মহারাজ-হীন BCCI! রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে সরব বিরোধীরা, সামাল দেওয়ার চেষ্টা বিজেপির

উল্লেখ্য, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শিরোনামে উঠে এসেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। তাঁকে বাংলার মুখ করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েছিল বিজেপি।

দ্বিতীয়বারের জন‍্য বিসিসিআইয়ের সভাপতি (BCCI President) পদে দেখা যাবে না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Sourav Ganguly)। সব ঠিক থাকলে ভারতীয় ক্রিকেটের মসনদে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জায়গায় বসতে চলেছেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার রজার বিনি (Roger Binny)। বিনিই হতে চলেছেন পরবর্তী বিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি। এমনটাই জানিয়েছে এক সর্বভারতীয় সংবাদসংস্থা। যার ফলে ভারতীয় ক্রিকেটে প্রশাসক হিসাবে শেষ হতে চলেছে মহারাজের ইনিংস। যদিও বোর্ডের সহসভাপতির পদে বহাল থাকছেন রাজীব শুক্লা (Rajiv Shukla)। এমনকি জয় শাহর (Jay Shah) নাম নতুন সভাপতি হিসাবে উঠে আসলেও, জানা যাচ্ছে সচিব পদেই দেখা যাবে তাকে। আর এর ফলে সৌরভের বিসিসিআইয়ে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্টের পদের দৌড়ে না থাকাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবেই ব্যাখ্যা করছে তৃণমূল,সিপিএম-সহ বিরোধীরা। যদিও বিজেপির পালটা দাবি, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।

উল্লেখ্য, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শিরোনামে উঠে এসেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। তাঁকে বাংলার মুখ করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েছিল বিজেপি। এমনকী বঙ্গ সফরে এসে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে মহাভোজও খেয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন তাঁদের একাধিক বিজেপি নেতা-সাংসদ। কিন্তু তারপরও বরফ গলেনি। রাজনীতির রং গায়ে লাগাননি মহারাজ। রাজনীতিতে যোগ দিতে আগ্রহী নন সেকথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর এখানেই তৃণমূলের দাবি, বিজেপির ‘শর্ত’ না মানাতেই সভাপতির পদ হারাতে হচ্ছে সৌরভকে। যদিও পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক মঞ্চেও দেখা গিয়েছিল সৌরভকে। তবে সেখানেও নিজের গায়ে রাজনীতির রং লাগতে দেননি বাংলার মহারাজ।

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এই নিয়ে বলেন, “উনি বাংলার গর্ব। তিনি নেই। অথচ রাজনৈতিক পিতার পুত্র জয় শাহ থাকছেন। আসলে পরিবারতন্ত্র। বিজেপি আবার পরিবারতন্ত্র নিয়ে কথা বলেন। বড় নেতার পুত্র থাকলেন। আর এক নেতার পুত্র অরুণ ধুমাল দায়িত্বে আসছেন। এটা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। তবে আমি মনে করি সৌরভ নিজে ব্যাখ্যা দেওয়ার যথার্থ লোক। তার নিজের মানসিক পরিস্থিতি কী, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে সারা বাংলার মানুষের মধ্যে বিজেপি প্রচার করল তাদের দলে আসছেন সৌরভ। এই জোয়ার যখন তারা তৈরি করেছিল, তার ভাটার পরিস্থিতিও বিজেপিকে সহ্য করতে হবে। তার দায় নিতে হবে। এটার সঙ্গে রাজনীতি আছে কিনা সে দিকে যাচ্ছি না।”

 

একই সুর তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের টুইটেও। তিনি টুইটে লেখেন “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আরও একটা উদাহরণ। অমিত শাহর ছেলেকে সচিব পদে রেখে দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বাদ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যের বলেই কি সৌরভের সঙ্গে এমনটা হল? নাকি বিজেপিতে যোগ না দেওয়ায়?” প্রশ্ন তাঁর।

এই সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সৌরভরা খেলার মাঠে দায়িত্বে থাকবেন, ক্রীড়া প্রশাসনের দায়িত্ব নেবেন, সেটাই হওয়া উচিত। ফুটবলের ক্ষেত্রে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই মনোভাবই জানিয়েছে কোর্ট। খেলায়াড়রা পদ পাবেন না, শুধু রাজনীতিকদের মাতব্বরি চলবে, এটা হতে পারে না। দেখা যাক। হয়ত রাজনীতির খেলাতেই সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তেমনই আন্দাজ মিলছে।”

 

সৌরভের বিসিসিআইয়ের পদে না থাকা নিয়ে মন্তব্য করেছেন সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “খেলার দুনিয়া থেকে রাজনীতিকে দূরে রাখা উচিত। আজকাল অনেক ফুটবল ক্লাবে রাজনৈতিক দলের পতাকা দেখা যায়। যা কাম্য নয়। এক্ষেত্রেও চাইব রাজনীতির রং যেন না লাগে। সৌরভও যেন রাজনীতি থেকে দূরে থাকে ।”

তবে ভারতীয় বোর্ডে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বিতীয়বার সভাপতি না হওয়ার  সঙ্গে রাজনৈতিক যোগের অভিযোগ মানতে নারাজ পদ্মশিবির। এই নিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “এমন তো কোনও চুক্তি ছিল না যে তিনিই সভাপতি পদে থেকে যাবেন। কিংবা সকলে একসঙ্গে চলে যাবেন। তাই অযথা এর সঙ্গে রাজনীতিকে জোড়ার মানে নেই। সৌরভ বিরাট বড় ক্রিকেটার। তাঁকে কেউ ছোট বা বড় করতে পারবে না। এটা ঠিক যে সৌরভকে বিজেপি দলে চেয়েছিল, কিন্তু তার সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই।”

১৮ অক্টোবর বোর্ডের নির্বাচন। তার আগে ১২ অক্টোবরের মধ্যে মনোনয়ন জমা দিতে হবে।সূত্রের খবর কর্নাটক রাজ্য ক্রীড়া সংস্থা তাদের প্রতিনিধি হিসাবে বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার রজার বিনির নাম পাঠাবে। নতুন সভাপতি হওয়ার লড়াইয়ে তিনিই এগিয়ে।

এদিকে ইতিমধ্যেই সব রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থাগুলিকে চিঠি পাঠিয়েছে বিসিসিআই। সেই চিঠিতে লেখা, “১৮ অক্টোবর মুম্বইয়ে বোর্ডের ৯১তম বার্ষিক সাধারণ সভা। বিস্তারিত পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। সবাইকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে।” এই চিঠির সঙ্গে আরও একটি কাগজ পাঠানো হয়েছে, যেখানে লেখা বার্ষিক সভায় কী কী নিয়ে আলোচনা হবে। তার মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য, সভাপতি, সহ-সভাপতি, সচিব, যুগ্মসচিব ও কোষাধ্যক্ষ নির্বাচন।

আরও পড়ুন:জাতীয় গেমস ফুটবলের ফাইনালে বাংলার সামনে আজ কেরল

 

 

Previous articleস্বদেশী পণ্যে জোর দিতে আমদানি ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম আনতে চলেছে মোদি সরকার
Next articleহাইকোর্টে ধাক্কা ইডির, ট্রানজিট রিমান্ডে সায়গলকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার আবেদন খারিজ