রণক্ষেত্র বিধানসভা: শুভেন্দুর নেতৃত্বে বেলাগাম হামলা বিজেপির, নাক ফাটল তৃণমূল বিধায়কের

“ওরা বিধানসভায়(Assembly) যা করছেন, সংসদে আমরাও তা করতে পারি। কিন্তু অশোভন ও অযৌক্তিক কাজ আমরা করি না। যেভাবে প্রতিবাদ জানানো উচিৎ সেভাবেই জানাই।” রাজ্য বিধানসভায় অধিবেশনের শুরু থেকে প্রতিবাদের নামে বিজেপির(BJP) ন্যক্কারজনক কাণ্ডকারখানা প্রসঙ্গে রবিবার এমনটাই জানিয়েছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সেই ন্যক্কারজনক ঘটনা চরম পর্যায়ে নিয়ে গেল বিজেপি। রামপুরহাটের ঘটনার প্রেক্ষিতে শুভেন্দু অধিকারির(Shuvendu Adhikari) নেতৃত্বে তৃণমূল বিধায়কদের উপর রীতিমত হামলা চালাল বিজেপি বিধায়করা। ঘটনার জেরে নাক ফেটেছে এক তৃণমূল(TMC) বিধায়কের। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

সোমবার অধিবেশনের শুরু থেকেই বগটুই কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর(Chief Minister) বিবৃতি দাবি করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু বিজেপি। এই সময় তৃণমূল বিধায়ক শ্যামল মন্ডল সহ বেশ কয়েকজন ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা এর বিরোধিতায় সরব হন। সবমিলিয়ে আজকের অধিবেশনের শুরুতেই স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহাত হয়। অধ্যক্ষ সকলকে শান্ত হতে বলেন। কেউই কিন্তু তাঁর কথায় কর্ণপাত করেনি। বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন কেন মুখ্যমন্ত্রী বাইরে বগটুই কাণ্ড নিয়ে বিবৃতি দিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হইচই শুরু করে বিজেপি। বিধানসভায় ওয়েলে নেমে তারা স্লোগান দিতে শুরু করেন। বিধানসভার সচিবের টেবিলের কাগজপত্রও কেড়ে নিতে গিয়ে বিধানসভার নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গেও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে বিজেপি বিধায়কদের একাংশ। বিজেপি বিধায়করা প্ল্যাকার্ড হাতে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে একটি নিরাপত্তারক্ষীদের একটি বেষ্টনী তৈরি করা হয়। এই বেষ্টনীর অগ্রভাগে ছিলেন মহিলারা। এরপরই দেখা যায়, বিজেপির মহিলা বিধায়করা ওই সমস্ত মহিলা নিরাপত্তারক্ষীদের বেষ্টনী ভাঙতে তৎপর হন। তাতেই শুরু হয় কার্যত ধস্তাধস্তি। এই সময় হঠাৎই দেখা যায় বিজেপি বিধায়করা তৃণমূল বিধায়কদের উপর রীতিমত হামলা চালাচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিধানসভায় ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে। সেসময় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিষয়টি থামানোর চেষ্টা করেন। তখনই দুপক্ষের বিধায়কদের মধ্যে রীতিমতো মারামারি শুরু হয়ে যায়।

আরও পড়ুন:Assembly: বিধানসভায় বিজেপির ‘নির্লজ্জ’ দাপাদাপি, নাক ফাটল তৃণমূল বিধায়কের, সাসপেন্ড শুভেন্দু-সহ ৫ বিজেপি বিধায়ক

বিজেপি বিধায়করা তৃণমূল বিধায়কদের লক্ষ্য করে হাতাহাতি, চড়, কিল, ঘুষি চলাতে থাকে। ধস্তাধস্তির মাঝে পড়েন রাজ্যের মন্ত্রী তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এমনকি মহিলা নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গেও ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয় বিজেপি বিধায়কদের। বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা এরকম আচরণ করবেন না। আপনারা মহিলাদেরকে ধাক্কাধাক্কি করছেন! এটা উচিত করছেন না। আপনারা মহিলা সিকিউরিটিকে ধাক্কাধাক্কি করছেন। আপনারা সরে যান। আমাদের এখানে যে সব সমস্ত সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে সেগুলির হিসেব রাখা হবে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপও নেওয়া হবে।” শাসক এবং বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতিতে বেশ কয়েকজন আহত হন। চুঁচুড়ার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মজুমদার আহত হওয়ায় তাঁকে এসএসকেএম-এ নিয়ে যাওয়া হয়। তার অভিযোগ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও বিজেপি মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা, শঙ্কর ঘোষ, দীপক বর্মণ, নরহরি মাহাতোকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিধানসভার চলতি অধিবেশন স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত এই সাসপেনশন বলবৎ থাকবে। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অধ্যক্ষ বলেন, “যেভাবে ওরা(বিজেপি বিধায়করা) মারমুখি হয়ে উঠেছিল তা নিন্দনীয়। মহিলাদের উপর হামলা চালিয়েছে ওরা। ঘটনায় ১৬-১৭ জন বিধায়ক আহত হয়েছেন সাসকদলের। তবে বিরোধী দল থেকে কেউ আমার কাছে জানায়নি ওরা কজন আহত হয়েছে।” অন্যদিকে এই ঘটনায় ফিরহাদ হাকিমকে ফোন করে গোটা ঘটনার বিস্তারিত খোঁজ নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অধ্যক্ষর কাছে গোটা ঘটনায় অভিযোগ জানানোর নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি, এই ঘটনায় শুভেন্দু অধিকারির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হবে বলে জানা যাচ্ছে তৃণমূল সূত্রে।

Previous articleMamata Banerjee: অন্য মমতা
Next articleরুটের আর কিছু দেওয়ার নেই, বলছেন প্রাক্তনরা