ওপার বাংলায় দাপট দেখাচ্ছে ‘সিত্রাং’, এখনও পর্যন্ত মৃ*ত ৯

এ রাজ্য থেকে বিদায় নিয়ে পূর্বাভাসমত সোমবার রাতেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে সিত্রাং। এর প্রভাবে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে সে দেশে। এখনও পর্যন্ত ঝড়ের তাণ্ডবে ৯ জন মারা গিয়েছেন। বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, সোমবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয় ঝড়বৃষ্টি। গতকাল সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে তাণ্ডবের তীব্রতা।

আরও পড়ুন:শক্তি বাড়িয়ে সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্মে সিত্রাং, ৪২ হাজার মানুষকে সরানো হল ত্রাণ শিবিরে

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের মূল কেন্দ্রটি উপকূল অতিক্রম করে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ সোমবার সন্ধ্যায় এবং মূল কেন্দ্রটি রাতে উপকূলে আঘাত করে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি ভোলার উপর দিয়ে যায়। সিত্রাংয়ের প্রভাবে সারা দেশে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লায় ৩ জন, ভোলায় ২ জন, নড়াইলে ১ জন, বরগুনায় ১ জন এবং সিরাজগঞ্জে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের দড়িকান্দি এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বড় একটি গাছ উপড়ে পড়ে। তার জেরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের বেশির ভাগ এলাকায় ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলের ১৫টি জেলার নদ–নদীর জলস্তর স্বাভাবিকের থেকে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি।বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভোলার দৌলতখানা পুর এলাকায় খাদিজা বিবি নামে এক বৃদ্ধা গাছ চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন। ভোলাতেই আর এক জন মারা গিয়েছেন চারফ্যাশন উপজেলায়। সেখানে দু’জন বাইকে করে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁদের উপর একটি গাছ ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাইক চালকের। আরোহী গুরুতর আহত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ভর্তি করানো হয় স্থানীয় হাসপাতালে। বরগুনা জেলায় একটি বাড়ির উপর গাছ ভেঙে পড়ে। ওই সময় ঘরে থাকা আমিনা খাতুন নামে এক বৃদ্ধার ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।আহত হন আরও একজন। সোমবার দুপুরে গাছের ডাল তাঁর উপর ভেঙে পড়ে। স্থানীয়েরা তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ঘরের উপর গাছ উপড়ে পড়ে সন্তান-সহ স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত ১১টা নাগাদ হেসাখাল ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতেরা হলেন নিজামউদ্দিন, তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার এবং তাঁদের চার বছরের শিশুসন্তান নুসরত। অন্য দিকে, সিরাজগঞ্জ সদরের সয়দা ইউনিয়নের মোহনপুর এলাকায় সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়।
সিত্রাং-এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের ১৩টি জেলা। ওই সব জেলায় আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। উপকূলবর্তী এলাকার বহু বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করার সময় উপকূলবর্তী এলাকায় ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকা অন্যান্য জায়গা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বরিশাল, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমানবন্দরে সোমবার বিকেল থেকে বিমান ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ রাখা হয় ফেরি ও নৌকো চলাচল।এমনকি বন্ধ করে দেওয়া হয় বাস চলাচলও। ফলে উপকূলীয় এলাকা জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ বাড়ে। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালি, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালি, ফেনী ও বরিশালে ক্ষতির আশঙ্কা সব চেয়ে বেশি।

Previous articleভোগ রান্না থেকে অতিথি আপ্যায়ন: বাড়ির কালীপুজোয় ঘরের মেয়ে মমতা
Next articleঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কাটিয়ে বঙ্গে রোদ ঝলমলে সকাল