কোভিড ভ্যাকসিনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ব্যবহৃত অ্যাডিনোই আজ ‘শিশুঘাতী ভিলেন’

বিপদের দিনে বন্ধু হিসেবে হাত বাড়িয়েছিল যে, দিনের শেষে সে হয়ে উঠল প্রধান শত্রু। মারণ ভাইরাস থেকে বহু মানুষকে প্রাণে বাঁচানো অ্যাডিনোই(adenovirus) রাতারাতি হয়ে উঠল শিশুঘাতী ভিলেন। করোনা(Covid) প্রকোপ যখন বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছিল সেই সময় দেশে দেশে ব্যাপক হারে চলে টিকাকরণ কর্মসূচি(vaccination)। আর এইসব টিকাই তৈরি হয় অ্যাডিনো দিয়ে। করোনা টিকায় অ্যাডিনো ব্যবহারের অন্যতম কারণ ছিল মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দৃঢ় করতে পারা। তবে দিনের শেষে এই অ্যাডিনও এখন হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় শত্রু। গত কয়েক দিনে এই ভাইরাসের প্রাণঘাতী ক্ষমতা দেখে নিয়েছে দেশ তথা রাজ্য।

করোনা টিকা তৈরীর ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ‘ভেক্টর ভাইরাস’ হিসেবে ব্যবহার করা হবে অ্যাডিনোকে। আর সেই পরিকল্পনা কার্যক্ষেত্রে ব্যাপক সফলও হয়েছিল। বর্তমান সময়ে করোনার বাড়বাড়ন্ত কার্যত থমকে যাওয়ার ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে। তবে এই মুহূর্তে মাথা ছাড়া দিয়েছে অন্য সমস্যা। অ্যাডিনো ভাইরাসের জেরে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। ভিডিও বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ভাইরাসকে যতটা প্রাণঘাতী হিসেবে দেখানো হচ্ছে এটি ততটাও ক্ষতিকর নয়। অবশ্য অসংখ্য ‘তুতো ভাইবোন’ নিয়ে এর সংসার যথেষ্টই বড়। ডিএনএ ভাইরাসগুলির মধ্যে কার্যত একমাত্র অ্যাডিনোই মানবদেহে নানা ধরনের রোগ তৈরি করে। উদাহরণ হিসেবে কনজাংটিভাইটিসের কথা বলা যায়। জয় বাংলা, চোখ ওঠা, চোখ লাল রোগ ইত্যাদি নানা নামে একে চেনে বাঙালি। এসেবর মূলে থাকে অ্যাডিনো ভাইরাস। আবার টনসিলাইটিস অর্থাৎ টনসিলে সংক্রমণের পিছনেও রয়েছে অ্যাডিনোর অন্য স্ট্রেইন। বছরের পর বছর এই ভাইরাসের সংক্রমণ মানুষের শরীরে হয়েছে এবং তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও তৈরি হয়েছে।

কারণে করোনার টিকা তৈরির সময় অ্যাডিনোকে ‘ভেক্টর ভাইরাস’ হিসেবে ব্যবহার নিয়ে কিছু সংশয়ও দেখা দিয়েছিল। আগে থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়ে থাকার কারণে ‘ভেক্টর ভাইরাস’ হিসেবে অ্যাডিনোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেই সমস্যা এড়াতে শিম্পাঞ্জির শরীরে রোগ ছড়াতে পারে, এমন অ্যাডিনো ভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছিল টিকা তৈরির ক্ষেত্রে। এভাবে তৈরি হয় অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড। পরবর্তী কালে অবশ্য স্পুটনিক ভি সহ একাধিক টিকা তৈরির ক্ষেত্রে মানব শরীরে সংক্রমণ তৈরি করে, এমন অ্যাডিনোই ব্যবহৃত হয়।
তাহলে হঠাৎ ভিলেন কেন অ্যাডিনো? বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, করোনা নিয়ে এমন আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে ভাইরাস শুনলেই ভয় চেপে বসছে। সেই সঙ্গে দু’বছর মাস্ক ব্যবহার সহ নানা কারণে অ্যাডিনো তো বটেই, ইনফ্লুয়েঞ্জাও বড় আকার নিতে পারেনি। গড়ে ওঠেনি ‘হার্ড ইমিউনিটি’। সেই কারণে বয়স্কদের বদলে খুব কমবয়সি শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন ডিরেক্টর প্রতীপ কুণ্ডু বলেন, এটা ঘটনা যে করোনা প্রতিরোধে যে বন্ধু ছিল, সে-ই এখন শত্রুর বেশে হাজির হয়েছে। মাঝখানে অনেকটা সময় সেভাবে অ্যাডিনোর সংক্রমণ দেখা যায়নি। সেই জন্য কিছুটা বাড়াবাড়ি প্রকোপ দেখা যাচ্ছে এখন। তবে বিষয়টি খুব উদ্বেগজনক নয়।

Previous articleশরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধানই লক্ষ্য! শীঘ্রই নয়া আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা ব্রিটেনের
Next articleউচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দিনগুলিতে সমস্ত শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর ছুটি বাতিল