গত ডিসেম্বরে শুভেন্দু অধিকারীর (Shubhendu Adhikari) পাড়ায় এক ঐতিহাসিক জনসভা থেকে ছোট্ট করে দরজা খুলে দেওয়ার একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। এবার কি তাহলে সেটাই সত্যি হতে চলেছে? সম্প্রতি একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই রাজনৈতিক মহলে সেই জল্পনা জোরদার হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের সোফায় বিজেপির তারকা বিধায়ক অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায় (Hiran Chatterjee)। তাঁর পাশেই বসে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি(Ajit Maiti)। আর হিরণ সেই জেলারই বিজেপি বিধায়ক।
একাধিক অসমর্থিত সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ছবিটি চলতি জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখের। সেদিন অজিত মাইতির সঙ্গে এসে নাকি অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরে প্রায় ৪০ মিনিট ছিলেন খড়গপুরের বিজেপির সেলিব্রিটি বিধায়ক।এখানেই শেষ নয়, সূত্রটি আরও জানাচ্ছে অভিষেকের সঙ্গে ইতিবাচক বৈঠকের পর বিমানবন্দরে হিরণকে পৌঁছেও দেন অজিতবাবু। ছিলেন আরেক বিজেপি বিধায়ক ও বেশ কয়েকজন বিজেপি নেত্রী। আর এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই হিরণের ঘরওপাসির জল্পনা শুরু হয়েছে। অভিষেকের ছোট্ট করে খুলে দেওয়া দরজা দিয়ে হিরণের তৃণমূলের ঘরে প্রবেশ নাকি সময়ের অপেক্ষা মাত্র?

বিষয়টি নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেও তোলপাড় শুরু হয়েছে। ২০২১-র ১৮ ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন হিরণ চট্টোপাধ্যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় অমিত শাহের উপস্থিতিতে হিরণরের হাতে বিজেপির পতাকা তুলে দেন তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। হিরণ ভোটে দাঁড়িয়ে জয়লাভও করেন। কিন্তু তারপর থেকেই যে দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপিতে গিয়েছিলেন হিরণ, সেই দিলীপ ঘোষের সঙ্গে লাগাতার মনোমালিন্য, গোষ্ঠীবাজির জেরে সম্পর্ক নষ্ট হয় দু’জনের মধ্যে। বিজেপিতে গিয়ে হিরণের অভিজ্ঞতা একেবারেই ভালো নয়। আবার খড়গপুর পুরসভা তৃণমূলের দখলে থাকায় হিরণ এলাকায় কাজের ক্ষেত্রে বিজেপি বিধায়ক হিসেবে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেন না।

সূত্রের খবর, ১০ জানুয়ারি অজিত মাইতির সঙ্গে অভিষেকের দফতরে এসে হিরণ তৃণমূলে ফেরার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে অভিষেকের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ মিটিং হয়। সেখানে যোগদানের দিনক্ষণ স্থির হয়। তবে এতদিন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোনও তরফে প্রকাশ্যে কিছু বলা হয়নি। এবার তৃণমূল দফতরে হিরণের বসে থাকার ”টাটকা” ছবি সামনে চলে আসায় শাসক দলের মুখপাত্র “জাগো বাংলা”-তে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি হয়তো বা ঘরওপাসি হতে পারে হিরণের। ওইদিন পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে অভিষেকের জনসভা। হিরণকে সেই মঞ্চে দেখা যেতে পারে। অভিষেকের হাত ধরে বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগদান করতে পারেন তিনি। সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের আরও কয়েকজন পরিচিত নেতা-নেত্রীর যোগদানের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল বলে জানা যাচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে তৃণমূল বা হিরণের তরফে কোনও মন্তব্য এখনও পর্যন্ত করা হয়নি। যদিও তৃণমূলের দফতরে অজিত মাইতির সঙ্গে সোফায় বসে থাকা হিরণের ছবিটি খুব সাম্প্রতিক সেটা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই নিশ্চিত।

অন্যদিকে, তৃণমূল দফতরে তাঁর টাটকা ছবি ভাইরাল হতেই খড়্গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ গতকাল রাতের দিকে একটি টুইট করেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি বিজেপির একটি সভায় ভাষণ দিচ্ছেন। বলছেন জয় শ্রীরাম হল সঞ্জীবন মন্ত্র। তা পোস্ট করে হিরণ লিখেছেন “আজ একটা পুরনো ভিডিও পোস্ট করলাম”। তবে ভাইরাল ছবিটি নিয়ে তিনি কোথাও কোনও মন্তব্য করেননি। ছবিটি নিয়ে কোথাও “অস্বীকার” করতেও দেখা যায়নি তাঁকে।

হিরণ একসময়ে তৃণমূল করতেন। যুব তৃণমূলের একটি পদেও ছিলেন বেশ কিছুদিন। তারপর বিজেপি। সেই বিজেপিও এখন তাঁর কাছে সম্ভবত অতীত। তাই “পুরনো ভিডিও” পোস্ট করার বিজেপিও যে তাঁর কাছে এখন “পুরনো” সেটাই বোঝাতে চাইছেন অভিনেতা-বিধায়ক। সব মিলিয়ে হিরণকে নিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে আচমকা রহস্য তৈরি হয়ে গিয়েছে।
