বিরোধী পরিবারের সব ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে আনার চ্যালেঞ্জ কুণালের

একদিকে যেমন আমরা মায়ের আরাধনা করছি তেমনই এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অর্থনীতি

পূর্ব মেদনীপুরের ভগবানপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়া সম্মিলনীতে দলের  মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, পুজো মানে একটা উৎসব । একদিকে যেমন আমরা মায়ের আরাধনা করছি তেমনই এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অর্থনীতি। কারণ , যিনি কুমোরপাড়ায় মায়ের প্রতিমা তৈরি করছেন , সারা বছর তিনি অপেক্ষা করে থাকেন এই সময়টির জন্য। তিনি অপেক্ষা করে থাকেন কখন বায়না আসবে। ঠিক তেমনি যিনি মণ্ডপ তৈরি করছেন , আলোকসজ্জা করছেন, ফুল চাষ করছেন , শোলা শিল্পীরা প্রত্যেকে কিন্তু এই উৎসবের জন্য অপেক্ষা করেন।

তিনি বলেন, দুর্গাপুজো হিন্দুদের উৎসব । কিন্তু যখন নতুন জামা গায়ে দিয়ে আমরা অঞ্জুলি দিতে হাজির হই , তখন কিন্তু একবারও ভাবি না সেটা কোন ধর্মের মানুষ তৈরি করেছেন । কারণ, হিন্দু না মুসলিম সে কথা বাংলার মানুষ ভাবেনা। উৎসব সবার । আর সেই কারণেই এবার এই উৎসবের অর্থনীতির বাজার ৫০ হাজার ৫২ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে।

এদিন  বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে কুণাল বলেন, ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে  যারা ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করত তারা বলতো বাংলায় নাকি দুর্গাপুজো হয় না। আর এখন ইউনেস্কো বলছে বাংলার দুর্গাপুজো বিশ্বের অন্যতম সেরা। বাংলার দুর্গাপুজো কমিটিগুলোকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন অনুদান দিয়েছেন তা নিয়েও বিতর্ক অনেক। আসলে এই অনুদান দেওয়ার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী চান এই উৎসবকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিটা আরও ছড়িয়ে পড়ুক। বিজেপি হলভাড়া করে দুর্গাপুজো করতে গিয়েছিল। ওদের তো আবার আদি আর নব্য বিজেপি। সেই দ্বন্দ্ব নিয়েই মাথাব্যথা।

তিনি মনে করিয়ে দেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের আত্ম বলিদানের অন্যতম পবিত্র মাটি এই মেদিনীপুর। শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করে বলেন , ইডি- সিবিআই ডাকছে আর বলছে অমিত শাহ পা বাড়িয়ে দাও তোমার জুতো পালিশ করব ।

আমাদের তো হলভাড়া করে পুজো করতে হয় না। আমাদের সঙ্গে সবার , পাড়ার লোকের জনসংযোগ আছে। সারা বছর ধরে সমাজসেবা হয়। হল ভাড়া করে তো বিয়ে, পৈতে , অন্নপ্রাশন, শ্রাদ্ধ হয় । আর বিজেপি হলভাড়া করে দুর্গাপুজো করতে গেছে। ওরা আবার বলছে বিজয়া সম্মিলনী। ওদের বিসর্জন তো একুশেই হয়ে গেছে। যতবার ভোট আসবে ততবার বিসর্জনের ব্যবস্থা করব। পেট্রোল থেকে ডিজেল, গ্যাস, সার সবকিছুর দাম বাড়ছে। এই সরকারের দৌলতে মানুষের জীবনের উপর চাপ বাড়ছে।  এই সরকার জিএসটি এমনভাবে করেছে যাতে বড়লোকেরা যেগুলো কেনে সেখানে জিএসটি কম, আর আপনি আমি সাধারণ মানুষ যেগুলো কিনি সেই জিনিসগুলোতে জিএসটি বেশি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুড়ির প্যাকেটেও জিএসটি ।

কেন তৃণমূল সরকারকে ভোট দেবেন সে ব্যাখ্যাও দেন। কন্যাশ্রী থেকে রূপশ্রী , স্বাস্থ্যসাথী থেকে লক্ষ্মীর ভান্ডার, আপনার পরিবারের কতজন কত ভাবে রাজ্য সরকারের এই উন্নয়ন পরিষেবার সুযোগ পাচ্ছেন একবার ভেবে দেখুন। ছাত্র ছাত্রীরা সাইকেল পাচ্ছে, বিনামূল্যে শিক্ষা পাচ্ছে, জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রতিটা মুহূর্তে পরিবারের কেউ না কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে পাশে পাচ্ছেন। তৃণমূল কংগ্রেস যেটা বলে সেটা করে। বিজেপির মতো শুধু মুখে বলে এক আর কাজে করে অন্য সে রকম নয়। ২০১৪ সালে এই বিজেপি বলেছিল সুইস ব্যাংক থেকে টাকা ফিরিয়ে এনে প্রত্যেকের ব্যাংকে ১৫ লাখ দেবে।কোথায় সেই প্রতিশ্রুতি। বছরে ২ কোটি চাকরির কথা বলেছিল এই বিজেপি । ২০১৪ থেকে ২০২২ আর্ বছরে ১৬ কোটি চাকরি হওয়ার কথা। একবার জিজ্ঞেস করে দেখবেন তো আপনার পাশের বাড়ির কেউ কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি পেয়েছে কিনা ?১৬ কোটি চাকরি তো দূর অস্ত উল্টে ৩২ কোটি বেকার তৈরি হয়েছে।।

সরকারি সংস্থাগুলোকে বেচে দিচ্ছে, ছাঁটাই করছে নাকি কর্মী সংকোচনের জন্য। আত্ম সমালোচনার সুরে কুণাল বলেন, তৃণমূল সরকারেরও কিছু ভুল আছে কিন্তু আমাদের ৯৯.৫ শতাংশ ঠিক, আর ০.৫ শতাংশ ভুল । কারণ হাতের পাঁচটা আঙুল সমান হয় না। ভুল হলে শোধরাতে হবে আর অন্যায় হলে তদন্ত ,শাস্তি । এটাই তো তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু দশমিক পাঁচ শতাংশ ভুলটাকে দিয়ে ৯৯.৫% ঠিকটাকে আমরা আড়াল করতে দেব না।

বামেদের প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন , বাম জামানা ছিল লোডশেডিং এর সরকার।  সিপিএম জামানায় রোজ গণহত্যা, গণধর্ষণের কথা মনে করুন ভগবানপুরের মানুষ। ১৭ জন আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীকে জীবন্ত খুন করেছে এই সিপিএমের কাপালিকরা। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

এদিন কুণাল পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে তৃণমূলের বিজয় সম্মিলনীতে বলেন,  যারা বিজেপি করেন সিপিএম করেন সেই পরিবারে বেশি করে যান। সেই ভোট গুলো এবার তৃণমূলে আনতে হবে পরিষেবা দিয়ে জনসংযোগ দিয়ে। তৃণমূল কংগ্রেস ঢেলে সাজানো হচ্ছে। নতুন কমিটি হচ্ছে। কয়েকজন এসেছিলেন তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি।  নতুন কমিটি হলে যারা বাদ যান তাদের মধ্যে রাগ হয়, এটা স্বাভাবিক । তার সঙ্গে তৃণমূল গেল গেল তৃণমূল উঠে গেল এসবের কোনও সম্পর্ক নেই। কিছু নতুন মুখ, কিছু নতুন দায়িত্ব আসবেই নতুন কমিটিতে। যারা কথা বলতে চেয়েছেন আমি নিজে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কারণ, আমরা গর্বিত আমরা তৃণমূল কর্মী। আমাদের দায়িত্ব এই সুবিধা অসুবিধার কথা নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দেওয়া। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস দাঁড়িয়েছিল, দাঁড়িয়ে আছে , দাঁড়িয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন কুণাল।

তিনি এদিন স্পষ্ট বলেন , সুবিধা অসুবিধা ক্ষোভের কথা আমরা দলীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছাবো। কিন্তু দিনের শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমাদের মানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাব। কোন বিষয় নিয়ে কারও মধ্যে কোন দুঃখ থাকতে পারে সেটা স্বাভাবিক।মেদিনীপুর গর্বের জায়গা । শুভেন্দু অধিকারী ও আধিকারী পরিবার যে কাজ করেছে তার কোনও ক্ষমা নেই। কেউ দলবদল করতেই পারে কিন্তু তাই বলে যে দলটা থেকে তাদের সব পাওয়া সেই বেইমান -গাদ্দার -মিরজাফর শুভেন্দু অধিকারীকে কোনওদিন ক্ষমা করবেন না। দলবদল করে সব পেয়ে বিজেপির কোলে বসে দোল খাচ্ছে। তিনি কটাক্ষ করে বলেন ,  মানুষ এখন বুঝতে পারছে যে বিজেপি ২০০ পারটা বলেছিল পেট্রোলের দাম বাড়াবে বলে।

তিনি আহ্বান করে বলেন, চলুন সবাই মিলে লড়াই করি। বিজেপি- সিপিএম -কংগ্রেসের পরিবারের সব ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে আনতে হবে । পরিষেবা দিয়ে , কাজ দিয়ে, উন্নয়নের হিসাব দিয়ে প্রত্যেকটা ভোট তুলে আনতে হবে। ঝামা ঘষে দিয়েছে বিজেপির মুখের ওপর বাংলার মানুষ। সেটা যাতে পঞ্চায়েতেও হয়, লোকসভাতে হয় সেই চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করলাম।