কৃষক থেকে মৎসজীবী: রাজ্য বাজেটে সুফল সবার

বুধবার বিধানসভায় (Assembly) রাজ্য বাজেট (Budget) পেশ করলেন অর্থ দফতরের স্বাধীন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya)। এদিন বাজেট পেশের সময় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন তিনি। একদিকে যেমন কৃষকদের জন্য দরাজ মুখ্যমন্ত্রী ঠিক তেমনই চা শ্রমিক ও মৎস্যজীবীদের জন্য বাজেটে বড়সড় ঘোষণা করেছেন। তারই প্রমাণ পাওয়া গেল এদিনের বাজেটে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে চলতি অর্থবর্ষে যে বাজেট পেশ করেছে তা দেখে কৃষক তথা দিন আনা খেটে খাওয়া মানুষরা যেমন নিরাশ হয়েছিলেন কিন্তু বুধবার রাজ্য বাজেট পেশের পর হাসি চওড়া হল সেই সমস্ত মানুষদের।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য কোন খাতে ঠিক কত টাকা বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

কৃষিজ বিপনন বিভাগ: 

 কৃষিজ বিপণন বিভাগে গতবারের বাজেটে বরাদ্দ হয়েছিল ৪০৩.৩০ কোটি টাকা। এবারের রাজ্য বাজেটে ৪১৩.৪৩ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

২০২২-২৩ বর্ষে সেচও কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন:

২০২২-২৩ বর্ষে সেচও কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন সরকার করেছে। কৃষকদের জন্য একাধিক প্রকল্প সরকার গ্রহণ করেছে। কৃষকদের জন্য শস্য় বিমা প্রকল্প তার অন্যতম। এতে কৃষকরা সুবিধা পেয়েছেন। ভুট্টা চাষে উৎসাহ বেড়েছে। ডাল ও তৈলবিজের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

কৃষি বিভাগ: 

কৃষি বিভাগে গত আর্থিক বছরে বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ৯৩১ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে সেখানে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ৯৫৯৫.৩২ কোটি টাকা অর্থাৎ বিপুল বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে কৃষি খাতে।

 শিল্প, বাণিজ্য ও শিল্পোদ্যোগ বিভাগ: 

 এই খাতে ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের জন্য বাজেট বরাদ্দ হয়েছে ১৩৯৭.১৪ কোটি টাকা। যা গতবারে ছিল ১৩৪৬.৫৩ কোটি টাকা।

এমএসএমই সেক্টর:

বাজেটে এমএসএমই সেক্টর সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের দিশা দেখানো হয়েছে। এই খাতে ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১২১৮.২১ কোটি টাকা। যা গত বছরে ছিল ১১৫৯.৯৯ কোটি টাকা।

পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগ:

পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগে আগামী আর্থিক বছরের জন্য এই খাতে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ২৬,৬০৩.৫১ কোটি টাকা। যা আগের বার ছিল ২৫৮১৮.৮৩ কোটি টাকা।

‘রাস্তাশ্রী’ প্রকল্প: 

গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে রাস্তাশ্রী প্রকল্প. যেখানে ১১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বাজেটে।

‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্প:

এদিন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, কৃষিক্ষেত্রে রাজ্যের ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্প আগে থেকেই চালু ছিল। সেই প্রকল্পকে এবারে পুনর্গঠন করে নবরূপে ‘কৃষকবন্ধু’ নাম নতুন করে চালু হয়েছে বলে জানান অর্থ প্রতিমন্ত্রী। এই বছর পাঁচ দফায় নতুন করে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ৩০ লক্ষ কৃষকের নাম ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে নথিভুক্তও করা হয়েছে। এছাড়া এর আওতায় থাকা ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী কোনও কৃষকের মৃত্যু হলে তার পরিবারের হাতে এককালীন ২ লক্ষ আর্থিক সহায়তা  দেওয়া হবে।

কৃষকদের জন্য পেনশন:

এছাড়াও বার্ধক্যজনিত পেনশন বা FOAP আওতায় থাকা কৃষকবন্ধুরা যে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে পাচ্ছেন সে কথাও তিনি চন্দ্রিমা। তিনি আরও জানিয়েছেন, কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলায় কৃষিজ উৎপাদনে জোয়ার এসেছে। সেই কারণেই আমাদের রাজ্য ধান, পাট ও মেস্তা উৎপাদনে ভারতের মধ্যে প্রথম। আলু উৎপাদনে রাজ্য দ্বিতীয়। ভুট্টা উৎপাদনে চাষের জমি ২.৪৫ হেক্টর লক্ষ থেকে বেড়ে ৩.৬৮ হেক্টর লক্ষ হয়েছে। একইভাবে ডাল এবং তৈলবীজ উৎপাদনের উপযোগী জমির পরিমাণও বেড়েছে।

মৎসজীবীদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ:

পপাশাপাশি বাজেটে রাজ্যের মৎসজীবীদের জন্য নয়া প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে। এবার থেকে মৎস্যজীবীদের অকাল মৃত্যু হলে তাঁদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে এককালীন আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। সুন্দরবন-সহ রাজ্যের অন্যান্য জেলা মিলিয়ে এ রাজ্যে এক বিরাট সংখ্যক মৎসজীবীর বসবাস। এই মৎসজীবীদের উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তাঁদের সমস্যার প্রতি বরাবরই সহানুভূতিশীল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। আর সেকারণেই ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের বাজেটে সেই সব মৃতদের পরিবারগুলির জন্য এককালীন ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

চা বাগান ও চা শ্রমিদের জন্য বড়সড় ঘোষণা:

রাজ্য বাজেটে চা বাগান ও শ্রমিকদের কর ছাড়ের ঘোষণা রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর। লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে কর ছাড় দেওয়া হবে। চা শিল্পকে উৎসাহ দিতে একাধিক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আগামী অর্থবর্ষে চা বাগানের উপর আয়কর ছাড়ের ঘোষণা। কৃষকদের সুরাহা দিতে মিউটেশন ফি মকুবের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কৃষিকাজের জলে ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে খবর। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের বিলি করা হবে পাট্টাও। এছাড়া স্থায়ী চা শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

 

 

Previous articleজঙ্গলমহল সফরে পশ্চিম মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রী, আগামিকাল ২ জেলায় সভা
Next articleহায়দরাবাদের কাছে ম‍্যাচ হেরে কী বললেন বাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো?