দুই ক্লাবে মমতা : মোহনবাগানকে ১০ গোল দিল ইস্টবেঙ্গল

বুধবার বিকেলের ছবি। একমুখ হাসি নিয়ে ঘরে ফিরছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। কয়েক হাজার হবেই। গ্যালারির একটা ধার খুলে দেওয়া হয়েছিল। ওরা সেখানেই বসেছেন। এক ইস্টবেঙ্গল কর্তা বলছিলেন, সমর্থকরাই সব। ওরা ছাড়া আমরা কে!

একটু আগে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। এইমাত্র ভিড় ঠেলে বেরোলেন অভিষেক ডালমিয়া, স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। বেরোতে দেখা গেল ময়দানের নানা ক্লাবের বিভিন্ন মাপের কর্তাকে। মহামেডান স্পোর্টিং-এর প্রতিনিধিকেও তো দেখা গেল। ঝুলন গোস্বামীকেও। পাশে সম্বরণ বন্দোপাধ্যায়। আরও অনেকে। কাছের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে লাল-হলুদ জনতার আবেগ বিস্ফোরণের সাক্ষী থাকলেন সবাই।

গোষ্ঠ পাল সরণীর বাঁদিকে পুলিশ-কাস্টমস মাঠ। তার ওপারে ময়দানের আর এক শতবর্ষ প্রাচীন ক্লাব। যেখানে এমনই এক বিকেলে পা পড়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর। ইস্টবেঙ্গলে যেমন সংগ্রহশালা, তেমনই নতুন তাঁবুর উদ্বোধন করে এসেছেন তিনি। কিন্তু প্রায় রুদ্ধদ্বার অনুষ্ঠানে আমজনতার প্রবেশাধিকার ছিল না। সেটা দেয়নি ক্লাব। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা যারা মোহনবাগান, উৎসবের আবহে তারা ছিলেন অনেক দূরে। মঞ্চ দাপানো কর্তাদের তাদের কথা মনে পড়েনি!

ব্যস্ততা ফেলে দুই প্রধানের অনুষ্ঠানেই থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ডার্বির আগে এই ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল পরিষ্কার দশ গোল দিল মোহনবাগানকে। বলছে ময়দান। ৭৫-এর শিল্ড ফাইনালে ৫-০ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। বুধবার সমরেশ চৌধুরীরা আরও পাঁচ গোল বেশি দেখলেন।সবুজ-মেরুনের অনুষ্ঠানে কর্তাদের ‘আমাকে দেখ’ ছিল। আমি করলাম-আমি গড়লামের চোটে অনুষ্ঠানের আবেগটাই ফুৎকারে হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলে নিতু সরকার কার্যত একাই সব করেও নিজেকে পিছনে রেখে এগিয়ে দিলেন বাকিদের। ফুটবলার-কোচেদেরও। এমনকি দেবব্রত সরকার মঞ্চে পযর্ন্ত উঠতে চাননি। মুখ‍্যমন্ত্রী তাকে জোর করে মঞ্চে তুলে আনেন।

চোখ রাখা যাক কোথায় লাল-হলুদের কাছে মার খেল সবুজ-মেরুন।

 

১, ইস্টবেঙ্গলে মুখ্যমন্ত্রী ক্লাবের পতাকা উত্তোলন করেছেন, মোহনবাগানে তা হয়নি।

২, ইস্টবেঙ্গলে মুখ্যমন্ত্রী মাঠে নেমে বলে শট মেরেছেন, মোহনবাগানে সেরকম কিছু ছিল না।

৩, ইস্টবেঙ্গলে এভি অর্থাৎ অডিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন ছিল। যা দেখে আনন্দে লাফিয়েছেন সমর্থকরা। ময়দানের আর এক ক্লাবে সেসবের নামগন্ধ দেখা যায়নি।

৪, লাল-হলুদের মঞ্চে টিম ইস্টবেঙ্গলকে তুলে ধরা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সামনে মঞ্চে লগ্নিকারী সংস্থার কর্তা, প্রাক্তন ফুটবলারদের দেখা গেল। নিতু সরকার ক্যাপ্টেন থেকেও এগিয়ে দিয়েছিলেন সকলকে।মোহনবাগানে ছিল ওয়ান ম্যান শো! যা খুব চোখে লেগেছে।

৫, ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠান ছিল সংক্ষিপ্ত অথচ প্রানবন্ত। সবুজ-মেরুনের অনুষ্ঠানে প্রাণের ছোঁয়া ছিল না।

৬, ইসবেঙ্গলের অনুষ্ঠানে সমর্থকদের আবেগ সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। তাদের আবেগকে সম্মান জানিয়ে সিনিয়র দলের দুই কোচকে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বল উপহার দেন। মোহনবাগানে এমন দৃশ্য ছিল কষ্টকল্পিত।

৭, ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠানে সিএবি, ময়দানের বিভিন্ন ক্লাব, মহামেডান স্পোর্টিং-এর প্রতিনিধিসহ বহু মানুষকে দেখা গিয়েছে। ব্যাপারটা কার্যত মিলনমেলায় দাড়িয়ে গিয়েছিল। মোহনবাগানের অনুষ্ঠান সীমাবদ্ধ ছিল নিজস্ব গণ্ডির মধ্যেই।

৮, মাঠের ধারে মঞ্চ করে বহু মানুষকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ করে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। এতেও প্রাধান্য পেয়েছেন ক্লাবের সম্পদ সমর্থকরা। মোহনবাগানে অনুষ্ঠান হয় লনে। ছোট জায়গায় পর্যাপ্ত মানুষকে জায়গা দেওয়া যায়নি। ভাবনার অভাব ছিল এতে স্পষ্ট।

৯, ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠানে সংবাদ মাধ্যম গুরুত্ব পেয়েছে। তাদের কভারেজের সুবিধার জন্য সামনে ভাল জায়গা দেওয়া হয়েছিল। মোহনবাগানে মিডিয়ার স্থান ছিল পিছনে।

১০, মুখ্যমন্ত্রী লোকগান পছন্দ করেন বলে এমনই একটি ব্যান্ডকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান হয়েছিল। পছন্দের গানের তালে মুখ্যমন্ত্রীকে মাথা নাড়াতে দেখা যায়। সবুজ মেরুনে এতদূর কেউ ভাবেইনি!

২৮ বছর আগে প্রথমবার ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে পা ফেলার পর থেকে অনেকবার এই তাঁবুতে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার তাঁকে দেখে অনেকের মনে হয়েছে তিনি যেন নিজের ঘরেই ফিরে এলেন। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা খুব সুচারুভাবে মুখ্যমন্ত্রীর ক্যারিশমাকে কাজে লাগিয়ে সুপার হিট করলেন অনুষ্ঠানকে। মোহনবাগান যা পারেনি।

ডার্বি ম্যাচে এভাবেই কেউ জেতে, কেউ হারে। তফাৎ এটাই, ব্যবধানটা বড্ড বড় হয়ে গেল!

আরও পড়ুন:স্বাধীনতা দিবসকে প্রজাতন্ত্র দিবস বললেন বিজেপি সাংসদ

 

Previous articleবাংলায় নাশকতার ছক! গ্রেফতার দুই জঙ্গি
Next articleআজ সোনা রুপোর দাম কত? জেনে নিন এক ঝলকে