এজেন্সিগুলি কি অধিকারী বাড়ির লেঠেল? ধুয়ে দিলেন কুণাল, উঠল “৩ তারিখ কাঁথি চলো” রব

কাঁথি থেকে নন্দীগ্রাম- বিজেপি থেকে শুরু করে অধিকারী পরিবারকে রবিবার দিনভর ধুয়ে দিলেন তৃণমূল (TMC) মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। দুই সাংগঠনিক জেলা কাঁথি ও তমলুকের সর্বস্তরের নেতৃত্বের এককাট্টা উপস্থিতিতে রবিবার গোটা জেলাজুড়ে চলল তিন তারিখের জনসভার প্রচার। প্রচারে কর্মী সমর্থকদের উৎসাহের পারদ ছিল একেবারে তুঙ্গে। পূর্ব মেদিনীপুরজুড়ে আওয়াজ, ‘তেসরা কাঁথি চলো’। দুই সাংগঠনিক জেলা, নন্দীগ্রাম-সহ সর্বত্র ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

এদিন নন্দীগ্রামের বোয়ালে ছিল চাটাই বৈঠক। সেই বৈঠকে উপচে পড়ে ভিড়। সভায় কুণাল ঘোষ ছাড়াও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমেন মহাপাত্র, অরুণাভ ভুঁইয়ারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কুণাল বলেন, এজেন্সি দিয়ে তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতারের ভয় দেখাচ্ছে শুভেন্দু। এজেন্সিগুলি কি অধিকারী বাড়ির লেঠেল বাহিনী? এজেন্সি কি বিজেপি চালায়? এ সব করে সেন্ট্রাল এজেন্সিগুলির সম্মান নষ্ট করছে শুভেন্দু। তিনি বলেন, একদম ভয় পাবেন না। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আইনজীবীদের নিয়ে সেল তৈরি করেছেন। প্রয়োজনের সেই সেলের সাহায্য নিন। দরকার হলে সেই সেলকে নন্দীগ্রামে এনে ঘুরিয়ে নিয়ে যাব। এনআইএ দিয়ে মিথ্যা মামলা করলে, পাল্টা মামলা করুন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিজেপি ও শুভেন্দু নানা প্ররোচনা দেবে। মারধর করতে পারে। প্রশাসনকে খবর দিন প্রয়োজনে আমাদেরও খবর দিন। ৬ ঘন্টার মধ্যে হামলার জায়গায় তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব পৌঁছে যাবে। তারপর শুভেন্দুকে গঙ্গায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসব। নামে চাটাই বৈঠক হলেও মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে কার্যত জনসভার চেহারা নিয়েছিল এদিনের সভা।

নন্দীগ্রামবাসীদের কুণাল বলেন, বিজেপির কথায় হিন্দু-মুসলিম ভাগাভাগি করবেন না। ধর্মের ভিত্তিতে নয়, উন্নয়নের ভিত্তিতে ভোট দিন। নন্দীগ্রামকে যে হার্মাদরা রক্তাক্ত করেছিল, তারাই এখন শুভেন্দুর সঙ্গে ঘুরছে। আর শুভেন্দু প্রতিটি সভায় বলছে, বিজেপি নাকি হিন্দুদের দল। সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিন্দু পাড়ায় মা বোনেরা সবাই মিলে বিজেপিকে হারিয়ে ওর মুখে ঝামা ঘষে দিন।

সকালে কাঁথিতে চায়ের আসর, তারপর কর্মিসভা, শেষে নন্দীগ্রামের বোয়ালে চাটাই বৈঠক ও দিনের শেষে নন্দীগ্রামের তেঙ্গুয়া মোড়ে জনসভায় উপচে পড়া ভিড়ের ছবিটাই বুঝিয়ে দিল তিন তারিখ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Bandyopadhyay) কথা শোনার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন দলের কর্মী, সমর্থকরা। সভায় হাজির ছিলেন দলের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, কাঁথির চেয়ারম্যান অভিজিৎ দাস, সভাপতি তরুণ মাইতি, তমলুকের চেয়ারম্যান পীযূষ ভুঁইয়া, সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র, জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিক, অখিল গিরি সহ জেলার অন্যান্য মন্ত্রীরা, জ্যোতির্ময় কর, হলদিয়া টাউনের সভাপতি স্বপন নস্কর, সব ব্লক সভাপতি-সহ জেলার সমস্ত স্তরের ছাত্র, যুব, মহিলা নেতা-নেত্রীরা। সভায় তিন তারিখের সভা সফল করা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হয়। সভায় কর্মীরা কীভাবে আসবেন, কে কোথায় থাকবেন, সভার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রচারের খুঁটিনাটি সব কিছু নিয়েই আলোচনা হয়।

বঙ্গ বিজেপিতে কেন এখন থাকা যায় না তা এদিন ব্যাখ্যা করেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajiv Bandyopadhyay)। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সৌজন্য দেখিয়ে বিধানসভায় ডেকেছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে বিরোধী দলনেতা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে নাকি তিনি প্রাক্তন করে দেবেন। তবে নন্দীগ্রামের আবার কখনও যদি ভোট হয়, তবে এখানকার মানুষ আপনাকে ‘প্রাক্তন’ করে দেবে। বঙ্গ বিজেপির সমালোচনা করে রাজীব বলেন, ওঁদের সংগঠন এখানকার একটা ক্লাবের থেকেও খারাপ। ওদের ‘সং’টা আছে, ‘গঠন’টা নেই। সবটাই ফাঁকা আওয়াজ। এরপর টেঙ্গুয়া মোড়ে আরও একটি সভা করেন কুণাল। সেই সভায় কুণাল, রাজীবের সঙ্গে ছিলেন বাপ্পাদিত্য গর্গ। সব মিলিয়ে রবিবার সারাদিনই তৃণমূলের একাধিক কর্মসূচি ঘিরে উৎসাহের পারদ ছিল তুঙ্গে।

আরও পড়ুন- পাঁশকুড়া সমবায় ভোটে বড় ব্যবধানে জয় তৃণমূলের, বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় বামেরা