সাগরদিঘিতে পরাজয়: কারণ বিশ্লেষণে বৈঠকে তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব

গত একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে সুব্রত সাহা জয়ী হলেও সাগরদিঘি উপনির্বাচনে প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়ে যায় তৃণমূল। ৪৭.৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট।

সাগরদিঘি উপনির্বাচনে পরাজয়। চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে বৈঠক জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। শুক্রবার, তৃণমূল (TMC) কার্যালয়ে ওই বৈঠকে জঙ্গিপুর (Jangipur) সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি খলিলুর রহমান, জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান কানাই মণ্ডল, বিধায়ক মহম্মদ আলি, আশিস মার্জিত, জঙ্গিপুর পুরসভার চেয়ারম্যান, তৃণমূল শিক্ষক নেতা মহম্মদ ফুরকান, রাজীব হোসেন, গৌতম ঘোষ-সহ বিভিন্ন তৃণমূল পর্যবেক্ষক এবং কো-অর্ডিনেটররা উপস্থিত হন।

সাগরদিঘি (Sagardighi) বিধানসভার উপনির্বাচনে মোট ১১টি পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে থাকা সত্ত্বেও কীভাবে একটি পঞ্চায়েতেও সর্বোচ্চ ভোট পেল না দল- সে বিষয়টি উঠে আসে আলোচনায়। কীভাবে বাম-ডানের সঙ্গে জোট বাঁধল BJP! সেই প্রসঙ্গে প্রত্যেকে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন। পাশাপাশি, বহিরাগতদের স্থানীয় মানুষ কী কারণে সমর্থন করল? সেই বিষয়ে আলোচনা চলে।

সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে পর্যদুস্ত হয়েছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার, ভোট গণনার শেষে মাত্র ১৪ শতাংশ ভোট পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় পদ্ম শিবিরকে। তবে গত একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে সুব্রত সাহা জয়ী হলেও সাগরদিঘি উপনির্বাচনে প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়ে যায় তৃণমূল। ৪৭.৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। গত ২০১১ সালে মুর্শিদাবাদ জেলায় সাগরদিঘির আসনে জয়ী হয়ে তৃণমূলের প্রথম খাতা খুলেছিলেন সুব্রত সাহা। ২০১৬ সালে ২৬.৩৩ শতাংশ ভোটকে পেয়ে তৃণমূলের টিকিটের জয়ী হন সুব্রত। সেই সময় ২৩.১৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস। গত ২০২১ সালের বিধানসভার ভোটে প্রায় ৫১ শতাংশ ভোটে জয়ী হন সুব্রত সাহা। সেই সময় ২৪ শতাংশের কিছু ভোট পেয়ে বিজেপি ছিল দ্বিতীয় স্থানে। মাত্র ১৯ শতাংশ ভোট পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল কংগ্রেসকে। সেই কংগ্রেস এবার ৪৭.৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বিজেপি প্রার্থী দিলীপ সাহা নিজেই স্বীকার করে বলেন, বিজেপির ভোট কংগ্রেসের দিকে চলে গিয়েছে বলে তিনি মনে করছেন।

অন্যদিকে, সাগরদিঘি উপনির্বাচনে পরাজিত হলেও ভেঙে পড়েনি তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলকে আরও শক্তিশালী করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে জেলা তৃণমুল শিবির। জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি মিশে একজোট হয়ে গিয়েছে সেটা তিনি বুঝতে পারেননি। আগামী দিনে দলের রূপরেখা নির্ধারণে বৈঠক হচ্ছে। রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পের সুবিধা নিয়েও মানুষ কেন বিমুখ হল তার পর্যালোচনা চলবে কয়েকদিন ধরেই। জঙ্গিপুর জেলা সাংগঠনিক তৃণমূল চেয়ারম্যান কানাই মণ্ডল বলেন, মেরুকরণের ভোট হয়েছে সাগরদিঘিতে বলেই তিনি মনে করছেন। তবে নিজেদের ভুল শুধরে নিয়ে সংগঠনকে আরও মজবুত করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে তৃণমূল। তিনি বলেন, ২০২১-এ বিজেপি যে ভোট পেয়েছিল সেই ভোট উপ নির্বাচনে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেল। বাকি প্রায় ২০ হাজার ভোট কংগ্রেসের ঝুলিতে পড়েছে বলেই মনে করছেন তিনি। কেননা সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ভোট প্রচারে গিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের অশুভ আঁতাঁত তুলে ধরেছিলেন। ভোটের দিন কংগ্রেস এবং বিজেপির দুই প্রার্থীকে ভোট কেন্দ্রের সামনে হাত মেলাতে দেখা গিয়েছে। তৃণমূলকে হারাতে বিজেপি কংগ্রেসের সঙ্গে যে হাত মিলিয়ে ছিল সেটাই স্পষ্ট হয়ে গেল। রবিবার বহরমপুরে বৈঠকে বসতে চলেছে তৃণমূল। এ বিষয়ে বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি শাওনি সিংহ রায় বলেন, তাঁর অধীনস্থ সমস্ত তৃণমূল ব্লক সভাপতি এবং টাউন তৃণমূল সভাপতিদের সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক হবে।

 

 

Previous articleপরীক্ষার্থীর মায়ের কোল আলো করে ‘অঙ্ক’ !
Next articleভোট পরবর্তী সন্ত্রা*সে উত্তপ্ত ত্রিপুরা