হঠাৎ কীসের স্বার্থে নিষ্ক্রিয় কমিউনিস্ট বুদ্ধদেবকে পদ্মভূষণ বিজেপির? প্রশ্ন জয়প্রকাশের

কেন্দ্রীয় সরকারের শাসক দল বিজেপি দর্শন বা নীতি আদর্শের দিক থেকে কমিউনিস্টদের ঘোর বিরোধী

বাংলার রাজনীতিরতে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে ফের রাম-বাম ঘোঁট প্রকাশ্যে! এরাজ্যে দীর্ঘদিন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ব্যক্তিগতভাবে তিনি কতটা সৎ বা ভালো মানুষ, সেটা এখানে বিচার্য নয়, বুদ্ধদেবের “পদ্মপ্রাপ্তি” নিয়ে প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায়। বুদ্ধবাবুর আমলে এ রাজ্যে কম বিতর্ক হয়নি। বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কমিউনিস্ট সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল বাংলার বুকে। বিরোধীরা এখনও বলেন, নন্দীগ্রামে শহিদের রক্তে রাঙা বুদ্ধবাবুর হাত। বিজেপিও একথা বলে। তাহলে এতদিন পর হঠাৎ কোন সামাজিক কাজের স্বীকৃতির দরুণ বাংলার প্রাক্তন ও বিতর্কিত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মানের জন্য মনোনীত করল বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার? এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক লাভ-লোকসানের গন্ধ নেই তো? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।

এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির বহিস্কৃত নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার নিজেও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, “আমার জানা নেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কোন সামাজিক কাজের জন্য এই সম্মানে মনোনীত করা হয়েছে। বুদ্ধদেববাবু দীর্ঘদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির একজন প্রতিনিধি। এ রাজ্যে কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাও ছিলেন। যদিও এখন তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন। রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। আমি যতদূর জানি, এখন যাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের শাসক দল, সেই বিজেপি দর্শন বা নীতি আদর্শের দিক থেকে কমিউনিস্টদের ঘোর বিরোধী। অথচ সেই কমিউনিস্ট পার্টির নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে এ রাজ্যের বহু বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তাঁর অনেক সমালোচনা করেছিল বিজেপি। তাই এতদিন পর হঠাৎ করে কেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পদ্মভূষণ মনোনীত করা হলো সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।”

যদি একটু ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানো যায়, তবে অনেকের কাছেই বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী বা সংস্কৃতিমন্ত্রী থাকাকালীন বিজেপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবানীর সঙ্গে মধুর সম্পর্ক ছিল। দিল্লি গিয়ে তিনি আডবানীর কাছে অনেক আবদার করেছেন। কিছু দাবিই আদায় করে এনেছেন। আডবানীও প্রকাশ্যে বুদ্ধদেবের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন। আবার অতিসক্রিয় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় সুযোগ পেলেই অসুস্থ বুদ্ধবাবুকে দেখতে তাঁর বাড়ি ছুটে যান, তার নেপথ্যেও এই বিজেপি-সিপিএম সখ্যই দেখছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। আবার শেষ কয়েক বছরে সিপিএমের ভোট বিজেপিতে ট্রান্সফার হয়েছে। সিপিএম যে লেভেলে কমেছে, ঠিক সেই লেভেলেই ভোট বেড়েছে বিজেপির। তাই হয়তো বুদ্ধবাবুকে সম্মান দিয়ে বিজেপি আসলে সিপিএম ভোটারদেরকেই ধন্যবাদ জানাতে চাইল। এবং অদূর ভবিষ্যতে যাতে ভোটবাক্সে বামেরা রামের দিকেই তাঁদের মতদান করেন, নিষ্ক্রিয় বুদ্ধবাবুকে পদ্মভূষণ মনোনীত করার পিছনে সেটাও একটি বড় কারণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। কারণ, কলকাতা পুরসভা সহ খুব সম্প্রতি কয়েকটি নির্বাচনে আবার বামেরা নিজেদের ভোট অল্প অল্প করে ফিরে পেতে শুরু করেছে। এবং এই ট্র্যাডিশন যদি চলতে থাকে, তাহলে যে অচিরেই এ রাজ্যের বুক থেকে বিজেপি চিরতরে বিদায় নেবে তা বলাই বাহুল্য। তাই নিষ্ক্রিয় কমিউনিস্ট নেতা বুদ্ধবাবুকে পদ্মপ্রাপ্তির তালিকায় এনে খবরের শিরোনামে তাঁকে জায়গা দিয়ে আখেরে ভোটের রাজনীতি করছে না তো কেন্দ্রের শাসক দল?

এ প্রসঙ্গে বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “আজকের একজন নিষ্ক্রিয় বৃদ্ধ কমিউনিস্ট নেতাকে পদ্মভূষণ মনোনীত করে ভোট পাওয়ার এমন অপচেষ্টা যদি বিজেপির তরফে হয়ে থাকে, তাহলে বাস্তবের মাটিতে তা কতটা ফলপ্রসূ হবে আমার অন্তত জানা নেই।”

এক্ষেত্রে আবার জয়প্রকাশবাবু নিজেই প্রশ্ন তুলে দেন। তিনি বলেন, “প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশের বিভিন্ন কৃতী মানুষকে সম্মানিত করার একটা রীতি আমাদের রয়েছে। সেভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতীদের বিভিন্ন পদ্ম পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। আবার কাউকে কাউকে সম্মান ও খেতাব দেওয়ার পিছনে অনেক সময় রাজনৈতিক গন্ধ কাজ করে। এক্ষেত্রে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে তাঁর কী এমন সামাজিক কাজের জন্য হঠাৎ এই সম্মানে মনোনীত করা হলো আমি এখনই বলতে পারবো না, তবে এই খেতাব দেওয়ার ঘোষণার পিছনেও রাজনৈতিক কোনও গন্ধ থাকলেও থাকতে পারে।”

এখানেই শেষ নয়। তিনি আরও বলেন, “কমিউনিস্ট ও বিজেপি রাজনৈতিক ও নীতিগতভাবে যুযুধান দুই পক্ষ। সাধারণত কমিউনিস্টরা এই ধরনের রাষ্ট্রীয় খেতাব নিতে চিরকালই অস্বীকার করে। বিজেপি সেটা জেনে বুঝেও একজন নিষ্ক্রিয় রাজনীতিবিদকে হঠাৎ করে রাজনীতির শিরোনামে তুলে আনার জন্য এই পুরস্কার ঘোষণা করেনি তো? আবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সগর্বে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে কী বার্তা দিলেন? এই খেতাব দেওয়ার ইচ্ছে আর খেতাব প্রত্যাখ্যান করার ইচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে এই দুইয়ের মধ্যে কোনটি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।তবে সিপিএম বা নিষ্ক্রিয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে খবরের শিরোনামের তুলে আনার চেষ্টা বিজেপি করল, তাতে আখেরে কার কী লাভ হল, সেটার দিকে কিন্তু সকলের নজর থাকবে।”

বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা জয়প্রকাশবাবুর এমন মন্তব্যের মধ্যে একটি বিষয় অন্তত স্পষ্ট, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে বাম আর রাম ঘোঁটের রাজনীতির তত্ত্ব খাড়া করে আসছিল, বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পদ্মভূষণ মনোনীত করার মধ্য দিয়ে ঘাসফুল শিবিরের সেই বক্তব্যতেই যে সিলমোহর পড়লো তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আরও পড়ুন- রাজ্যপালকে ‘পশ্চাৎদেশ’ ঘোড়ার! রসবোধে মজলেন দর্শকরা

 

 

Previous articleরাজ্যপালকে ‘পশ্চাৎদেশ’ ঘোড়ার! রসবোধে মজলেন দর্শকরা
Next articleজিতেন তিওয়ারিকে “মোষ” বলে কটাক্ষ অনুব্রতর! কিন্তু কেন?