কেকে-র মৃত্যু নিয়ে নোংরা রাজনীতি বিরোধীদের, পাল্টা জবাব তৃণমূলের

জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কেকে-র আকস্মিক মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি শুরু বিরোধীদের। যেহেতু রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন TMCP পরিচালিত গুরুদাস কলেজের ছাত্র সংসদ এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে, তাই কেকে-র মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে মাঠে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কেকে-র মৃত্যুর জন্য সরাসরি শাসক দল ও তাদের ইউনিয়নের দিকে আঙুল তুলেছে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি। যদিও পাল্টা দিতে ছাড়েনি তৃণমূলও।

একনজরে বিরোধীদের অভিযোগ–

ময়ূখ বিশ্বাস (SFI সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক):

মঙ্গলবার রাতে নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান এবং সেখানে কেকে’র করুণ পরিণতির জন্য, গুরুদাস কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন দায়ী। টিকিটের কালোবাজারি হয়েছে, এসি বন্ধ করে অডিটোরিয়ামে ফায়ার এক্সটিংগুইজার স্প্রে করা হয়েছে। এগুলো অপরাধমূলক কার্যকলাপ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢাকা দেওয়ার কৌশল বারাবার কাজ করবে না।

তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (BJP নেতা)

২২০০ জন ধরতে পারে এমন একটা হলে ৭ হাজার লোক কীভাবে এল? হঠাৎ কী হল যে, ফায়ার এক্সটিংগুইজার স্প্রে করতে হল। বদ্ধ হল, অ্যাম্বুলেন্স ছিল না, তার মধ্যে হলে কার্বন-ডাই অক্সাইড স্প্রে করা হয়েছিল। কেকে-র থেকে অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। আমরা হারিয়ে ফেললাম। আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। ভিড় নিয়ন্ত্রণের কোনও চেষ্টা করা হয়নি।

অধীর চৌধুরী (প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি)

কেকে-র মৃত্যুতে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কেকে-র মাথায় চোট ছিল। সেই চোটই অসুস্থ হওয়ার কারণ। কেকে-র গায়ক কেকে-র দুঃখজনক মৃত্যুর নেপথ্যে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত দাবি করছি। উদ্যোগতাদের গাফিলতি ছিল। তারা দায় এড়িয়ে যেতে ওয়ারে না।

একনজরে শাসক দলের জবাব–

কুণাল ঘোষ (TMC, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক)

পেশাদার শিল্পী পারফর্ম করে বেরিয়ে যাওয়ার পর অসুস্থ হয়েছেন। এটা নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দল কুৎসা করছে। এটা ওদের রাজনৈতিক দেউলিয়া হওয়ার উদাহরণ। মুখ্যমন্ত্রী পূর্ণ সম্মান দিয়ে শেষ বিদায়ের ব্যবস্থা করেছেন। প্রত্যেকটি মৃত্যুই দুঃখজনক। আমরা নব প্রজন্মের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারালাম। কেকে সকলের খুব প্রিয় একজন গায়ক ছিলেন। কেকে-র অকস্মাৎ মৃত্যু আমাদের কাছে বেদনাদায়ক, ওনার আত্মীয় পরিজন এবং পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি। ঘটনা সূত্রে জানা গিয়েছে তিনি আগে থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। হসপিটালে পৌঁছানোর আগেই ওনার মৃত্যু ঘটে বলে জানতে পারা যাচ্ছে। সুতরাং ঘটনার সত্যতা যাচাই করলে পুরোটা জানা যাবে।

তৃনাঙ্কুর ভট্টাচার্য (TMCP রাজ্য সভাপতি)

কেকে-র শেষ পারফরম্যান্স সামনে থেকে দেখেছি। ভাবতেই পারছি না উনি নেই। খুব বড় গায়ক, তার থেকেও বড় ওনার হৃদয়। অত বড় মাপের সেলিব্রিটি হয়েও ডাউন টু আর্থ। সকলকে কাছে টানার একটি অদ্ভুত জাদু জানতেন তিনি। নজরুল মঞ্চেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নিজের পারফরম্যান্স নিজেই উপভোগ করছিলেন। তাঁর মৃত্যু খুব বেদনাদায়ক। অনেকে কিংবদন্তির মৃত্যু নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছেন। যাদের যেমন রুচি। যাদের যেমন সংস্কৃতি। আমি সেটা নিয়ে বেশিকিছু বলতে চাই না। আমি শুধু বলতে চাই, এই ক্ষতি অপূরণীয়। এমন বিপর্যয়ে ওনার পরিবারকে আন্তরিক সমবেদনা জানাই।

দেবাংশু ভট্টাচার্যের (TMC, যুবনেতা)

অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আমিও সামনে থেকে কেকে-র অনুষ্ঠান দেখছিলাম। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। রাতে খবর পেলাম উনি আর নেই। কিছুক্ষণ-এর জন্য দুঃস্বপ্ন মনে হয়েছিল। তবে তাঁর মৃত্যু নিয়ে যেভাবে রাজনীতি হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া আরও কঠিন। কলেজের এই অনুষ্ঠানগুলো মূলত একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা আয়োজন করে। তারাই শিল্পীদের আনে। ছাত্র সাংসদ কেবলমাত্র নির্দিষ্ট আসন সংখ্যার ভিত্তিতে টিকিট ছাপিয়ে বিলি করেছিল। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়টা ছাত্র সাংসদের ঘারে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা কোথাও গিয়ে ভুল হচ্ছে বলে আমার মনে হয়।

বাবুল সুপ্রিয় (TMC বিধায়ক/ সঙ্গীত শিল্পী)

কেকে-র মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমরাও এই গরম, এই আলোতেই পারফর্ম করি। একজন আর্টিস্ট তাঁর অ্যাড্রিনালিন রাশ থেকে পারফর্ম করে যায় তখন তাঁর বুকে ব্যথা করছে কিনা, শরীর খারাপ লাগছে কিনা সে পাত্তা দেয় না। শিল্পীরাই এগুলো এড়িয়ে যাই। এক ঘণ্টা দেড় ঘণ্টা পারফর্ম করতে করতে, গ্রামে গঞ্জে কত জায়গায় এসি থাকে না, হাঁটু অবধি জিনস ভিজে যায়। এরকম যে থাকা উচিত তা আমি বলছি না। কিন্তু থাকে। তবে এটা সকলের কাছে শিক্ষণীয় হয়ে রইল। আমরা শুরু করেছিলাম ২৫ বছর বয়সে আর এখন আমাদের ৫০-এর বেশি বয়স। এখনও আমরা সেই একইরকম দেড় ঘণ্টা গাই। এই নতুন লাইট, বিশৃঙ্খলা, ভিড়, এসি না থাকা শিল্পীদের সতর্ক হতে হবে। এটা শিল্পীদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। এটা দুঃখের যে কেকে-র মতো একজন বিশালমাপের শিল্পীর মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা শিল্পীরা একটা শিক্ষা পেলাম।

আরও পড়ুন- Russia Ukraine War: রাশিয়ার আগ্রাসনে ২৪৩ জন ইউক্রেনীয় শিশুর মৃত্যু, জখম ৪৪৬

 

 

 

Previous articleRussia Ukraine War: রাশিয়ার আগ্রাসনে ২৪৩ জন ইউক্রেনীয় শিশুর মৃত্যু, জখম ৪৪৬
Next article২০২৩-এর মার্চেই মহিলাদের আইপিএল?