Thursday, December 18, 2025

বৌদ্ধ সংস্কৃতির ধারা মেনে জিরাটের মঠ বাড়িতে ৪১৩ বছরের দুর্গাপুজো

Date:

Share post:

সুমন করাতি, হুগলি

বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে দুর্গাপুজো (Durga Puja) নিয়ে কত অজানা গল্প। একদিকে যখন থিমের বাহার বারোয়ারি পুজোতে, তেমনই ইতিহাস আর ঐতিহ্য নিয়ে অন্যদিকে সাবেকি বাড়ির পুজো। বৌদ্ধ সংস্কৃতির ধারা মেনে জিরাটের মঠ বাড়িতে আজও দুর্গাপুজো (Durga Puja) পালন করা হয়। স্থানীয়রা বলেন গঙ্গার পশ্চিম তীরের বলাগড় গুপ্তিপাড়ায় (Guptipara) এক সময় টোল ছিল।সেখানে শিক্ষা লাভের জন্য বাংলার বাইরে থেকেও ছাত্ররা আসতেন। সেই সুবাদেই পুঁথি পত্র লেখালেখি হয়েছে বলাগড় ও জিরাটের বিভিন্ন গ্রামে।সেই প্রাচীন পুঁথি গুলি উদ্ধার করার পর জানা যায় যে বৌদ্ধ সংস্কৃতির (Buddhist culture) একটি ধারা জিরাট তথা বলাগড় অঞ্চলে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলেছিল। সেই ধারা বজায় রেখেই ৪১৩ দুর্গাপুজো পালন করছেন এখানকার মানুষ।

এই পুজোর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে প্রাচীন পুঁথির উপর কিছুটা নির্ভর করতে হয়। জানা যায় পাটুলি গ্রামে জিরাটের মঠ বাড়িতে বর্ধমানের পূর্বস্থলীর কাছে ছিল রাঢ়ীয় অবসতী চট্টোপাধ্যায় বংশীয়দের বাস । তাঁদেরই বংশধর মদনমোহন তর্কালঙ্কার জিরাটে এসে বসবাস করতে শুরু করেন। ঐতিহাসিকরা বলেন মদনমোহনের বাড়ির কাছে প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ ছিল বলে ।সেইজন্য মদনমোহনের বাড়িকে বলা হত মঠ বাড়ি । মঠটি ধ্বংস হলে ১৩০৭ বঙ্গাব্দে মদনমোহনের বংশধরেরা নতুন করে দালান নির্মাণ করেন। এখানে যে দুর্গা মন্দির রয়েছে, সেখানে দুটি শ্বেত পাথরের বৌদ্ধ মূর্তি লক্ষ্য করা যায়। দেবী দুর্গা এখানে একটু অন্যভাবে অধিষ্ঠাত্রী হন। মায়ের দুই হাত প্রকটে ,আটটি হাত আড়ালে রেখে গড়া হয় প্রতিমা । এই বাড়ির পুজোয় পিটুলির নরমূর্তি বলি দিয়ে যোগিনী পুজোর বিধি রয়েছে। এই মঠ বাড়ির পেছনের দিকে রয়েছে ধর্মরাজ ঠাকুরের মন্দির ।তার পূজারিরা ব্রাহ্মণ নন, বোধক সম্প্রদায়ের।।পরে তার হিন্দু রূপান্তর ঘটে। মঠ বাড়ির তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের বাড়ির পুজো মহাযানী বৌদ্ধ রীতি এখনও মানা হয় । আমাদের বাড়ির নিজস্ব ৪১৩ বছরে পুজো আগের পুঁথি মেনেই করা হয় । এই বিষয়ে অধ্যাপক গবেষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বলাগড়ের তেঁতুলিয়া অঞ্চল থেকে সৈকত ভট্টাচার্য্যর উদ্যোগে তাঁর বাড়ি থেকে বেশ কিছু প্রাচীন পুঁথি উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে দুর্গা পুজো কেন্দ্রিক পুঁথির উল্লেখ আছে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন যোগিনী পুজো বিধি হয়তবা বৌদ্ধ সংস্কৃতির ক্ষয়িষ্ণু ধারার হিন্দু রূপান্তর। পুঁথিগুলি অধিকাংশটাই তুলট কাগজের ওপর লেখা । কিছু আছে যেগুলো গাছের ছাল থেকে যে ভূর্জপত্র বা বিশেষ কাগজ তৈরি হত, তার ওপর লেখা। সংগৃহীত পুঁথির ভেতর সিংহভাগই হল পুজোর বিধি । গুপ্তিপাড়া, বেহুলা, খামারগাছী, বলাগড়, বাকুলিয়া,ধোবাপাড়ার মতন প্রত্যন্ত গ্রামে লক ডাউন পর্বে পুরোনো বাড়ি গুলি থেকে ৫০ টির মতন পুঁথি এবং প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো চিঠি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

spot_img

Related articles

নিউটাউনের ঝুপড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

উত্তর ২৪ পরগনার নিউটাউনে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার সন্ধ্যার পর...

বিজনেস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভ: বিনিয়োগের বার্তা নিয়ে শিল্পপতিদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী

রাজ্যে শিল্প ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে আরও বিস্তৃত করতে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘বিজনেস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভ’। ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে...

২২ জানুয়ারি থেকে শুরু ৪৯তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা, ভার্চুয়ালেও মিলবে মেলার স্বাদ

আর দেড় মাসের অপেক্ষা। আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলেছে ৪৯তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। বইপ্রেমীদের জন্য এ...

যুবভারতীর বিশৃঙ্খলা-কাণ্ডে শোকজের জবাব জমা তিন শীর্ষ কর্তার

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসির অনুষ্ঠান ঘিরে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার ঘটনায় শোকজের জবাব জমা দিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, ক্রীড়া...