ক্ষুদিরাম মেলা থেকে শিল্প-শ্রমিকের সেতুবন্ধনে শিল্পনগর হলদিয়াকে উন্নততর করার ডাক তৃণমূলের

শহিদ ক্ষুদিরাম ও সতীশ সামন্তের মূর্তিতে মাল্যদানের পর প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ৩০ তম বর্ষের ক্ষুদিরাম জন্মোৎসব ও ক্ষুদিরাম মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

সোমনাথ বিশ্বাস, হলদিয়া

আপাদমস্তক শিল্পতালুক। সেই হলদিয়ায় (Haldia) মুষ্টিমেয় কিছু রাজনৈতিক নেতা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য ঘুঘুর বাসা বানিয়ে রেখেছিল। বাম জমানা এবং পরবর্তী সময়ে কিছু দলবদলু নেতা হলদিয়া শিল্পাঞ্চলকে কার্যত সিন্ডিকেটে (Syndicate) পরিণত করেছিল। দালাল লাগিয়ে শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী কাজ হয়েছে বছরের পর বছর। তবে আর নয়। এবার শিল্প-শ্রমিকের সেতুবন্ধনে শিল্পনগর হলদিয়াকে উন্নততর করার ডাক তৃণমূলের। রবিবার ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদিরাম মেলার (KhudiramMela) উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে এমনই বার্তা দিলেন শশী পাঁজা (Sashi Panja), কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) সহ জেলা তৃণমূল (TMC) নেতৃত্ব।

শিল্পনগরে ক্ষুদিরাম জন্মোৎসব ও ক্ষুদিরাম মেলা-২০২২ উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। এছাড়াও ছিলেন হলদিয়া টাউন তৃণমূল সভাপতি স্বপন নস্কর, যাঁর হাত ধরেই এই মেলার জন্ম। পাশাপাশি এদিনের অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এইচডিএ চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় কর, তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র, সুধাংশু মণ্ডল (প্রাক্তন পৌরপ্রধান), কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর অয়ন চক্রবর্তী সহ বিশিষ্টরা।

এদিন শহিদ ক্ষুদিরাম ও সতীশ সামন্তের মূর্তিতে মাল্যদানের পর প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ৩০তম বর্ষের ক্ষুদিরাম জন্মোৎসব ও ক্ষুদিরাম মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। তার আগে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা পরিক্রম করে গোটা দুর্গাচক এলাকা জুড়ে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই মেলা।

এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “সারা ভারতবর্ষে একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর অনুপ্রেরনায় পূর্ব মেদিনীপুরে ভালো কাজ হচ্ছে। আমাদেরও তিনি এগিয়ে দিয়েছেন। আমি একজন মহিলা শিল্পমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya)। আর আপনারা লক্ষ্মীর ভান্ডারের মহিলা। আমাদের স্বাবলম্বী হওয়ার একটা প্রয়াস। দুয়ারে সরকার চলছে। এরকম সফল কর্মসূচি গোটা দেশে নেই। আপনাদের দুয়ারে সরকার। আপনাদের কাজটা করিয়ে নেবেন। ১২ লক্ষ এই পূর্ব মেদিনীপুরেরই রয়েছেন। স্বাস্থ্য সাথী থাকুক না থাকুক, এই সুযোগটা আগে নিয়ে নিন। আমরা জেলায় জেলায় ঘুরি। মেয়েদের মায়েদের ফোনে মেসেজ ঢুকলে কত খুশি হন। দুস্থ মানুষ, বিধবা মানুষ, বয়স্কদের পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব। পারিবারিক অবস্থা দেখে এটা করে দেওয়া আমাদের একটা প্রয়াস। স্বচ্ছতা রেখে কাজটা হচ্ছে।

শশী পাঁজা আরও জানান, অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের সহায়ক মানুষকে আমরা কুর্নিশ জানাই। ডিমের দাম বেড়েছে, আরও জিনিসের দাম বাড়ছে। রাজ্য অনুদান দিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রের বরাদ্দ দিতে দেরি করছে। আমরা একটা সংঘ করেছি তার মাধ্যমে জিনিসগুলো দেব। এরপরই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ প্রকাশ করে শিল্পমন্ত্রীর অভিযোগ, এত জিনিসের দাম বাড়ছে। কিন্তু কেন্দ্র সেসব দিকে নজরই দিচ্ছে না। এরপরই তিনি জানান, মেলা মিলনক্ষেত্র। এখানে ভাবনাচিন্তা আদানপ্রদান করা যায়। তাই এই কথাগুলো আমরা বলছি। আমরা সবসময় আপনাদের পাশে থাকার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এই দেশ আমার আপনার সকলের। আমি নয় আমরা। কোনও কিছু ধামাচাপা দেওয়া নয়। কোনও কিছু ধামাচাপা দিয়ে বাংলাকে কালিমালিপ্ত করা যায় না।

এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, একসময় যখন এখানে বাম জমানার রমরমা, সেখান থেকে চলতে চলতে ৩০ বছর। তাই বাড়তি অভিনন্দন। এত সুন্দর পরিবেশে ক্ষুদিরাম মেলা। শিল্পনগরী হলদিয়া। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর অভিষেক। মা মাটি মানুষের সরকার। যে বাম জমানায়, পরে অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, তৃণমূলের কোনও এক ব্যক্তির উপর নির্ভর করে নেত্রীর ভরসা ছিল। সেটা যখন ব্যক্তিস্বার্থে কাজে লাগানো হল তখন সেটা খারাপ লাগার জায়গা এখানে মানুষের কাছে। আজ সকালে একটা জায়গায় গেছিলাম। একটা সময় সিপিএম, পরে তৃণমূলের ক্ষমতা ভোগ করে বিজেপিতে চলে গেছে। মানুষের ক্ষোভ হওয়াটা স্বাভাবিক। সিপিএম জমানায় যে কাজ হয়নি, তৃণমূলের সরকারের যেসব ভাল কাজের উপকার পেয়েছেন। কিন্তু স্থানীয়ভাবে যার চোখ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই এলাকা দেখতে চেয়েছিলেন তার বিশ্বাসঘাতকতায় না হয়েছে দলের উপকার, না হয়েছে মানুষের উপকার। এবার আমরা উন্নততর হলদিয়া গড়ার কাজ করব। হলদিয়া উন্নততর শিল্পনগরী বন্দরনগরী হবে। শিল্প থাকবে, শিল্পবান্ধব পরিবেশ থাকবে। শ্রমিক কল্যাণে কাজ হবে। আমাদের লক্ষ্য শিল্প ও শ্রমিকের সেতুবন্ধন হবে।

কুণাল জানান, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দিষ্ট শিল্পনীতি তৈরি হয়েছে। সিওডি তৈরি হচ্ছে। শ্রমিক স্বার্থ অটুট রেখে শ্রমিক পরিবারগুলো যাতে তার ফল পায় সেদিকে আমরা নজর রাখব। ইতিমধ্যে ১১ টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। Exide এর cod হয়েছে। কিন্তু ওটা আমরা মানছি না। বলেছি শ্রমিক কল্যাণে cod করতে হবে। আবার শ্রম দফতর করছে। আগে একজন বাইরে থেকে এসে সই করে দিত। এবার থেকে কথা হয়েছে যারা কারখানায় কাজ করছে, শ্রমিকের ভালো মন্দ বুঝবেন, তাদের অংশগ্রহন থাকবে। মধ্যে থেকেই শ্রমিক নেতা হবেন। কারখানায় আমাদের যে ইউনিট হবে, সেখানে কর্মীরা সম্পাদক থাকবেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট নির্দেশ, ঠিকাদারি করে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন না। সাংসদ, বিধায়ক থাকবেন না। অভিষেক বলে দিয়েছেন। এইভাবেই হবে। সিপিএম জমানাতেও তাই আবার তৃণমূলের মুখোশ পরে যারা অন্য দলে চলে গেছেন সেসময় ও তাই। শ্রমিকদের স্বার্থ আমাদের দেখতে হবে। স্বপন দা হলদিয়া মেলায় সাহায্য করবে। আর হলদিয়ার ব্র্যান্ড ভ্যালু এখানকার কারখানা। ৫৪ টা কারখানার মধ্যে ১৮ টা বড় কারখানা। তাদের ৬০-৬৫ হাজার শ্রমিক। সকলে যাতে ভাল থাকেন সেই ব্যবস্থা করবে তৃণমূল।

Previous article‘ভারত জোড়ো’র পর এবার ‘হাত সে হাত জোড়ো’ কর্মসূচি কংগ্রেসের
Next articleদিল্লির পুরভোটেও বাঙালিদের বঞ্চনা, কেমন হল নির্বাচন