অন্ধকারের উৎস হতে, উৎপল সিনহার কলম

উৎপল সিনহা

খা কর জখ্ম দুয়া দি হমনে
বস্ ইউঁ উম্র বিতা দি হমনে ।

রাত কুছ এয়সে দিল দুখতা থা
য্যায়সে আস্ বুঝা দি হমনে ।

সন্নাটে কে শহর মে তুঝকো
বে-আবাজ সদা দি হমনে ।

হোশ যিসে কহতি হ্যায় দুনিয়া
উয়ো দিবার গিরা দি হমনে ।

ইয়াদ কো তেরি টুটকে চাহা
দিল কো খুব সজা দি হমনে ।

দেখকে যিসকো দিল দুখতা থা
উও তসবির জ্বলাদি হমনে ।

আ ‘ শাহজাদ ‘ তুঝে সমঝায়ে
ক্যুঁকর উম্র গঁবা দি হমনে ।।

( কথা : ফারহাত শাহজাদ ।
সুর ও কণ্ঠ : গুলাম আলি । )

রাগ ইমনে বাঁধা এই গজলটির একটি আশ্চর্য টান আছে । এ গানের পরতে পরতে গাঁথা বিষাদ ও ব্যর্থতার গ্লানি । কিন্তু গানটি শেষ হওয়ার পর এক দারুণ উপলব্ধি হয় । মনে হয় ব্যর্থ প্রণয়ের আঘাত কখনো কখনও যেন আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয় । অপ্রাপ্তি ও ব্যর্থতা যেন জীবনকে চিনিয়ে দেয় ভোরের আলোর মতো ।
যন্ত্রানুষঙ্গে এই গানে বাঁশির অনবদ্য ব্যবহার গানের বেদনাকে অপরূপ এক প্রতিষ্ঠা দিয়েছে । এই গানের মূল কথা তো প্রেমে ব্যর্থতার ইতিহাস বর্ণনা ।

আঘাত এখানে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে । দ্বিতীয়বার আর ও মুখো হয়নি জীবন । যন্ত্রণার সেই রাতে আশার সমস্ত দীপ নিভে গেছে । শান্ত সুন্দর নিরালা শহরে সবসময়ই বেসুরে বেজেছে কবির কাতর নিবেদন। বিশ্বাসের দরজা চিরদিনের জন্য ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে । জীবন বর্ণহীন হয়ে গেছে । স্মৃতিতে আচ্ছন্ন অবুঝ হৃদয় কঠোর সাজা ভোগ করেছে । একজন চরম ব্যর্থ , চূড়ান্ত হতাশ ও নিঃসীম নিঃসঙ্গ প্রেমিকের করুণ উপাখ্যানের শেষে এই হাহাকার নিয়ে কীভাবে জীবন কেটে গেলো তারই স্বরলিপি লিখেছেন কবি ‘ শাহজাদ’।
আঘাতেই তো জন্ম সুরের । অশান্তির আঘাত ছাড়া কীভাবেই বা বাজতো বীণা ?

আপাত নেতিবাচক এই গজলটি কি কোনোভাবেই কোনো প্রেরণা যোগায় না ? মনের অতল অন্ধকারে কি কোনো আলোর দিশা দিতে পারে না এই গানটি ?

পারে , অবশ্যই পারে । দিতে পারে এক অন্যরকম আলোর সন্ধান । যা ব্যাপ্তিতে অসামান্য । নেতি দিয়ে নেতি নাশ হয় যে । যেমন বিষে বিষক্ষয় । এ গানের অন্তেও সেই আশ্চর্য উপলব্ধির দরজা খোলে । যা একই সঙ্গে নির্মোহ এক ভাবের জন্ম দেয় । বাসনানিস্পৃহ এই মহৎ অনুভূতি নতুন পথের দিশা দেয় । ভেঙে পড়া হৃদয় আবার নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ।

এক ব্যর্থতা আর এক ব্যর্থতাকে চাপা দেয়, ভুলিয়ে দেয়। আর অন্ধকার ?
অন্ধকারেরও নানা রঙ হয় । হালকা , জমাট , গভীর , অগভীর , ফিকে , নিকষ এইসব নানা রঙ ।
ছায়াছবি পথের পাঁচালীতে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে অতি দরিদ্র এক পরিবারের জীবনযুদ্ধ গহন অন্ধকারেও আলোর দিশা দেয় । যে ছবির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ব্যর্থতা , যন্ত্রণা ও শোকের হাহাকার । ছোট্ট দুর্গার মৃত্যুর পরে সর্বজয়ার সংসারে যেন স্হায়ী আঁধার নেমে আসে । চিরদিনের বসতবাড়ি ছেড়ে অপুরা পাড়ি দেয় অন্যত্র । চোখের জলে শেষ হয় ছবি । তবু দুঃখ -শোকের আবহ ভেদ করে কোথাও যেন জীবনের অমোঘ বাস্তবতা বুঝে নিতে এক ধরনের প্রত্যয় তৈরি হয় বুকের ভেতরে । হাহাকারের মাঝে , একবুক শূন্যতার প্রান্তরে দাঁড়িয়েও মনে হয় এই শোক-তাপ-মৃত্যু ও জীবনযন্ত্রণার অন্য তীরে রয়েছে এক অনন্য জীবন , এক সীমাহীন শুশ্রূষা ।
ক্রমশ ভাঙতে ভাঙতে একেবারে খণ্ডবিখণ্ড হওয়ার পর নতুন করে গড়ে নেওয়ার সুর যেন শুনতে পাওয়া যায় বাস্পীভূত বাতাসে । মাটিতে পাওয়া যায় মন কেমন করা সোঁদা গন্ধ । এই অনুভুতির নাম বোধহয় বিষে বিষক্ষয় ।হরিহরদের অপরিসীম দুঃখ ও বেদনার কাছে নিজেদের সংসারযন্ত্রণা তুচ্ছ মনে হয় । তখনই দমে থাকা মন ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ পায় । দু্ঃখের পথেই বোধহয় দুঃখকে অতিক্রম করা যায় ।

ধ্বংসের বুকে দাঁড়িয়েও নতুন আশায় বুক বাঁধতে ভালোবাসে মানুষ । ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খোঁজে । বিষাদ , শোক ও বিপন্নতার অন্ধকার থেকেও উজ্জীবনের প্রেরণা খুঁজে নেয় দুর্গত মানুষ । নিকষ আঁধারেও সকলে খোঁজে কান্তিময় অভ্রভেদী আলো । পেয়েও যায় । যদি না পেতো তাহলে মৃত্যুর অনিবার্য অভিঘাতে বিদীর্ণ হয়েও গান বাঁধতো না মানুষ , কবিতা লিখতো না , ছবিও আঁকতো না ।

গজলে ভূমিকা বা মুখবন্ধ থাকে । এই গানের ভূমিকায় কী বলছেন আহমদ ফারাজ সাহেব ? দেখা যাক ।

করুঁ না ইয়াদ মগর
কিস্ তরহ ভুলাউঁ উসে
গজল বাহানা করুঁ
ঔর গুনগুনাউঁ উসে ।

বো খার খার হ্যায়
শাখ-এ-গুলাব কি মানিন্দ
ম্যায় জখ্ম জখ্ম হুঁ ফিরভি
গলে লগাউঁ উসে ।

ভুলতে চাইলেই কি ভোলা যায় ? গজল তো ছলমাত্র । আসলে সবটাই তার স্মৃতিচারণ । কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হয়েও গোলাপকে সমাদরে বরণ করি আমরা ।

ভালোবাসা যদি হয় মহৎ আলো , তাহলে বলতেই হয় অসফল ভালোবাসা মহোত্তম আলো । বিরহের বিশাল আকাশে মিলন যেন মিটমিটে এক তারা মাত্র । ব্যর্থ প্রেম জীবনের মহোত্তম উপলব্ধি। ব্যর্থতার গহন অন্ধকার থেকে উৎসারিত যে আলো তা প্রকৃতই কান্তিময় । দিক নির্দেশক । নেতির ক্ষমতা অসীম, অনিঃশেষ ।

অতলান্তিক নেতিই বিশুদ্ধতম ইতির উৎসমুখ ।

আরও পড়ুন- SSC Recruitment: নবম-দশমে ১৩৮৪২ টি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগে তৎপরতা রাজ্যের

Previous articleBreakfast news : ব্রেকফাস্ট নিউজ
Next articleমোদির তথ্যচিত্র প্রদর্শন মুম্বইয়ের টাটার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও! বি*ক্ষোভ বিজেপির