বাংলায় ঘৃণা-কুৎসা-মিথ্যাচারের স্থান নেই, এবারও ভাঙা হৃদয়ে ফিরতে হবে! শাহকে জবাব তৃণমূলের

বাংলায় দলের লাগাতার বিপর্যয় ও জনমানস থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও কিন্তু এতটুকু বদলাননি অমিত শাহ। সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা ও মিথ্যাচার করছেন

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট প্রচারে কার্যত ডেইলি প্যাসেঞ্জার হয়ে দিনের পর দিন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কুৎসা ও মিথ্যাচার করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু ফলাফল বেরোতেই দেখা যায় ভোকাট্টা বিজেপি। তারপর থেকে আর বাংলামুখো হননি অমিত শাহ। মাঝে কেটে গিয়েছে পাক্কা একবছর। গঙ্গা থেকে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। স্থানীয় পুর ও উপনির্বাচনে রাজ্যজুড়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে শাহের দল বিজেপি। দলীয়স্তরে সংগঠন ভেঙে চুরমার। বঙ্গ বিজেপিতে চলছে মুষল পর্ব। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে দু’দিনের বঙ্গ সফরে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

বাংলায় দলের লাগাতার বিপর্যয় ও জনমানস থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও কিন্তু এতটুকু বদলাননি অমিত শাহ। সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা ও মিথ্যাচার করছেন। তবে বসে নেই তৃণমূল। বাংলায় ঘৃণা-কুৎসা-মিথ্যাচারের স্থান নেই, এবারও ভাঙা হৃদয়ে ফিরতে হবে! এবার শাহকে টুইটে জবাব তৃণমূলের।

এদিন তৃণমূলের তরফে দুটি টুইট করে অমিত শাহকে মোক্ষম জবাব দেওয়া হয়েছে। জোড়া টুইটে লেখা হয়েছে,
“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহেব বাংলায় পা রাখার আগে হোমওয়ার্ক করে আসতে ভুলে গেছেন! সীমান্ত সমস্যার জন্য কে দায়ী, মিঃ অমিত শাহ? বাংলায় কে মিথ্যাচার করছে?”

অন্য একটি টুইটে শাহকে খোঁচা দিয়ে লেখা হয়েছে, “তিনি এসেছিলেন। মিথ্যা বলেছিল। তিনি আবার মিথ্যাচার করছেন। তিনি ভুলে গিয়েছেন, বাংলায় ঘৃণা-কুৎসা-মিথ্যাচারের স্থান নেই। এবারও ভাঙা হৃদয়ে ফিরতে হবে! শাহকে জবাব তৃণমূলের। তিনি আসতে থাকুন, মিথ্যাচার করতে থাকুন। এবং বাংলার মানুষ আপনার বিভেদমূলক রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করতে থাকবে।”

প্রসঙ্গত, দুদিনের সফরে এসে গতকাল, বৃহস্পতিবার প্রথমদিন একাধিক সরকারি কর্মসূচি এবং বিএসএফের অনুষ্ঠানে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়ে বিকেলে শিলিগুড়িতে সভা করেন অমিত শাহ। সেই সভায় যেমন CAA নিয়ে ফের নতুন “জুমলা” প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, একইভাবে কুৎসার রাজনীতি করেছেন।

বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির সভা থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল, “সিএএ লাগু হবেই, কেউ আটকাতে পারবে না। CAA নিয়ে তৃণমূল গুজব রটাচ্ছে। আমি আজ বলে যাচ্ছি করোনার ঢেউ শেষ হলেই, CAA লাগু হবে। মমতাদিদি আপনি তো চান অনুপ্রবেশ চলতে থাকুক। কিন্তু কান খুলে শুনে রাখুন শরণার্থীদের নাগরিকত্ব আমরা দেবই। আপনি কিচ্ছু করতে পারবেন না।”

যদিও পাল্টা দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, “ওরা আমাকে কেন প্রশ্ন করছে? নিজেদের দলের লোকদের প্রশ্ন করুক, ওদের দলের লোকেরাই তো রোজ রোজ CAA নিয়ে সরব হচ্ছেন। এটা ওদের দলের অভ্যন্তরীন ব্যাপার।” এরপরই মুখ্যমন্ত্রী CAA ইস্যুতে অমিত শাহকে জবাব দিয়ে বলেছিলেন, “ওরা দেশের নাগরিক। নতুন করে নাগরিকত্বের দেওয়ার কী আছে। ওদের ভোটে জিতেই তো মোদি প্রধানমন্ত্রী, অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন। আর দোষ চাপাচ্ছেন অন্য রাজনৈতিক দলের উপর। আর আমি বলে দিচ্ছি, ২০২৪-এ বিজেপি আর ফিরবে না।”

তবে অমিত শাহ শুধুমাত্র CAA নিয়ে জুমলাবাজি করেই থেমে থাকেননি। একুশের বিধানসভা ভোটের সময় যেরকম কুৎসা করে গিয়েছিলেন, শিলিগুড়ির সভায় সেই একই পথে হেঁটছেন। বিধানসভা ভোটে হারের পর এই প্রথম রাজ্যে পা রাখেন তিনি। কুৎসা, অপপ্রচার, ঘৃণার রাজনীতি করে বাংলার মাটিতে ফসল ফলাতে পারেননি। তাই ফলাফলের পর থেকে আর বাংলায় মুখ দেখাতে পারেননি। কিন্তু অমিত শাহ আছেন অমিত শাহতেই! এতটুকু পরিবর্তন হয়নি তাঁর!

শিলিগুড়ির সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ফের কুৎসার পথ অবলম্বন করেন অমিত শাহ। বগটুই-হাঁসখালি থেকে কাটমানি, তোলাবাজি, গুণ্ডামি কিংবা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, জিডিপি নিয়ে মিথ্যাচার করেন এমনকি, দার্জিলিং যখন শান্ত তখনই GTA নির্বাচন ইস্যুতে পাহাড়ের মানুষকে ভুল বার্তা দিতে কোনও কসুর বাদ রাখেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিন জোড়া টুইটে তারই জবাব দিল তৃণমূল।

আরও পড়ুন:মেলা থেকে ফেরার পথে খুন টিটাগড়ের যুবক, তদন্তে পুলিশ

 

Previous articleSRH: হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে দুরন্ত ইনিংস খেলে কী বললেন ওয়ার্নার?
Next articleদলকে চাঙ্গা করতে এসেও ব্যর্থ!শাহের সফরের মাঝেই পদ্মে ভাঙন অব্যাহত