে বলেছেন, ধরা যাক একজন আইএএস অফিসারকে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য থেকে সরিয়ে নিয়ে দেশের যে কোনও জায়গায় তাকে পোস্টিং দিতে চায়। এক্ষেত্রে কেন্দ্র সেই অফিসারের ব্যক্তিগত অনুমতি নিতে বাধ্য নয়। এমনকী যে রাজ্যের হয়ে সেই অফিসার কাজ করছিলেন, সেই সরকারের অনুমতিরও প্রয়োজন নেই নয়া সংশোধনীতে। এই পদ্ধতি চালু হলে দেশে অতিমাত্রায় ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হবে, কাজের ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে। নিশ্চিতভাবে যা অফিসারদের স্বাধীন সত্ত্বা আর নৈতিক মানদণ্ডকে নষ্ট করে দেবে। মাথায় রাখতে হবে রাজ্যের প্রাশাসনিক কাজে আইএএস অফিসাররাই আসলে মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু কেন্দ্রের বর্তমান পদক্ষেপে বিষয়টা এমন জায়গায় এসে দাঁড়াবে যে প্রত্যেকটি আফিসারকে আগামী দিনে কেন্দ্রীয় তর্জনী শাসনের খাড়া ঝুলিয়ে কাজ করতে হবে। যা কার্যত অফিসারদের মধ্যে ত্রাস তৈরি করবে। সব সময় ভয়ের আবহের মধ্যে থাকবেন। যার ছাপ পড়তে বাধ্য তাঁদের কাজে। ফলে রাজ্যগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইসঙ্গে এই আইনের ফলে অফিসারদের কর্মক্ষেত্রের মৌলিক নীতিগুলিকেও ধ্বংস করবে। এতদিন তাঁরা কাজের জন্য জবাবদিহি করতেন রাজ্য সরকারকে। এবার সেই পরিস্থিতিরও পরিবর্তন হচ্ছে। স্বাধীনভাবে রাজ্যের স্বার্থে কাজ করার ক্ষেত্র কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রূকুটির ভয় তাদের নিরুদ্যোগ করবে।

প্রস্তাবিত সংশোধনী আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আঘাত। রাজ্যের স্বাভিমান রক্ষার মৌলিক অধিকারকে খর্ব করবে।দেশের সাধারণতন্ত্রের যাত্রা শুরুর ভিত্তিভূমি, কেন্দ্রীয় সরকারের এই অযৌক্তিক, একমাত্রিক উদ্যোগের ফলে নড়বড়ে হয়ে যাবে।

আমি অনুরোধ করছি আপনাকে, সর্বভারতীয় সার্ভিসে দক্ষ অফিসারদের কার্যক্ষমতা ও গণস্বার্থে তাদের দক্ষ অভিজ্ঞতাকে প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী আপনার এই অবিবেচক পদক্ষেপ থেকে আপনি অবিলম্বে বিরত হন। কেন্দ্র-রাজ্যের সুদীর্ঘ সম্পর্কের উজ্জ্বল পরম্পরা যা ভারতকে ক্রমশ শক্তিশালী করেছে তাকে কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা দেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অপরিণামদর্শী হবে, যা কাম্য নয়। এই পদক্ষেপ সর্বভারতী সার্ভিসের অফিসারদের রাজ্যে রাজ্যে কাজ করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সংবিধান প্রদত্ত রাজ্যের মৌলিক অধিকারকে বিনষ্ট হবে।

আপনার রাষ্ট্রনেতা সুলভ সুবিবেচনার প্রত্যাশা করছে দেশ এবং ভারতের সমস্ত রাজ্য।

মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠি নিঃসন্দেহে বিতর্ক তৈরি করবে। এবং রাজ্যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি সমর্থনে অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও সরব হবেন।

 

 
Previous articleনিজের বিধানসভা কেন্দ্রেই ভোট প্রচারে গিয়ে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে যোগী রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক
Next articleIndia Team: ইরানের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে বড় ধাক্কা ভারতীয় মহিলা দলে