ভোটবাজারে উত্তরপ্রদেশে মিথ্যার বেসাতি বিজেপির, চলছে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন

অর্ধসত্য বা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচারে বিজেপির(BJP) জুড়িদার খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য কাজ। সেই ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে দেশের প্রতিটি মানুষের ব্যাঙ্ক একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা বলে শুরু হয়েছিল বিজেপির মিথ্যার বেসাতি। মিথ্যার সেই পরম্পরা অক্ষুন্ন রয়েছে গত ৭-৮ বছরে দেশের ছোট বড় সব নির্বাচনে।

২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ(UttarPradesh) বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপির অভিযোগ এবং প্রচার ছিল যে সমাজবাদী পার্টির(SP) সরকারের অধীনে কাইরানা থেকে বিপুল সংখ্যক হিন্দু মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে অন্যত্র। কারণ মুসলমানদের অত্যাচার। পাঁচবছর পরে আর একটি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারে সেই কাইরানা। আর এবারের প্রচার হলো, বিজেপির জমানায় ঘর বাড়ি ছেড়ে যাওয়া মানুষেরা আবার ফিরে এসেছে কাইরানায়। এই প্রচারকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কাইরানায় তার ডোর টু ডোর নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। এই সময়ে, অমিত শাহ (Amit Shah) কাইরানার হিন্দু পরিবারগুলির সাথে দেখা করেছেন যারা ২০১৭ সালের আগে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। বিজেপির প্রচার অনুযায়ী , মুসলিমদের অত্যাচারে। গত শনিবার অমিত শাহ’র কাইরানা সফরের পরে, রবিবার সেখানে গিয়েছিলেন গুটিকয়েক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। তাঁরা কথা বলেছিলেন সেই সব মানুষের সঙ্গে যাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন অমিত শাহ।

আরও পড়ুন:মমতার সুরে এবার IAS ক্যাডার রুলের বিরোধিতায় মোদিকে চিঠি বিজয়ন-স্ট্যালিনের

এমনই একজন ব্যক্তি ৫৩ বছর বয়সী লোকেশ খটিক। গত তিন দশক ধরে কুরগান রোডে একটি ছোট চায়ের স্টল চালাচ্ছেন লোকেশ। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, তার ছেলে মাদক সেবন শুরু করেছিল । এই নেশার কারণে পুরো পরিবারই সমস্যায় পড়েছিল। তাই তিনি কাইরানা ছেড়ে চলে যান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলের জীবন বাঁচাতে আমরা পরিবারসহ ২০১৩ সালে পানিপথে গিয়েছিলাম। তারপর ২০১৮ সালে ফিরে আসেন। কিন্তু যারা আমার ছেলেকে মাদক সেবনে বাধ্য করেছিল, তাদের আজও বহাল তবিয়তে ঘুরতে দেখে আমার খারাপ লাগছে।’

বরুণ সিংঘালের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন অমিত শাহ। বরুণের বড় ভাই বিনোদ সিংঘাল কে ২০১৪ সালের আগস্টে তোলাবাজরা গুলি করে হত্যা করেছিল বলে অভিযোগ। সেই সময় বিনোদ সিংঘাল একটি মুদি দোকানের বাইরে বসে ছিলেন। বরুণ জানান, ‘ভাইয়ের কথিত খুনের পরপরই আমরা শহর ছেড়েছি। কিন্তু যোগী সরকার উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় আসার দুই বছর আগে ২০১৫ সালে ফিরে আসি । তিনি বলেন, “আমার ভাইকে হত্যার পর প্রায় সব বড় নেতারা আমাদের পরিবারকে দেখতে এসেছেন। তাদের পক্ষ থেকে আমাদের আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এমনকি কাইরানা যাত্রার সময় যোগীজি (মুখ্যমন্ত্রী) আমার বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আর্থিক সাহায্যের নামে শুধু আশ্বাসই পাওয়া গেছে।”

এঁরা কেউই সাম্প্রদায়িক কারণে ঘরছাড়ার কথা বলেননি। বলেছেন সমাজবিরোধীদের কথা। ঘরছাড়া মানুষেরা ফিরে আসার কথা বলে বিজেপি শাসনে উত্তপ্রদেশের আইন-শৃঙ্খলার উন্নতির কথা প্রচার করছেন অমিত শাহ’রা। বাস্তবটা কি ? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য বলছে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ২০% বেড়েছে। ২০১৭ সালে ৫৬,০১১টি নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে যেখানে ২০১৮ সালে ৫৯,৪৪৫টি কেস নথিভুক্ত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৮ সালে উত্তরপ্রদেশে অপহরণের ২১৭১১টি, দাঙ্গার ৮৯০৮ টি এবং ডাকাতির ৩২১৮টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে সহিংস অপরাধের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের মতো শিশুদের বিরুদ্ধেও অপরাধ গত কয়েক বছরে বেড়েছে। ২০১৮ সালে শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের ১৯৯৩৬ টি, ২০১৭ সালে ১৯১৪৫টি এবং ২০১৬ সালে ১৬০৭৯টি মামলা রেকর্ড করেছে৷সবই সরকারি তথ্য। বিজেপির মিথ্যাচার নিয়ে আর কোনো ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।

Previous articleSurajit Sengupta: করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি প্রাক্তন ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত
Next articleANUBRATA : ‘চড়াম চড়াম’- ‘জয়ঢাক’ -‘গুড়-বাতাসা’  অনুব্রতকে অবিকল নকল করলেন কৌতুকশিল্পী !