শান্ত পাহাড়কে অশান্ত করার চক্রান্ত গুরুংদের, GTA নির্বাচনের বিরোধিতায় এবার অনশনে মোর্চা

এবার GTA নির্বাচনের বিরোধিতা করে অনশনে বসতে চলেছে গুরুংয়ের দল। আসলে GTA নির্বাচন হলে নিশ্চিত পরাজয় বুঝেই এমন পদক্ষেপ মোর্চার

রাজনৈতিক সমীকরণে পাহাড়ে কার্যত কোণঠাসা বিমল গুরুং ও তাঁর দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। শ্যাম-কূল শিব হারিয়ে যথেষ্ট চাপে গুরুংবাহিনী। সেই জায়গা থেকে পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেতে ফের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিমল গুরুং। এবার GTA নির্বাচনের বিরোধিতা করে অনশনে বসতে চলেছে গুরুংয়ের দল। আসলে GTA নির্বাচন হলে নিশ্চিত পরাজয় বুঝেই এমন পদক্ষেপ মোর্চার।

আরও পড়ুন: আত্মহত্যা নাকি খুন? অভিনেত্রী পল্লবীর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কী বলছে?

এখনই GTA নির্বাচন নয়, এই মর্মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গত, শনিবার একটি চিঠি লিখেছিলেন মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং। নির্বাচন হলে আমরণ অনশনের হুমকিও দিয়েছিলেন। এবার অনশন শুরুর ঘোষণাও করে দিলেন গুরুং। আজ, সোমবার থেকেই অনশন শুরু করছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। দার্জিলিংয়ের চৌরাস্তায় যুব মোর্চার সদস্যরা রিলে অনশন করবেন। দু’দিন এই অনশন চলার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শান্ত পাহাড়কে ফের অশান্ত করার চক্রান্ত শুরু করছে মোর্চা।


অনশন প্রসঙ্গে বিমল গুরুং জানান, “জিটিএ নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমাদের যুব শাখা সোমবার থেকেই অনশন শুরু করছে। দুদিন তাদের এই রিলে অনশন চলবে। এর মধ্যে সরকার আলোচনায় ডাকলে ভাল, নইলে পরবর্তীতে আমরাও অনশনে বসে পড়ব।” যদিও মোর্চার এমন কর্মসূচিকে আমল দিতে নারাজ পাহাড়ের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি।

প্রসঙ্গত, অশান্তিকে দূরে ঠেলে পাহাড়ে ফিরেছে কাজের পরিবেশ। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বহুদলীয় গণতন্ত্র। এরই মাঝে গত মার্চের শেষে পাহাড় সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে সর্বদল বৈঠক করেন তিনি। যেখানে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) নির্বাচন। কারণ, জিটিএ নির্বাচন না হওয়ায় পাহাড়ের উন্নয়নের কাজে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই পাহাড়বাসীর স্বার্থে দ্রুত জিটিএ নির্বাচন করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সর্বদল বৈঠকে একমাত্র বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ছাড়া সকলেই জিটিএ নির্বাচনের পক্ষে সায় দিয়েছে। সম্প্রতি, নবান্ন থেকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে জিটিএ নির্বাচনের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, আগামী জুনে এই নির্বাচন করতে চায় কমিশন। তার জন্য তৎপরতাও শুরু হয়ে গিয়েছে।

তবে এখনই জিটিএ নির্বাচন না করানোর দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে গত, শনিবার চিঠি দিয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুং। বরং, পাহাড়ে আগে সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান হোক। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে গুরুং লিখেছেন, ১১টি জনজাতিকে তপশিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়া সহ পাহাড় সমস্যার সমাধানের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ওপরেই ভরসা রেখেছে মোর্চা। কিন্তু এখনও জিটিএ ভোট করা ঠিক হবে না। পাহাড় সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান করার পরই এখানে ভোট করা হোক।

গুরুং আরও লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক পাহাড় সফরেও আগে পিপিএস তারপরই যে কোনও ভোটের দাবি দলের তরফে জানানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব মতো পাহাড় সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের খসড়া প্রস্তাবও ইতিমধ্যেই দলের তরফে রাজ্যের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সেগুলির সঠিক মূল্যায়ণ করে দ্রুত স্থায়ী সমাধানের রাস্তা খোঁজার দাবি জানিয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি।
মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে গুরুং বলেছেন, ভোট যদি করতেই হয়, তাহলে জিটিএ নয়, আগে পাহাড়ে ২০০১ সাল থেকে বন্ধ থাকা পঞ্চায়েত ভোট করাক রাজ্য।


প্রসঙ্গত, আগেই জোটসঙ্গী বিজেপির হাত ছেড়েছে মোর্চা। বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছিল গুরুংয়ের দলের তরফে। কিন্তু বিধানসভা ভোট থেকে শুরু করে কয়েক মাস আগে দার্জিলিং পুরসভা ভোটেও মুখ থুবড়ে পড়েছে গুরুংয়ের দল। এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন হলে মোর্চার হার কার্যত নিশ্চিত। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে জিটিএ নির্বাচন আটকাতে মরিয়া বিমল গুরুং।

Previous articleবর্ষার আগে প্লাস্টিক ব্যাগ বর্জনের অঙ্গীকার কর্মসূচি অনন্যার
Next articleযোগীর রাজ্যে এবার মমতার ‘বঙ্গভবন’