নি*হত কয়লা মাফিয়া রাজুর হোটেলেই নভেম্বরে বৈঠক-রাত্রিবাস করেছিলেন কেন্দ্রের কয়লা মন্ত্রী!

দিলীপ ঘোষ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কয়লা মাফিয়া রাজুর হাতে বিজেপির পতাকা তুলে দেন। এরপর গত বিধানসভা ভোটে।একাধিকবার বিজেপির প্রচারে তাকে দেখা গিয়েছিল। যা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল গেরুয়া শিবির

গত বছর নভেম্বরের শেষে দুর্গাপুরে দু’দিনের সরকারি সফরে এসে খোদ কয়লা মাফিয়া রাজু ঝাঁ-এর হোটেলে উঠেছিলেন কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে সেই সময় তুমুল শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। শুধু হোটেলে ওঠাই নয়, সেই হোটেলে রাত্রিবাস, এমনকী ইসিএলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও করেছেন কয়লা মন্ত্রী। সেই ঘটনার চার মাসের মধ্যেই খুন হতে হল হোটেল মালিক রাজু ঝাঁ-কে। যিনি বিজেপির নেতাও বটে। ফলে এই ঘটনায় অনেকেই দুইয়ে দুইয়ে চার করছেন। প্রশ্ন উঠছে তাহলে কী কোনও গোপন তথ্য জেনে গিয়েছিল রাজু? সেই কারণেই কী খুন হতে হল?



আরও পড়ুন:সাতসকালে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বি*স্ফোরণ! নিহত ১ , আহত ৬ পুলিশকর্মী

কে এই রাজু ঝাঁ? রাজেশ ঝা ওরফে রাজু (৫২)। তার বিরুদ্ধে একাধিক থানায় মামলা রয়েছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কলকাতায় আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রচুর টাকা সহ এসটিএফের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল রাজু। রাজুর উত্থানকাহিনী সিনেমার চিত্রনাট্যের মতোই। একসময় সে ট্রাকের খালাসি ছিল। পরে কয়লার ব্যবসায় নাম লেখায়। সিপিএম জমানায় উল্কার গতিতে তার উত্থান। পুরো শিল্পাঞ্চলের কয়লা ব্যবসা সে নিজে হাতে নিয়ন্ত্রণ করত। অণ্ডাল থেকে ডানকুনি তার ‘প্যাড’ চলত। রাজ্যে পালাবদলের পর রাজুর গতি থমকে যায়। অবৈধ কয়লার ব্যবসা থেকে সরে এসে রেস্তরাঁ, পার্কিং প্লাজা, কাপড়ের দোকান, পরিবহণ ও হোটেল ব্যবসা শুরু করে। মাফিয়া রাজুকেই একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দুর্গাপুরের পলাশডিহায় “সমাজসেবী” তকমা দিয়ে বিজেপিতে যোগদান করানো হয়। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যিনি দাঁড়িয়ে থেকে রাজুর হাতে বিজেপির পতাকা তুলে দেন। এরপর গত বিধানসভা ভোটে একাধিকবার বিজেপির প্রচারে তাকে দেখা গিয়েছিল। যা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল বিজেপি। একবার সিআইডি রাজুকে গ্রেফতারও করেছিল। কয়লা পাচারের অভিযোগেই গ্রেফতার হয়েছিল সে।

সেই জায়গা থেকেই প্রশ্ন উঠছে, শিল্পাঞ্চলে ইসিএল এবং সেইলের একাধিক বিলাসবহুল অতিথি নিবাস থাকতেও গত নভেম্বরে কেন সেই কুখ্যাত মাফিয়ার হোটেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উঠলেন? কারা তাঁকে রাজুর হোটেলে ওঠার পরামর্শ দিয়েছল? কেন ওই বিশেষ হোটেলে মন্ত্রীকে থাকতে হল তা নিয়ে প্রশ্ন আগেও জেগেছিল। রাজু খুন হওয়ার পর ফের নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শক্তিগড়ের আমড়া বাজারের ল্যাংচা হাবের কাছে ফিল্মি কায়দায় কুখ্যাত কয়লা মাফিয়াকে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। ১০-১২ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। রাজুর গাড়ির সামনের সিটে বসেছিল। দুষ্কৃতীরা তাকে লক্ষ্য করে পরপর এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। রাজুর বুকে গুলি লাগে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে দুষ্কৃতীরা জানালার কাচ ভেঙেও গুলি চালাতে থাকে। ঘটনাস্থলেই ওই মাফিয়ার মৃত্যু হয়। ব্যবসা সংক্রান্ত কারণ নাকি অন্য কোনও কারণ রয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কয়লা পাচার কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই তাঁকে দু’বার জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল। গত নভেম্বরের ২৩ ও ২৪ তারিখ রাজুর হোটেলেই ইসিএল কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয় কেন্দ্রের কয়লা মন্ত্রীর। সেই হোটেলেই রাত কাটান তিনি।

 

 

Previous articleBreakfast Sports: ব্রেকফাস্ট স্পোর্টস
Next articleকয়লা মাফিয়া রাজুর বিজেপি যোগ, কেন ইডি-সিবিআই হবে না? প্রশ্ন বাবুলের