মমতার ধর্নার দিনই ‘গা জোয়ারি’! বঙ্গ বিজেপির পথে নামার সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রশ্ন

কেন্দ্রীয় প্রকল্পে প্রাপ্ত অর্থের হিসাব দিল্লিকে না দেওয়ার অভিযোগে আগামী বুধবারই ধর্নায় বসতে চলেছে বিজেপি। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে বিজেপির এই ধর্না কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

মঙ্গলবার ওড়িশা যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) জানিয়েছিলেন, আগামী বুধ এবং বৃহস্পতিবার আম্বেদকরের মূর্তির সামনে তিনি দু’দিনের ধর্নায় (Dharna) বসবেন। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা সহ বাংলার বিরুদ্ধে একাধিক কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ অনেক আগে থেকেই জানিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। বারবার কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েও লাভের লাভ কিছুই হয়নি। আর সেই দাবি আদায়ের লক্ষ্যেই এবার ধর্নায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো (TMC Supremo)। কিন্তু সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election)। আর তার আগেই রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে এবার একের পর এক পরিকল্পনা করে সরকার বিরোধী কাজ করে খবরের শিরোনামে আসতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি (BJP)। আগেভাগেই বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতারা বুঝেছেন যাই হোক, যে কোনও উন্নয়নমূলক কাজে যেভাবেই হোক সরকারের বিরোধিতা করা। আর সেই পথে হেঁটেই একাধিকবার ঘরে ও বাইরে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে বঙ্গ বিজেপির নেতা কর্মীদের। তবুও তাঁদের হুঁশ ফেরেনি।

আর সেই পথে হেঁটেই বৃহস্পতিবার রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপি পরবর্তী কর্মসূচীর কথা ঘোষণা করল। এদিন দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য (Shamik Bhattacharya) ও রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় (Jagannath Chattopadhyay) কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সাফ জানালেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে প্রাপ্ত অর্থের হিসাব দিল্লিকে না দেওয়ার অভিযোগে আগামী বুধবারই ধর্নায় বসতে চলেছে বিজেপি। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে বিজেপির এই ধর্না কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder) এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ওড়িশা যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, আগামী বুধ এবং বৃহস্পতিবার আম্বেদকরের মূর্তির সামনে তিনি দু’দিনের জন্য ধর্নায় বসবেন। এর আগে এবং একাধিক সময়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব কেন্দ্রের হাতে তুলে দিয়েছে রাজ্য। বারবার কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরা সরজমিনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পরিদর্শন করলেও কোনও গরমিল তাঁদের চোখে পড়েনি। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট নন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। কীভাবে কোনও অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও বাংলার অগ্রগতিকে আটকে দেওয়া যায় তার চেষ্টায় প্রতিদিনই একের পর এক ঘুঁটি সাজাচ্ছেন এবং তা কার্যত মাঠে মারা যাচ্ছে। তবুও আটঘাট বেঁধে মাঠে নামার কৌশল থেকে পিছু হঠছেন না বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতারা।

বৃহস্পতিবার রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, গত দশ বছরে পাওয়া কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ৫ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে ২ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকার হিসাব দেয়নি রাজ্য। অবিলম্বে রাজ্যের এই হিসাব দেওয়া উচিত। এই নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। সেই সঙ্গে আমরা পথে নামতে চলেছি। টানা আন্দোলন চলবে। একইসঙ্গে তিনি জানান, পুলিশ ওই দিন ধর্নায় বসার অনুমতি না দিলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব। তবে শুধু ধর্না কর্মসূচিই নয়। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। ২৭ মার্চ, সোমবার রাজ্যের সব জেলাশাসকের দফতরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে স্মারকলিপি জমা দেবে বিজেপি। পরের দিন, মঙ্গলবার বিজেপির কিষান মোর্চার নেতৃত্বে কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করবেন দলের কৃষক কর্মীরা। এছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ রামনবমী। একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ওই দিন মিছিলের ডাক দিয়েছে। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, এপ্রিলেও ঠাসা কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। তবে ঢালাও কর্মসূচি ঘোষণা করলেও আখেরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সত্যিই কী লাভের লাভ কিছু হবে নাকি যা কিছু করেও হোক রাজ্যে অশান্তির আবহ তৈরি করতে চাইছে বিজেপি? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।

 

 

Previous article ‘‌মৌসুমী কয়াল ছিলেন তাপস মণ্ডলের এজেন্ট’‌, ম্যাজিশিয়ান কুন্তলের মুখে নতুন নাম
Next articleআইআইটি- তে গো-বিজ্ঞান! জাতীয় সম্মেলনে গরু নিয়ে জ্ঞান দান কেন্দ্রের