সোমবার আইএসএলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল এটিকে মোহনবাগান। প্রথম ম্যাচেই চেন্নাইয়ান এফসির কাছে ১-২ গোলে হারের মুখ দেখে বাগান ব্রিগেড। সোমবার মাঠে যখন দলের এই অবস্থা। তখন মাঠের বাইরে চলছে বর্তমান কর্তা এবং প্রাক্তন কর্তার বিবৃতির পাল্টা বিবৃতির লড়াই। সোমবার যেন সেই ছবি দেখল কলকাতা ময়দান। বলা ভালো বাগান সচিব দেবাশিস দত্তের পাল্টা দিলেন সৃঞ্জয় বোস।
অনেকদিন ধরেই ‘রিমুভ এটিকে’ নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন বাগান সমর্থকরা। সেই আন্দোলন ক্লাব তাঁবু ছাড়িয়ে এবার পৌঁছে যায় বাগান সচিব দেবাশিস দত্তের বাড়ি। রবিবার বিকেলে ক্লাব তাঁবুর সামনে থেকে সমর্থকরা সোজা চলে যান দেশপ্রিয় পার্কে দেবাশিস দত্তের বাড়ির সামনে। সেখানেও ‘রিমুভ এটিকে’-র দাবিতে বিক্ষোভ দেখান এক দল সমর্থক। তবে শুধু দেবাশিস দত্ত নয় বাগান সমর্থকরা বাগান সভাপতি টুটু বোসের নাম করেও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। সমর্থকদের দাবি, ক্লাব কর্তারা কয়েক মাস আগেই আশ্বাস দিয়েছিলেন, দ্রুত মোহনবাগান নামের আগে থেকে ‘এটিকে’ শব্দ সরে যাবে। কিন্তু আরও একটা আইএসএল শুরু হয়ে গেলেও তা হয়নি। সমর্থকদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে কর্তাদের। আর গতকালকের এই প্রতিবাদ ঘিরে সোমবার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে মোহনবাগান ক্লাব। যেখানে ক্লাবের সহ-সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন। যেখানে বলা হয়েছে,” উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে সভাপতি এবং সচিবের নামে। এরপাশাপাশি সেই বিবৃতিতে সত্যজিত চট্টোপাধ্যায় আরও লেখেন, “ক্লাবের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন কিছু সমর্থক। মার্জারের সময়, দেবাশিস দত্ত সচিব ছিলেন না। তাই তাঁর এক্ষেত্রে বলার জায়গা ছিল না। আগের কার্যকরী কমিটি এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
আর এই বিবৃতির পরই পাল্টা দিয়েছেন বাগানের প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বোস। তিনি পাল্টা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, ” ক্লাবের প্রেস রিলিজে সম্পূর্ন ভুল তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। মার্জারের সময় ক্লাবের কার্যকরী কমিটিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বেশিরভাগ সদস্য এবারও কমিটিতে আছেন। ফলে অনেকেই জানেন, আসল সত্যটা। ক্লাবের কার্যকরী কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে আর দেবাশিস দত্তকে দায়িত্ব দিয়েছিল, পুরো ইস্যুটা নিয়ে এটিকের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য । ফলে সেই আলোচনায় সমান দায়িত্ব দেবাশিস দত্তরও ছিল। তাছাড়া চুক্তিপত্রে ফুটবল টিমের তৎকালীন কোম্পানি (মোহনবাগান ফুটবল ক্লাব ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড)-এর তরফে আমি এবং দেবাশিস দত্ত দু জনেই সই করেছিলাম “ডিরেক্টর” হিসেবে। ফলে চুক্তিপত্রে সময় কে সচিব আর কে অর্থ সচিব সেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। ফলে ক্লাবের তরফে একটা ভুল তথ্য দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।”
এখানেই না থেমে এটিকে নাম তোলার ব্যাপারে দেবাশিস দত্ত ও সৃঞ্জয় বোস একসঙ্গেই সঞ্জীব গোয়েঙ্কাদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন বলে দাবি মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিবের। এই নিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি লেখেন, ”ক্লাব বোধহয় প্রেস রিলিজ দেওয়ার আগে তথ্যগত ব্যাপারে আরও একটু সতর্ক হতে পারত। আমি পদত্যাগ করার আগে, আমি ও দেবাশিস দত্ত একসঙ্গেই ইনভেস্টর কতৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম, নাম পরিবর্তনের বিষয়ে। ক্লাব যদি চায়, আমি আজও যে কোনও আলোচনায় যেতে প্রস্তুত। সদস্য-সমর্থকরাই ক্লাবের মেরুদণ্ড। আমি বিশ্বাস করি তাঁদের আবেগ এবং চাহিদাকে ক্লাব এবং ইনভেস্টর কতৃপক্ষ যথাযত সম্মান দেবে।”
এই নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ক্লাবের সহ সভাপতি কুণাল ঘোষও। প্রথম থেকেই সমর্থকদের দাবি মেনে এটিকে নাম সরানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন কুণাল ঘোষ। তিনিও দেবাশিস দত্তদের পাশে থাকলেন না। বিবৃতি দিয়ে কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, ”১০ অক্টোবর প্রচারিত মোহনবাগান ক্লাবের বিবৃতির বয়ানের সঙ্গে অনেকাংশেই একমত নই। এ বিষয়ে এক্সিকিউটিভ কমিটিতে কোনো আলোচনা হয়নি। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা ও পদক্ষেপের প্রয়োজন আছে। ক্লাবের সদস্য, সমর্থকদের আবেগকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া তখনও প্রয়োজন ছিল, এখনও প্রয়োজন।”
তবে গতকাল রিমুভ এটিকে আন্দোলন যে পৌঁছে গিয়েছিল ক্লাব সচিব দেবাশিস দত্তের বাড়ি, সে নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সৃঞ্জয় বোস। এই নিয়ে তিনি বলেন,” আমি নিজেও মনে করি, ময়দানের কোনও প্রতিবাদ, ময়দান ছাড়িয়ে কারও ব্যক্তিগত বাড়ির সামনে প্রদর্শন করাটা ঠিক নয়। তাই মোহনবাগান ক্লাবের প্রতিবাদের সঙ্গে আমিও একমত।”
সব মিলিয়ে রিমুভ এটিকে আন্দোলন নিয়ে জোর বিতর্ক মোহনবাগান ক্লাবে।
আরও পড়ুন:আইসিসির সেপ্টেম্বর মাসের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেলেন হরমনপ্রীত কৌর