যুক্তির জটিল আবর্তে শুক্রবার কুণালের “আত্মহত্যা”র চেষ্টা মামলার রায়দান, তুঙ্গে আগ্রহ

প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দিদশায় আত্মহত্যার চেষ্টা করে কি অন্যায় করেছিলেন কুণাল ঘোষ? তিনি যে আত্মহত্যা করতে পারেন, এমন বিষয়টি সেই সময় কুণালও জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু তিনি কি আদৌ আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন?

বন্দি থাকাকালীন জেলের মধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ VS রাজ্য সরকার মামলায় রায়দান হতে চলেছে আগামিকাল, শুক্রবার। আইনের অনেক যুক্তির জটিলতার মধ্যে বিধাননগর MP-MLA কোর্টে বিচারক মনোজ্যাতি ভট্টাচার্য এই মামলার রায় দেবেন বেলা ১১টার পর। আর সেই রায়দানের পরই জানা যাবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর। যা আগামিদিনে গোটা দেশের আইন ব্যবস্থার কাছে একটি দৃষ্টান্ত (Case Study) হয়ে থাকতে পারে।

কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দিদশায় আত্মহত্যার চেষ্টা করে কি অন্যায় করেছিলেন কুণাল ঘোষ? তিনি যে আত্মহত্যা করতে পারেন, এমন বিষয়টি সেই সময় কুণালও জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু তিনি কি আদৌ আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন? ঘটনার দিন যেহেতু কুণাল নিজে খুব হতাশ ও অবসাদগ্রস্ত ছিলেন, তাই তিনি নিজেই মনে করতে পারেননি আসলে কী ঘটেছিল, কুণাল ঘোষ আদালতের কাছে নিজেই এমন বয়ান দিয়েছেন।

আবার জেল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মীরা দাবি করেছেন, ঘটনার দিন অনেক তল্লাশি করেও কুণালের কাছে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ থাকার কোনও প্রমান পাওয়া যায়নি। জেলে একসঙ্গে অনেক ঘুমের ওষুধ পাওয়া কার্যত অসম্ভব। কুণালের উপরে নজর রাখার দায়িত্বে থাকা অফিসাররা আদালতে জানিয়েছেন যে, রাতে একটি মাত্র ঘুমের ওষুধ খেতেন কুণাল। আর সেই ওষুধও কুণালের সঙ্গে থাকত না। জেলকর্মীদের সামনেই তাঁকে নির্দিষ্ট একটি সময়ে ওষুধ দেওয়া হত। তাই একসঙ্গে অনেক ওষুধ পাওয়া এবং খাওয়ার তত্ত্ব ভিত্তিহীন।

তবে জটিলতার এখানেই শেষ নয়। আত্মহত্যার অভিযোগ ওঠার সময় কুণালের শারীরিক পরীক্ষার পরে
এসএসকেএম-এর চিকিৎসক ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানিয়ে দেন, তাঁর পেটের ভিতরে প্রচুর ঘুমের ওষুধ পাওয়া গিয়েছে। সেই রিপোর্ট আদালতে পেশ করা হয়েছে রাজ্যের তরফে। ফলে এই মামলায় রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা জোর গলায় আদালতে দাবি করেছেন, কুণালের বিরুদ্ধ পুলিশের করা আত্মহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত।

অন্যদিকে, কুণাল ঘোষের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী আদালতকে জানান, জেলে কুণাল নিজে ওষুধ খেয়েছিলেন কেউ দেখেনি। পেটে অনেক ঘুমের ওষুধের অস্তিত্ব পাওয়া মানেই এটা প্রমাণ হয় না, তিনি নিজে হাতে ওষুধগুলি খেয়েছিলেন। তাই আত্মহত্যার অভিযোগ কখনই প্রমাণিত নয়। দুই পক্ষের সওয়াল-জবাব ও সমস্ত সাক্ষীদের সাক্ষদানের পর রাজ্য সরকার ও কুণালের পরস্পর বিরোধী দাবি নিয়ে বিস্তর আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে।

কুণালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী আবার আদালতে দাবি করেন, কেউ নিজেকে হত্যার চেষ্টা করে থাকলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। আত্মহত্যার চেষ্টায় শাস্তি দেওয়া অমানবিক।

কিন্তু কেন এমন দাবি করেছেন কুণাল ঘোষের আইনজীবী?
আত্মহত্যা মামলায় কুণালের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায়। এই মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড অথবা আর্থিক জরিমানা হতে পারে। তবে এই ধারা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। লোকসভা এটির অবলুপ্তির পক্ষে রায় দিলেও এখনও আইন জারি।লোকসভাতেও এমন প্রস্তাব পাশ হয়েছে যে, আত্মহত্যার চেষ্টাকে অপরাধ বলা যাবে না। কিন্তু তা এখনও পাস হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর জেলের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন কুণাল। সেই সময় অভিযোগ দায়ের হয় যে, কুণাল একসঙ্গে অনেকগুলি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন প্রেসিডেন্সি জেলের ভিতরে। তৎক্ষণাৎ কুণালকে ভর্তি করানো হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। তদন্তকারীরা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন কুণাল। যা আইনত অপরাধ। কিন্তু পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমানে কুণাল যে নিজে থেকে ঘুমের ওষুধ নিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন, সেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তর জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এবার সেই যুক্তির জটিলতা আবর্তে। দাঁড়িয়ে শুক্রবার কুণালের “আত্মহত্যা”র চেষ্টা মামলার রায়দান করবেন বিধাননগর MP-MLA কোর্টের বিচারক মনোজ্যাতি ভট্টাচার্য। আরও একটি বিষয়ে এই মামলার রায়দান আগ্রহের কেন্দ্রে চলে এসেছে। রাজ্য সরকারের বনাম কুণাল ঘোষের এই মামলার রায়দান সেই প্রেক্ষাপটে হচ্ছে যখন রাজ্যের শাসক দলের রাজ্য কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল। শুধু তাই নয়, কুণালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী শাসক দলেরই কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর।

আরও পড়ুন:অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংঘে

Previous articleYuzvendra Chahal: দিল্লির বিরুদ্ধে ম‍্যাচ হারলেও, রেকর্ড গড়লেন চ‍্যাহাল
Next articleকাশীপুরের মৃত বিজেপি যুবনেতার মা ও দাদার বয়ান রেকর্ড করা হল