শহরের বুকে কলমের হাসপাতাল! যন্ত্রণা নয়, তবে ‘পেন’ ‘এর চিকিৎসা হয় 

"এখন কালি-কলম দিয়ে লেখার চল উঠে গিয়েছে, বেশির ভাগই কলম এখন এক বার ব্যবহার করেই ফেলে দেয়। এখন কম্পিউটারের যুগ। কিছু মানুষ এখনও আছেন, যাঁরা কালি-কলমে লেখেন। তাঁরাই আসেন বিকল কলম সারাতে", বলছেন মহম্মদ ইমতিয়াজ।

হাসপাতাল(Hospital) শব্দটা বললেই সবার আগে শারীরিক অসুস্থতার ( physical sickness) কথাই মনে আসে। কিন্তু শুধুমাত্র প্রাণীরাই যে অসুস্থ হবেন তার কী মানে, জড়বস্তুও তো অসুস্থ হতে পারে। শুনতে একটু অদ্ভুত লাগলেও ব্যাপারটা কিন্তু বেশ মজাদার। শহর কলকাতার বুকেই পেনের হাসপাতাল( Hospital for Pen)। যেখানে যন্ত্রণা কমে না ঠিকই, তবে সুস্থ হয়ে ‘পেন’ (pen) আবার আগের মতো কাজ করতে শুরু করে।

 

ধর্মতলা মেট্রো ষ্টেশনের (Esplanade metro station)চার নম্বর গেট দিয়ে বেড়িয়ে ফুটপাথের বাঁ-দিকেই ঝোলানো ‘পেন হসপিটাল’ ( Pen Hospital) বোর্ড।ছোট্ট দোকানঘরে বসে রয়েছে ডাক্তার মহম্মদ ইমতিয়াজ (Md. Imtiyaz)। তিন প্রজন্মের ব্যবসায়ী মহম্মদ ইমতিয়াজের পরিবার এখনও কলমের হাসপাতাল উপর নির্ভর করেই সংসার চালান। পেন বা কলম বেশ শৌখিন একটা জিনিস তবে প্রয়োজনীয় বটে। একটা সময় পর্যন্ত এই পেনের নেশা জাঁকিয়ে বসতো মানুষের মনে। আসলে কলমের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আবেগ আর অনুভূতি। কলমের কালি দিয়েই সেগুলো জীবন্ত চরিত্র হয়ে ফুটে ওঠে লেখার মধ্যে। সেই সাধের কলমটি যদি খারাপ হয়ে যায় তাহলে তো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই দরকার। সেইমতো কলকাতায় (Kolkata) এদিক-ওদিক ছিল কলম বা পেন- এর চিকিৎসার হাসপাতাল, যেখানে সারানো হত খারাপ পেন। কালের নিয়মে পেন হাসপাতালগুলো হারিয়ে গেলেও এখনও একটি রয়ে গেছে কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে। ফিকে হয়ে যাওয়া সেই হাসপাতালে খদ্দেরের অপেক্ষায় আজও বসে থাকেন ডাক্তারবাবু। মোবাইল, কম্পিউটার, সফটওয়্যার এর যুগে ব্যবহার আজ প্রায় দেখাই যায়না। বা ধরুন যদি একটা পেন কোনও কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে বাজার থেকে আরও একটা পেন সহজ মূল্যে কিনতে পাওয়া যায়। তাই খারাপ পেনটিকে না সারিয়ে, ফেলে দেওয়াই যথাযথ বলে মনে করেন অনেকে।

 

আসলে সমাজের গতি যত বেড়েছে ,ততই অতীত দূরে সরে গেছে। শহরের পেন সংগ্রাহকদের স্মৃতি বলছে, এমন হাসপাতাল প্রত্যেক এলাকাতেই ছিল। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে যার বেশির ভাগ বন্ধ হয়েছে কিংবা মালিকরা বেছে নিয়েছেন অন্য ব্যবসা। “এখন কালি-কলম দিয়ে লেখার চল উঠে গিয়েছে, বেশির ভাগই কলম এখন এক বার ব্যবহার করেই ফেলে দেয়। এখন কম্পিউটারের যুগ। কিছু মানুষ এখনও আছেন, যাঁরা কালি-কলমে লেখেন। তাঁরাই আসেন বিকল কলম সারাতে”, বলছেন মহম্মদ ইমতিয়াজ। ওয়াটারম্যান(Waterman), শেফার্ড, পিয়ার কারদা, উইলসনের (Wilson) মতো রয়্যাল (royal) পেন আজকের দিনে খুব কম মানুষই ব্যবহার করেন। পেন হাসপাতালের সংগ্রহে ২০টাকার পেন থেকে ২০ হাজার টাকার পেনও রয়েছে। কলম সারানোর জন্য ছোট বাক্সের মধ্যে রাখা আছে হরেক মাপের যন্ত্রপাতি। এই দোকান প্রায় ৮০ বছরের পুরোনো। স্মৃতি ভান্ডারে জমা আছে অনেক কিছুই। একটা সময় ছিল যখন পেনের অসুখ সারাতে এই দোকানে ছুটে গেছেন নামজাদা অধ্যাপক, লেখক, সাংবাদিকরা। আজ সেসব ইতিহাস, তবু নিত্যদিনের যাতায়াতে কখনও কখনও এই ইতিহাসই হঠাৎ করে চোখের সামনে এসে দাঁড়ায়। মনে করিয়ে দিয়ে যায় ফেলে আসা দিনের কথা।



Previous articleমালদহের নতুন জেলাশাসকের দায়িত্বে নীতিন সিংহানিয়া
Next articleSourav Ganguly: রুটের প্রশংসায় বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট