Monday, November 10, 2025

চাকরি চুরিতে ফেঁসে দুর্বল চিত্রনাট্য সুজনের স্ত্রী শান্তি-কন্যা মিলির

Date:

চাকরি কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গিয়ে হালে পাণি পাচ্ছেন না সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি চক্রবর্তী। ফলে কেলেঙ্কারি ঢাকা দিতে গিয়ে নানা রকম ভনিতার আশ্রয় নিতে হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু সেই চিত্রনাট্য বড়ই দুর্বল। একদল “অশিক্ষিত”, “চুনোপুঁটি”, “কাল কা যোগী”, “চার আনা” ফেসবুক নেতাদের মাঠে নামিয়ে যেমন বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন মিলিদেবী, ঠিক একইভাবে অপকর্ম ঢাকতে চাকরি চুরির সময়কালে তাঁর সঙ্গে সুজনবাবুর বিয়ে হয়নি বলেও বাজার গরম করার চেষ্টা করছেন মিলি চক্রবর্তী।

কিন্তু মিলিদেবী বিয়ের আগেও আপনার একটি বড়সড় সিপিএম ব্যাক গ্রাউন্ড ছিল। কী সেই পরিচয়? মিলিদেবী শান্তিময় ভট্টাচার্যর কন্যা। কে এই শান্তিময় ভট্টাচার্য? বাম আমলে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক। যাঁর কথায় জেলায় বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খেত। প্রয়াত হোলটাইমার শান্তিময় ভট্টাচার্য একজন প্রভাবশালী এবং দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা ছিলেন।

এহেন মিলি চক্রবর্তী ঘুরপথে চাকরি পেয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে কী বলছেন তিনি? মিলি চক্রবর্তীর বক্তব্য, “নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখে কলেজে চাকরির আবেদন করেছিলাম। তখন লিখিত পরীক্ষার নিয়ম ছিল না। নিয়ম মেনে, প্রিন্সিপালের ঘরে ইন্টারভিউ দিয়ে ওই চাকরি পেয়েছিলাম।”

মিলি চক্রবর্তী নিজেই বলছেন, প্রিন্সিপালের ঘরে ইন্টারভিউ দিয়ে ওই চাকরি পেয়েছিলেন। তাহলে প্ৰশ্ন উঠছে, চাকরির বিজ্ঞাপন যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে তো আরও অনেকে ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন। উত্তরে সুজনবাবুর স্ত্রী বলছেন, “খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির আবেদন করি। চাকরির জন্য দীনবন্ধু অ্যান্ডজ কলেজে আবেদন করি। সেখানে একটা ইন্টারভিউ বোর্ড হয়। ইন্টারভিউ বোর্ড আমার পরীক্ষা নেয়। তার ভিত্তিতে আমার কাছে আবেদনপত্র আসে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়ে জয়েনিং লেটার নিয়ে জয়েন করি। যে জয়েনিং লেটার নিয়ে এত বাজার গরম করা হচ্ছে। পরে শুনেছিলাম, প্রিন্সিপাল বলেছেন, ইন্টারভিউতে আমি ফার্স্ট ব়্যাঙ্ক করেছি।”

আর সেই জায়গাতেই প্রশ্ন উঠছে, মিলিদেবীর জন্য চিরকুট কে পাঠিয়ে ছিলেন? খেই হারিয়ে তিনি বলছেন, “জয়েনিং লেটারের ইংরাজিটা পড়ে অন্তত মানে বোঝা উচিত। সেখানে তো মিলি ভট্টাচার্য আছে। আমি বিয়ের অনেক আগে চাকরি করি। সুজন চক্রবর্তীর নামটা কীভাবে এখানে যুক্ত হল? ওঁরা যখন বলছেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, কে সুপারিশ করেছিল সেটা বের করুন। আমি তাঁর মুখোমুখি হতে রাজি আছি!”

মিলিদেবী সুজনবাবুর সঙ্গে তখন নয় আপনার বিয়ে হয়নি। কিন্তু আপনার বাবার নাম তো তখনও শান্তিময় ভট্টাচার্য ছিল। যিনি বাম আমলে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক। যাঁর কথায় জেলায় বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খেত। হোলটাইমার শান্তিময় ভট্টাচার্য তখন প্রভাবশালী এবং দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা ছিলেন! তাই নয় কি? হতেই পারে বাবার সুপারিশে মেয়ের চাকরি হয়েছিল! সেক্ষেত্রে হয়তো চিরকুটও ব্যবহার করা হয়নি। মুখের কথাতেই প্রিন্সিপালের ঘরের মধ্যে লোকদেখানো ইন্টারভিউতে চাকরি হয়েছিল।

এটা গেল একটি দিক। দুর্বল চিত্রনাট্যের আরেক দিক কিছু চুনোপুঁটিকে বাজারের ছেড়ে দিয়ে অশিক্ষিতের মতো ভুলভাল কথা বলে ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।
সিপিএমের দু’চার পিস কচি ফেসবুক নেতারা প্রশ্ন তুলেছে, ১৯৮৭ সালের জয়েনিং লেটারে কীভাবে KOLKATA-84 লেখা স্ট্যাম্প? মনে রাখতে হবে জয়েনিং লেটার, যেটা সামনে এসেছে তা সঠিক বলে স্বীকার করে নিয়েছেন মিলি চক্রবর্তী ও তাঁর স্বামী সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। আর বাকি রইল ১৯৮৭ সালের জয়েনিং লেটারে কীভাবে KOLKATA-84 লেখা স্ট্যাম্প? যেটি সামনে এসেছে, সেটি একটি জেরক্স কপি। যেখানে ২০২০ সালে যিনি অ্যাটেস্টেড করে ছিলেন তাঁর সই ও স্ট্যাম্প। আচ্ছা বলুন তো, ধরা যাক কেউ একজন ২০০০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন এবং পাস করেছিলেন। ২০২৩ সালে কোনও কারণে তিনি তাঁর মাধ্যমিকের সেই সার্টিফিকেট অ্যাটেস্টেড করাতে গিয়েছেন। যিনি অ্যাটেস্টেড করলেন, তিনি তো যেদিন অ্যাটেস্টেড করলেন সেই দিনের তারিখ দেবেন, নাকি যে সালে মাধ্যমিক পাস করেছিল সেই বছরের তারিখ দেবেন? মিলি চক্রবর্তী ২০২১ সালে অবসর নিয়েছেন। সেই কারণে একবছর আগে তাঁর চাকরি সংক্রান্ত নথি তিনি অ্যাটেস্টেড করিয়েছিলেন। যিনি অ্যাটেস্টেড করেছিলেন, তিনি সেই দিনের উল্লেখ্য করে সই করেছেন। আর ২০২০ সালে CALCUTTA হয়ে গিয়েছে KOLKATA, তাই স্টাম্পেও KOLKATA হবে সেটাই স্বাভাবিক।

Related articles

১ ডিসেম্বর থেকে নয়া হারে আবগারি শুল্ক কার্যকর! রাজ্যে কত হচ্ছে সুরার দাম

শীতের শুরুতে মৌতাতের পরিকল্পনা করলে, সেই আনন্দে কিছুটা ধাক্কা। কারণ পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) বাড়ছে সব ধরনের মদের  দাম...

অচলায়তন ভেঙে মুক্ত চিন্তাভাবনার অঙ্গন হবে বাংলা: রাখি-রিয়াকে শুভেচ্ছা তরুণদের আইকন অভিষেকের

তিনি যুব সমাজের আইকন। তৃণমূলের (TMC) সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) ঘিরে সব সময়ই তরুণ প্রজন্মের জনজোয়ার। আর...

পাঁচবারের কাউন্সিলর, তবু নাম উড়ে গেল ভোটার তালিকা থেকে! চাঞ্চল্য খড়দহে

শেষবার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। সেই তালিকায় তাঁর নাম যে ছিল, তার প্রমাণ, সেবার তিনি কাউন্সিলর (councilor) নির্বাচিত...

চেন্নাই ছেড়ে দিচ্ছে জাদেজাকে! জল্পনার মধ্যেই উধাও ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলও

আগামী ১৫ ডিসেম্বর আইপিএলের মিনি নিলাম(IPL Mini Auction 2026) হতে পারে। গত বছরই মেগা নিলাম হয়েছে। ফলে সব...
Exit mobile version