গুমনামি বাবার DNA রিপোর্ট কেন প্রকাশ করছে না কেন্দ্র? আরটিআইয়ের জবাবে বিতর্ক তুঙ্গে

গুমনামি বাবা। এই নামটি নেতাজি মৃত্যু রহস্যের সঙ্গে ভীষণভাবে জড়িয়ে রয়েছে। নেতাজির মৃত্যু নিয়ে যেমন রহস্য রয়েছে, গুমনামি বাবা কে ছিলেন তা নিয়েও রহস্যের জট কিছু কম নয়। নেতাজি মৃত্যু রহস্য অনুসন্ধান করতে তৈরি হয়েছিল মুখার্জি কমিশন। সেই মুখার্জি কমিশনের তদারকিতে এই গুমনামি বাবার ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছিল। গুমনামি বাবার মৃত্যুর পরে তাঁর কয়েকটি দাঁত পাওয়া গিয়েছিল রামভবন থেকে। সেই দাঁতের ডিএনএ টেস্ট করার জন্য পাঠানো হয়েছিল ভারত সরকারের সিএফএসএল ল্যাবরেটরিতে। সেটি করা হয়েছিল কলকাতায় সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। গুমনামি বাবার ওই ডিএনএ টেস্টের ইলেকট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট চেয়ে আরটিআর করেছিলেন সায়ক সেন নামে এক ব্যক্তি। তাতে সম্প্রতি তাঁকে একটি জবাব দেওয়া হয়েছে।

সায়ক বাবুর দাবি, সেখানে বলা হয়েছে গুমনামি বাবার ইলেকট্রোফেরোগ্রামটি যদি প্রকাশ্যে আসে, তাহলে দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর তার প্রভাব পড়বে এবং ভারতে হিংসা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কলকাতা ও হায়দরাবাদের ল্যাবরেটরিতে সেই ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়েছিল। হায়দরাবাদের ল্যাবরেটরির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, সেটি থেকে চূড়ান্ত কিছু নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। কলকাতার ল্যাবরেটরি থেকে অবশ্য বলা হয়েছিল নমুনা মিলছে না। কিন্তু ইলেকট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আনা হয়নি। সেটি জানতেই সায়কবাবু ২০২০ সালে আরটিআই করেছিলেন। ওই আরটিআই কর্মীর দাবি, সেই সময় তাঁকে বলা হয়েছিল ওই ইলেকট্রোফেরোগ্রামটি নেই।

যদিও পরে আবার আরও একটি জবাব পান তিনি। সেখানে তাঁকে জানানো হয়, খোঁজাখুঁজির পর সেটি পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু সেটি তাঁকে দেওয়া যাবে না। কারণ, তিনি থার্ড পার্টি। তবে ফার্স্ট পার্টি, সেকেন্ড পার্টি কারা, তা তাঁকে জানানো হয়নি। সায়ক বাবুর বক্তব্য, মুখার্জি কমিশন অনেকদিন আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ও প্রয়াত হয়েছেন। গুমনামি বাবাও প্রয়াত।

এমন পরিস্থিতিতে গতমাসে তিনি আরও একটি আরটিআই করেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, ইলেকট্রোফেরোগ্রামটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে কি না। যদি হয়ে থাকে, সেটির তথ্য , কিংবা ওই ইলেকট্রোফেরোগ্রামটি যেন তাঁকে দেওয়া হয়। সায়ক বাবুর বক্তব্য, সেক্ষেত্রে তাঁকে উত্তরে বলা হয়েছিল, গুমনামি বাবার ইলেকট্রোফেরোগ্রামটি যদি প্রকাশ্যে আসে, তাহলে দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর তার প্রভাব পড়বে এবং ভারতে হিংসা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সায়ক বাবুর আরও বক্তব্য, “মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট পড়লেই বোঝা যাবে। নেতাজি ও গুমনামি বাবার হাতের লেখা পরীক্ষা করা হয়েছিল। লীলা রায়, সুনীল দাস, অনিল দাসের মতো বিপ্লবীরা ওনাকে নেতাজি বলে চিহ্নিত করেছেন। শুধু ডিএনএ-র জন্যই প্রমাণ করা যায়নি গুমনামি বাবা নেতাজি।”

নেতাজির ভ্রাতৃস্পুত্র তথা বিশিষ্ট সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মী চন্দ্র বসু বলেন, “আমি আরটিআই উত্তরটি এখনও দেখিনি। তবে যে রিপোর্ট আছে ডিএনএ টেস্টের, সেটি প্রকাশ্যে জানানোতে কোনও অসুবিধা আছে বলে আমি মনে করি না। ওটি তো বৈজ্ঞানিকভাবে ডিএনএ টেস্ট করা হয়। আমি তো শুনেছিলাম, ডিএনএ টেস্ট নেগেটিভ এসেছিল। রেনকোজি মন্দিরে যে অস্থি রাখা আছে, তা পরীক্ষার জন্য নেতাজি পরিবারের অনেকেই নমুনা দিয়েছিলেন। গুমনামি বাবার দাঁতের সঙ্গেও ডিএনএ টেস্ট করানো হয়, সেই রিপোর্টটি নেগেটিভ আসে। নেতাজির সঙ্গে তাঁর কোনও মিল পাওয়া যায়নি। সেটির বৈজ্ঞানিক রিপোর্ট প্রকাশ্য জানা যেতে পারে। রিপোর্ট তো জানাই আছে নেগেটিভ। তাহলে এই নেগেটিভ কীভাবে এল, তা জানাতে অসুবিধা কোথায়? এটা সরকারই বলতে পারবে, কেন এটি প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না।

Previous articleবিপর্যয়ের জের, ৭ মাস পিছিয়ে গেল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ
Next articleবন্ধুত্বের বিরল নজির! শেষ যাত্রায় হনুমানের কীর্তি দেখে চোখে জল নেটাগরিকদের