প্রত্নতত্বের মর্যাদা পাচ্ছে কর্ণগড়, আনন্দে কাঁদছে নিসর্গরা

চুয়াড় বিদ্রোহের দ্বিতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রানি শিরোমণি(Rani Shiromani)। তাঁর রাজধানী ছিল কর্ণগড়। এই বিদ্রোহকে বলা যেতে পারে ব্রিটিশ বিরোধী কৃষক বিদ্রোহ(Farmer revolution)। খাতায়-কলমে প্রত্নতাত্ত্বিক মর্যাদা পাচ্ছে কর্ণগড়। আনন্দে কাঁদছে নিসর্গরা।

কর্ণগড়ে(Karnagarh) এখনও রয়েছে গড়ের ধ্বংসাবশেষ। নিজেদের আবেদন সর্বস্তরে তুলে ধরেছিল ভালোবাসি কর্ণগড় ও হেরিটেজ জার্নি সংগঠন। মুখ্যমন্ত্রীর ড্রিম প্রজেক্ট কর্ণগড়। সংরক্ষিত গড়ের নামকরণ হয়েছে, রানি শিরোমণি গড়। প্রায় দু’কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র। রয়েছে ক্যাফেটেরিয়া, চার ধরণের প্রায় ন’টি কটেজ। তৈরি হয়েছে সুদৃশ্য তোরণ, সেতু, পিকনিক স্পট। তৈরি হচ্ছে কমিউনিটি ট্যাংক।

ভালোবাসি কর্ণগড়, হেরিটেজ জার্নি, রানি শিরোমণি ও চুয়াড় বিদ্রোহের দ্বিশত বর্ষ উদযাপন কমিটি, অখিল ভারতীয় ক্ষত্রিয় সমাজ, জেলা কুড়মি সেনা পাঁচটি সংগঠন মিলে তৈরি হয়েছিল শিরোমণি ঐক্য মঞ্চ। প্রথম থেকে আবেদন ছিল, খাতায়-কলমে হেরিটেজ মর্যাদা পাক কর্ণগড়। পাঠ্যপুস্তকে অধ্যায় হিসেবে স্থান পাক রানি শিরোমণি ও কর্ণগড়। বিভিন্ন দপ্তর, অধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন জানাচ্ছিলেন নিসর্গ নির্যাস মাহাতো, সুনীল বিশ্বাস, তন্ময় সিংহ। পাশে পেয়েছিলেন অনেক বিশিষ্ট মানুষ ও সংগঠনকে। লড়াইটা ছিল প্রায় তিন বছরের। উদ্দেশ্য একটাই, জেলার মুকুটে আরও একটা নতুন পালক যুক্ত হওয়া। অখন্ড মেদিনীপুরবাসী হিসেবে এটুকুই চাওয়া। আবেদনকারীদের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র।

আরও পড়ুন:সিএএ কার্যকর করতে এত দেরি হচ্ছে কেন ? – মোদি-শাহকে চিঠি মতুয়া সম্প্রদায়ের

সূত্রের খবর, খাতায়-কলমে প্রত্নতাত্ত্বিক মর্যাদা পেতে চলেছে কর্ণগড়। আবেদনকারীরা ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, রাজ্য সরকার, রাজ্য প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর, জেলাশাসক, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিককে।

পূর্বতন ও বর্তমান রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছিল আগেও। এখানে পরিদর্শন করে গিয়েছিল জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া- জানিয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক কুনাল ঘোষ। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, স্টেট আর্কিওলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর। বর্তমানে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে পর্যটনকেন্দ্র হয়েছে রানি শিরোমণি গড়। এবার জেলার মুকুটে আরও একটি নতুন পালক যুক্ত হতে চলেছে। সম্প্রতি এখানে পরিদর্শন এসেছিল তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের রাজ্যের প্রতিনিধি দল ও রাজ্য প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষা।

এ প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, শিরোমণি ঐক্য মঞ্চের তরফে তাঁর কাছে যে আবেদন পাঠানো হয়েছিল, তা তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠান। বর্তমানে তা অনুমোদিত হয়েছে। এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছে রাজ্য প্রত্নতাত্ত্বিক দল। ঐতিহাসিক এই গড়কে প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে এতদিন কাজ করে চলা শিরোমণি ঐক্য মঞ্চকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন তিনি।

দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এই সাফল্যে নিসর্গ নির্যাস মাহাতো, মুস্তাফিজুর রহমান, রিমা কর্মকার, চিন্ময় দাস, প্রসূন কুমার পড়িয়া, নবনীতা সাহা, অরুণাংশু দে, অপূর্ব মাহাতোর যেন আর তর সইছে না।