জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমিতে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রাম থেকে “গদ্দার” শুভেন্দুকে উৎখাতের ডাক কুণালের

আগামিদিনে নন্দীগ্রামে বিজেপি বলে কিছু থাকবে না। তাই শুভেন্দুও থাকবে না। ডাইনোসরকে যেমন ছবিতে দেখা যায়, শুভেন্দুকেও শুধু ছবিতে দেখা যাবে

আজ ১৪ মার্চ। নন্দীগ্রাম দিবস। ঠিক ১৪ বছর আগে বাম জমানায় এই দিনেই পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে ১৪ জন জমি আন্দোলনকারী নিরপরাধ গ্রামবাসীর প্রাণ গিয়েছিল তৎকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের পুলিশের নির্মম অত্যাচার ও গুলিতে। যে ভয়াবহ স্মৃতি এখনও টাটকা।

২০০৭ সাল থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে ১৪ মার্চ দিনটি চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজ্যে দীর্ঘ বাম জমানায় পতনের অন্যতম বড় কারণ হিসেবে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রাম গণহত্যাকে ধরা হয়। সেই দিনটিকে স্মরণে রেখে এবং পুলিশের গুলিতে জমি আন্দোলনের শহিদ তর্পণ-এ ২০০৮ সাল থেকেই ১৪ মার্চ দিনটিকে নন্দীগ্রাম দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। যার আয়োজন করে থাকে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রতিবছর এই দিনটিতে নন্দীগ্রামে যান কলকাতা থেকে রাজ্যস্তরের নেতানেত্রীরাও। এ বছরও নন্দীগ্রামে তৃণমূলের একাধিক কর্মসূচি। মালপল্লিতে শহিদবেদিতে মাল্যদান করেন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সহ তৃণমূল নেতৃত্ব।

শহিদবেদিতে মাল্যদানের পর এদিন তাঁর বক্তৃতায় শুভেন্দু অধিকারীকে তুলোধনা করেন কুণাল ঘোষ। তিনি “গদ্দার” শুভেন্দুকে নন্দীগ্রাম থেকে উৎখাতের ডাক দেন। শুভেন্দুর মুখোশ খুলে দিয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, “নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে বিক্রি করে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা নিতে চাইছে শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু আজ নন্দীগ্রামের শহিদদের জেহাদি, লুঙ্গিবাহিনি বলে জাত-ধর্ম তুলে অপমান করছে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় শুভেন্দু ও তার পরিবারের গায়ে একটা আঁচড় পর্যন্ত পড়েনি। অথচ যে শহিদরা গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন, প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের জেহাদি বলছে। তাই শুভেন্দু অধিকারীর কোনও অধিকার নেই নন্দীগ্রামে পবিত্র শহিদ বেদি স্পর্শ করার।”

এরপর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে কুনাল বলেন, “নন্দীগ্রাম গোটা দেশকে জমি আন্দোলন, জমিরক্ষা করতে শিখিয়েছে। সেই আন্দোলন ছিল নন্দীগ্রামের মানুষের নিজস্ব আন্দোলন। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামের কৃষকদের আন্দোলনের সঠিক দিশা দিয়েছিলেন। নন্দীগ্রামে শহিদের মা ফিরোজা বিবিকে সম্মান দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বিধায়ক বানিয়েছিলেন। আর শুভেন্দু সেই মায়ের সন্তানকে জেহাদি বলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজনকে নন্দীগ্রাম দেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা থেকে শুরু করে দলের সমস্ত ক্ষমতা তাকে দিয়েছিলেন। আর বিধানসভা ভোটের আগে সে মায়ের সঙ্গে গদ্দারি করেছে। হঠাৎ খোলকত্তাল নিয়ে সনাতনী হিন্দু সেজেছে। সিবিআই, ইডি থেকে বাঁচতে মায়ের পিঠে ছুরি মেরে বিজেপির জুতো পালিশ করছে। সেই কাপুরুষ, গদ্দার, বেইমান, মীরজাফর, রাজনৈতিক বেজন্মা শুভেন্দু অধিকারীকে নন্দীগ্রাম থেকে উৎখাত করুন। কৃষক আন্দোলনের প্রতীক নন্দীগ্রামের পবিত্র মাটি যেন কোনও গদ্দারের ছায়ায় কলঙ্কিত না হয়।”

শুভেন্দু অধিকারী একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কারচুপি করে জিতেছে দাবি করে নন্দীগ্রামের মাটি থেকেই এদিন সেই প্রসঙ্গ ফের উস্কে দিলেন কুনাল। তিনি বলেন, শুভেন্দুর সঙ্গে সেই সময় যাঁরা বিজেপি করতেন, সেই জয়প্রকাশ মজুমদার, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তৃণমূলে এসেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ভোটে হারের বিষয়টি শুভেন্দু নিজে মুখে তাঁদের সকলের কাছে স্বীকার করেছিল। তারপর কায়দা করে, কারচুপি করে জিতেছে। নন্দীগ্রামের মানুষ তাকে ক্ষমা করবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা, ভরসা রাখার আবেদন জানিয়ে আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে বিজেপি ধুয়ে মুছে সাফ করার ডাক দেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক।

সবশেষে তাঁর ক্ষুরধার বক্তৃতার মধ্যে সূর্যদেবকে সাক্ষী রেখে কুণাল ঘোষ বলেন, “শুভেন্দু একা হিন্দু নয়, আমরাও হিন্দু পরিবারের সন্তান। সূর্যদেবকে সাক্ষী রেখে শপথ নিয়ে বলছি, আগামিদিনে নন্দীগ্রামে বিজেপি বলে কিছু থাকবে না। তাই শুভেন্দুও থাকবে না। ডাইনোসরকে যেমন ছবিতে দেখা যায়, শুভেন্দুকেও শুধু ছবিতে দেখা যাবে।”

আরও পড়ুন:Russia Ukraine War:বন্ধ হোক যুদ্ধ, গির্জায় প্রার্থনা ইউক্রেনবাসীর

 

 

Previous articleJasprit Bumrah: পন্থের মারমুখী ব‍্যাটিং-এর প্রশংসায় ঋষভ পন্থ
Next articlePakistan-imran khan : বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধি , পাকিস্তানে কোণঠাসা ইমরান, বিপক্ষে সেনাও