UPA আমলে ৬০% থেকে NDA-তে ৯৫%: মোদি জমানায় CBI জালে শুধুই বিরোধীরা

‘কংগ্রেস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেসান’, ‘খাঁচায় বন্দী তোতা’, ‘বিজেপির জামাই’ এমন নানান নামে অলংকৃত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই সম্পর্কে প্রকাশ্যে এল এমন এক রিপোর্ট যাকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনীতিতে রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে গত ১৮ বছরে কংগ্রেস ও বিজেপি সরকারের আমলে অন্তত ২০০ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে সিবিআই মামলা দায়ের, গ্রেফতার, তল্লাশি অভিযান ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা। ২০১৪ সালে এনডিএ-র সরকার আসার পর সিবিআইয়ের ধড়পাকড় ৬০ শতাংশ থেকে পৌঁছে গিয়েছে ৯৫ শতাংশে।

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ আমলে ১০ বছরে(২০০৪-২০১৪) অন্তত ৭২ জন নেতা সিবিআই তদন্তের আওতায় পড়েছিলেন যাঁদের মধ্যে ৪৩ জন(৬০ শতাংশ) বিরোধী রাজনৈতিক দলের। সেটাই এনডিএ আমলে (২০১৪ থেকে এখনও পর্যন্ত) ১২৪ জন নেতার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চলছে। যাঁদের মধ্যে ১১৮ জন(৯৫ শতাংশ) বিরোধী রাজনৈতিক দলের। ৬ জন মাত্র বিজেপির। শুধু তাই নয় এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ কোনও নেতা যদি ইউপিএ ছেড়ে এনডিএ-র শরণাপন্ন হন সেক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের তৎপরতা একেবারেই থেমে যায়।

তথ্য অনুযায়ী, ইউপিএ আমলে ৪৩ জন বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মাত্র ১২ জন নেতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। পদক্ষেপ অর্থাৎ গ্রেফতার, তল্লাশি অভিযান ও জিজ্ঞাসাবাদ। এই তালিকায় ছিলেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে ২০১৪ সালের পর ছবিটা ভয়াবহ আকার নেয়। সিবিআইয়ের পদক্ষেপে ১১৮ জন বিরোধী নেতৃত্বের মধ্যে ৩০ জন তৃণমূলের, ২৬ জন কংগ্রেসের, এরপর তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে আরজেডি(১০), বিজেডি(১০) সহ অন্যান্য আরও ১২ রাজনৈতিক দল। শুধু তাই নয়, যে সকল দল এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে তাঁদের নেতাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে সিবিআইকে। যেমন তামিলনাড়ুর ডিএমকে, বিহারের জেডিইউ, ওড়িশার বিজেডি।

বাংলায় সিবিআইয়ের বাড়বাড়ন্ত ও কেন্দ্রীয় সংস্থার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “গতবার ওরা পশ্চিমবঙ্গকে দখল করার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছিল। অমিত শাহ বিবৃতি দিয়েছিলেন, ২০০ পার। কিন্তু ১০০ পার হতে পারেনি। ৭৭-এ এসে থেমে গিয়েছে। তাই ওদের একটা জ্বালা আছে। ওরা যেটুকু করছে সেই জ্বালা থেকে করছে। এইজন্যই আমরা বলছি সিবিআই, ইডির নিরপেক্ষ হওয়া দরকার। আমি সংসদে প্রস্তাব এনেছিলাম, সিবিআইকে লোকপালের আওতায় আনা হোক। ভোটের ফলাফল তো একই হচ্ছে।”

বিজেপির শাসনে ১২৪ জনের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চললেও তাঁদের মধ্যে মাত্র ৬ জন বিজেপির বাকি ১১৮ জন বিরোধী নেতৃত্ব। শুধু তাই নয়, বিজেপিতে থাকা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘সিবিআই নিষ্ক্রিয়’ এমন অভিযোগও কম নয়। যেমন সোহরাবুদ্দিন শেখ মামলায় এনডিএ আমলে অমিত শাহের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে তৎপর ছিল সিবিআই। অথচ বিজেপি সরকার আসার পর এক বিশেষ আদালত অমিত শাহকে রেহাই দিলে এর বিরুদ্ধে কোনওরকম আবেদন করেনি সিবিআই। ওদিকে সারদা মামলায় তৎকালীন কংগ্রেস নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে ব্যাপক তৎপরতা দেখায় সিবিআই। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি অভিযান ও জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয়। অথচ হিমন্ত বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনও রকম পদক্ষেপ নেয়নি। একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে।

Previous articleEntertainment: অন্তর্বাসের মাপ নিয়ে হৃতিককে চিঠি রসিকা শ্রীলেখার
Next article‘পড়ুয়ার অভাবে বন্ধ স্কুল চালু করতে নয়া নীতি আনবে সরকার’, জানালেন শিক্ষামন্ত্রী