চম্বলের ত্রাস আরেক ‘ফুলন’ গিয়েছিলেন বিগ বসের ঘরে! রইল অজানা তথ্য

ফুলনের বয়স যখন ১১ বছর সেই সময়ই একটি দুর্ঘটনা ঘটনা তাঁর জীবন বদলে দিয়েছিল। আর সেই দুর্ঘটনা থেকেই তাঁর পরবর্তী জীবনেরও আভাস পাওয়া যায়।

চম্বলের (Chambal) নাম শুনলেই যে নামটি সবার আগে আসে তিনি দস্যু ফুলন দেবী (Phoolan Devi)। শোনা যায় এক সময় ফুলন দেবীর নাম শুনলেই কেঁপে উঠত গোটা উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh)। তবে শুধু ফুলনই নন, তাঁর পরবর্তী সময়ে চম্বলের বুকে রীতিমতো ত্রাসের জন্ম দেন বছর তেরোর আরেক ছোট্ট মেয়ে। এ যেন ফুলনেরই প্রতিচ্ছবি। ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে শুরু করে স্বভাব, দৃঢ়চেতা মনোভাব সবকিছুতেই ফুলনের সঙ্গে তাঁর অদ্ভুত মিল। ফুলনের দেখানো পথে হেঁটে চম্বলের পরবর্তী মহিলা ডাকাত হিসাবে নাম উঠে আসে সীমা পরিহারের (Seema Parihar)। সাধারণ একজন গরীব পরিবারের মেয়ে সবার ত্রাস হয়ে উঠলেন। ফুলনের বয়স যখন ১১ বছর সেই সময়ই একটি দুর্ঘটনা ঘটনা তাঁর জীবন বদলে দিয়েছিল। আর সেই দুর্ঘটনা থেকেই তাঁর পরবর্তী জীবনেরও আভাস পাওয়া যায়। ১১ বছর বয়সে বিয়ের পরই ফুলনকে তাঁর স্বামীর ধর্ষ*ণের শিকার হতে হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে চলে নির্যাতন। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে কোনও প্রতিকার না পেয়ে নিজের হাতেই অস্ত্র তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ফুলন। ২০ বছর বয়সেই যোগ দেন ডাকাত দলে।

কীভাবে ধীরে ধীরে চম্বলের ত্রাস হয়ে উঠলেন সীমা?

বাবা-মা, ৩ বোন ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে একদিন ঝড়বৃষ্টির রাতে নিজেদের ভাঙাচোরা ঘরে শুয়েছিল বছর চোদ্দর ছোট্ট মেয়েটি। ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকলেন তিন পুরুষ ও এক মহিলা সহ মোট ১০ জন। বছর তেরোর মেয়েটিকে অপহরণ করে নিয়ে যান কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয়ের লোক। তাঁদের গন্তব্য ছিল চম্বলের বীহড় (Beehad)। পরবর্তীকালে সেই ছোট্ট মেয়েটির দাপটে কেঁপে ওঠে চম্বল। উত্তরপ্রদেশের ববাইন গ্রামের মেয়েটিই পরবর্তীকালে ডাকাত দলের সর্দার হয়ে ওঠেন। সীমাকে বন্দি করার পর তাঁকে লাগাতার ধর্ষ*ণ করেন লালারামের ডাকাত দলের সর্দাররা।

এরপর অসহায় সীমা বীহড়ের জঙ্গল থেকে পালানোর চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। সীমা পালানোর চেষ্টা করলেই তাঁকে গুলি করে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর কেটে যায় ৩ বছর। ধীরে ধীরে ডাকাত দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে থাকেন সীমা। এরই মধ্যে একদিন তাঁর কানে আসে, তাঁদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সীমার বাবা-মাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপরই আর মাথার ঠিক রাখতে পারেননি সীমা। পুলিশের অত্যাচারের কথা শুনে হাতে বন্দুক তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আর সেখান থেকেই হয়ে ওঠেন চম্বলের কুখ্যাত ডাকাত। অপহরণ থেকে শুরু করে টাকা লুট সব কাজই করতে শুরু করে সীমার নেতৃত্বাধীন দল। পরে ২০০ অপহরণ, ৭০টি খুন এবং ৩০টি খুনের মামলায় পুলিশের খাতায় নাম ওঠে তাঁর। কপালে কালো টিকা, মাথায় লাল ফেট্টি এবং জলপাইরঙা উর্দিই হয়ে উঠেছিল সীমার হিংস্রতার প্রতীক। পরে দু-দুবার বিয়ে করলেও তা বেশিদিন টেকেনি। তবে সীমার একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর ধীরে ধীরে একা হয়ে পড়েন সীমা। ছোট্ট ১০ মাসের শিশুকে নিয়ে সীমা বিপাকে পড়েন। আর তারপরই কয়েকটি শর্তে তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরে সীমার ২০০২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শিবসেনাকে সমর্থন করেন তিনি। ২০০৬ সালে ইন্ডিয়ান জাস্টিস পার্টিতে যোগ দেন। তারপর ২০০৮ সালে সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।

পরে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সীমার জীবনযাত্রা নিয়ে ‘উন্ডেড’ নামে একটি ছবি তৈরি করা হয়। ছবির মুখ্য চরিত্রে ছিলেন সীমা নিজেই। সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার তিন বছর পর ২০১০ সালে রিয়ালিটি শো ‘বিগ বস সিজন-৪’-এ প্রতিযোগী হিসাবে অংশ নেন সীমা। তাঁর জীবন সফরকে কুর্ণিশ জানান দেশবাসী।

 

Previous articleঅপমানের বদলা নিতেই হত্যা! সতেন্দ্রর ‘স্বীকারোক্তি’ খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা
Next articleনিম্নমুখী করোনা সংক্রমণ, দৈনিক গ্রাফ নিয়ে চিন্তা কমল স্বাস্থ্য মন্ত্রকের