জীবন যুদ্ধে হার না মানার নাম পেলে, নামের পাশে সোনায় মোড়া তিনটি ট্রফি

পেলে, নামে পাশে তিন তিনটি বিশ্বকাপের ট্রফি। সেই সঙ্গে একের পর এক ট্রফি, সম্মান, রেকর্ড এবং অগণিত স্মৃতি।

ক্রীড়া জগতে আবারও নেমে এলো শোকের ছায়া। প্রয়াত পেলে। জীবনের কঠিন যুদ্ধে হার মানলেন ফুটবল জগতের সব থেকে বড় যোদ্ধা। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময়ে রাতে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী কিংবদন্তি। দীর্ঘদিন ধরে কোলন ক‍্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া গোটা বিশ্বে।

পেলে, নামে পাশে তিন তিনটি বিশ্বকাপের ট্রফি। সেই সঙ্গে একের পর এক ট্রফি, সম্মান, রেকর্ড এবং অগণিত স্মৃতি। পেলের প্রয়াণে শুধু ফুটবলের একটা যুগেরই শেষ হল না, অবসান হল পেলে বনাম মারাদোনার চিরাচরিত সেই লড়াইয়েরও। ২০২০ সালে শেষ নিশ্বাঃস ত‍্যাগ করেছিলেন মারাদোনা। আর বৃহস্পতিবার রাতে প্রয়াত হলে পেলে।

কথায় আছে, ব্রাজিলের ছেলেরা নাকি জন্মের পরেই নাকি প্রথম উপহার হিসেবে পায় একটি ফুটবল। বলে মাটিতে পা রাখলেও প্রথমে লাথি মারে ফুটবলে। ব্রাজিলের গলিতে গলিতে ফুটবল নিয়ে অনেকের সারা জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার ওই ফুটবল নিয়ে দেখে বড় হওয়ার স্বপ্ন। কিছু করার স্বপ্ন। পেলের জীবনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ২৩ অক্টোবর ১৯৪০ সালে ব্রাজিলের মিনাস জেরাইসে জন্ম হয়েছিল তাঁর। বাবা ছিলেন ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের ফুটবলার ডোনডিনহো। ছেলের নাম রাখেন এডসন আরান্তেস দি নাসিমেন্তো। ডাকনাম দেওয়া হয় ‘ডিকো’। বাবা ফুটবলার হলেও পেলের ছোটবেলা কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। বাবার দেখাদেখি পেলেরও ফুটবলের প্রতি ঝোঁক ছিল ছোট থেকেই। পড়াশোনায় ছিল না আগ্রহ। চায়ের দোকানে কাজ করে হাতখরচ জোগাড় করতেন। বাকি যে সময় পেতেন, রাস্তাতেই ফুটবল খেলা চলত। ছোটবেলায় বাউরু নামে একটি ক্লাবে খেলতে পেলে। এরই মাঝে ওয়ালদেমার দে ব্রিটোর নজরে পড়ে যান তিনি । ব্রিটোই তাঁকে নিয়ে যান ব্রাজিলের ঐতিহ্যশালী ক্লাব স্যান্টোসে। পেলেকে নিয়ে ব্রিটো এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, স্যান্টোসের কর্তাদের সরাসরি বলে দেন, ‘এই ছেলে একদিন বিশ্বের সেরা ফুটবলার হবে’। স্যান্টোসের কোচ লুলাও পেলের খেলা দেখে মুগ্ধ হন।

১৯৫৬-র জুনে প্রথম পেশাদার চুক্তি সই করেন পেলে। পেশাদার ক্লাবে সই করার ১০ মাসের মধ্যে জাতীয় দলে সুযোগ পান। ১৯৫৭ সালে জাতীয় দলে সুযোগ। ১৯৫৮ তে বিশ্বকাপ। সব থেকে কম বয়সে বিশ্বকাপে খেলার নজির গড়েন পেলে। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেন পেলে। সেটাও সব থেকে কম বয়সে। ফাইনালে সুইডেনের বিরুদ্ধে জোড়া গোল পেলেকে ব্রাজিলের অন্যতম সেরা ফুটবলারের আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৬২ সালেও বিশ্বকাপ জয় করেন পেলে। ১৯৭০ বিশ্বকাপ ছিল পেলের জীবনে শেষ এবং অন্যতম সেরা বিশ্বকাপ। ১৯৭১ সালে জাতীয় দল থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ৭৭ টি গোল করেছেন পেলে।

ক্লাব কেরিয়ার সময় দিয়েছেন শুধু স‍্যান্টোসেই। রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, ইন্টার মিলান-সহ একাধিক ক্লাব টাকার থলি নিয়ে পেলেকে সই করানোর জন্য বসে থাকলেও, ব্রাজিল ছেড়ে অন্য কোথাও খেলতে যাননি পেলে। অর্থকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি। দীর্ঘ ১৯ বছর স্যান্টোসে খেলেছিলেন পেলে। স‍্যান্টোসের ৬৩৬ ম্যাচে করেছিলেন ৬১৮ টি গোল। এরপর সই করেন আমেরিকার নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পযর্ন্ত কসমসের হয়ে খেলেন তিনি। কসমসের হয়ে পেলে ৬৪ ম‍্যাচে ৩৭ গোল করেছেন পেলে। ক্লাব কেরিয়ারে ৭০০ ম‍্যাচে ৬৫৫ টি গোল করেছেন পেলে।

পেলের সঙ্গে নাড়ির যোগ আছে কলকাতারও। ১৯৭৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে মোহনবাগানের একটি প্রদর্শনী খেলেছিলেন ফুটবলের সম্রাট। এরপর ২০১৫ সালেও কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। দখেছিলেন আইএসএলও।

আরও পড়ুন:প্রয়াত ফুটবল সম্রাট পেলে

 

 

Previous articleপ্রয়াত ফুটবল সম্রাট পেলে
Next articleপ্রয়াত ফুটবল সম্রাট, শোক প্রকাশ রোনাল্ডো-মেসি-নেইমার-এমবাপে-বেকহ‍্যামদের