“নন্দীগ্রাম নিয়ে অসত্য বলছে”, মমতাকে অসম্মান করলে শুভেন্দুকে দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি শোভনের

ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় শোভন দাবি করেন, নন্দীগ্রামের ঘটনাটি যে দিন ঘটে, সে দিন তিনি ছিলেন তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে। শান্তিকুঞ্জ অর্থাৎ শুভেন্দুর কাঁথির বাড়ি থেকে নন্দীগ্রামে যাওয়ার যে দাবি শুভেন্দু করেছেন, তা অসত্য

ফের রাজনীতি নিয়ে কথা বলে শিরোনামে শোভন চট্টোপাধ্যায়। শুধু কথা বলাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এবার এক ভিডিও বার্তায় নন্দীগ্রাম আন্দোলন নিয়ে সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে গতকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী৷ পাল্টা শুভেন্দুর বক্তব্যকে অসত্য বলে দাবি করলেন শোভন৷ সেইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অসম্মান করলে শেষ দেখে ছাড়বেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুজোয় শিশিরের জন্য ধুতি-পাঞ্জাবি নিয়ে শান্তিকুঞ্জে সুকান্ত, শুভেন্দুর বাবাকে নিয়ে ফের বিতর্ক

ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় শোভন দাবি করেন, নন্দীগ্রামের ঘটনাটি যে দিন ঘটে, সে দিন তিনি ছিলেন তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে। শান্তিকুঞ্জ অর্থাৎ শুভেন্দুর কাঁথির বাড়ি থেকে নন্দীগ্রামে যাওয়ার যে দাবি শুভেন্দু করেছেন, তা অসত্য। শোভনের কথায়, “রাজনীতি করতে নেমে ইতিহাসকে বিকৃত করছেন উনি। এটা কখনওই মেনে নেব না। আমি ওই আক্রমণের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলার মানুষ জানেন সে দিন কী হয়েছিল।”

কিন্তু হঠাৎ কেন ফের শিরোনামে নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ?

গতকাল, রবিবার লক্ষ্মীপুজোয় অধিকারী পরিবারের আমন্ত্রণ পেয়ে কাঁথির “শান্তিকুঞ্জ”-এ গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সেখানে তিনি শিশির অধিকারীর সঙ্গেও দেখা করেন। তাঁকে বাড়িতে স্বাগত জানাতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। বাড়ির সামনে হাজির হওয়া সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ”নন্দীগ্রাম না হলে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন না৷ নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় তৃণমূলনেত্রী মমতা যে বাড়ি থেকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন…, এই বাড়িতে (শান্তিকুঞ্জ) ছিলেন উনি। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামের ঘটনা ঘটেছিল। ২০০৮ সালের ১৩ মার্চ এই বাড়ির (শান্তিকুঞ্জ) ছাদে ছিলেন রাতে। নন্দীগ্রাম না হলে দিদি তো …. মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন না।”

আর সেই জায়গা থেকেই শুভেন্দুর মিথ্যাচার নিয়ে শোভন আপত্তি তুলেছেন। তিনি বলেছেন, “২০০৭ সালের ১৪ মার্চ না ২০০৮ সালের ১৩ মার্চ তা নিয়েই ধন্দে উনি। ঘটনাটা ঘটেছিল ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ। যে দিন নন্দীগ্রামে গুলি চলে, সে দিন আমি উপস্থিত ছিলাম মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে। তৃণমূল ভবনে। সেটা নিশ্চয়ই শান্তিকুঞ্জ ছিল না। আমার মনে আছে মমতা ব্যানার্জি চোখে জল। ঝরঝর করে কাঁদছেন। বললেন, ওরা সবাইকে মেরে ফেলল কানন, চল আমরা নন্দীগ্রামে যাই। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টে -৪টের সময় আমরা রওনা হয়েছিলাম।” শুভেন্দুর মন্তব্যের জের টেনে শোভন জানতে চেয়েছেন, সেই দিন শুভেন্দু কোথায় ছিলেন! আর তিনি এমনভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করছেনই বা কী করে?

ভিডিও বার্তায় সে দিনের যাত্রাপথের গোটা কাহিনিও শুনিয়েছেন শোভন। তাঁর কথায়, “আমার মনে আছে রাত সাড়ে দশটার সময় আমরা কোলাঘাট থেকে চণ্ডীপুরের দিকে বাঁক নিতেই আমাদের গাড়ি আটকে দেওয়া হল। সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল গাড়ি। দেখলাম, চারপাশ থেকে আমাদের ঘিরে ধরেছে বহু মানুষ। তাঁদের হাতে গাঁইতি, কোদাল। তারা বলছে, পুলিশ, মিডিয়া এমনকি সহকর্মীদেরও যেতে দেওয়া হবে না। একমাত্র মমতা ব্যানার্জি যেতে পারেন। এ দিকে ওঁরও জেদ, ‘আমি নন্দীগ্রাম যাবই।’ সে দিন আমিই এগিয়ে গিয়েছিলাম। পরিস্থিতি দেখে শুনে ওঁকে বলেছিলাম, ‘আপনাকে ওরা মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। তাই কাউকে যেতে দেবেন না বলছে। আপনি ফিরে চলুন।’ সে দিন শুভেন্দু চণ্ডীপুরে আসেননি কেন? কোথায় ছিলেন তিনি? নিজেকে তিনি নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হোতা বলে দাবি করেন!”

এরপরই রীতিমতো সুর চড়িয়ে রীতিমতো শুভেন্দুকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে শোভন বলেন, “শালীনতার সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন৷ বলছেন শান্তিকুঞ্জ না থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন না? আমি বলছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে আপনি সাংসদও হতে পারতেন না, শহিদের মাকে অন্য বিধানসভায় সরিয়ে আপনাকে নন্দীগ্রাম থেকে জিতিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা, মন্ত্রিসভায় নিয়ে এসেছিলেন৷ সৃষ্টি স্রষ্টাকে অস্বীকার করলে স্রষ্টার কোনও ক্ষতি হয়না৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুপ করে আছেন বলে বাংলার মানুষ চুপ করে থাকবেন না৷ তাঁরা সত্যিটা জানেন৷”

Previous articleজাঙ্গিপাড়ায় নিখোঁজ নাবালিকার মৃ*ত্যুরহস্যে গ্রেফতার ৪
Next articleইস্যু নন্দীগ্রাম: মমতাদির দয়ায় “শান্তিকুঞ্জ” রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, শুভেন্দুকে ধুয়ে দিলেন কুণাল