নলজাতকদের ঘৃণা! এবার শিশু সুরক্ষা আইনে মামলা হোক শতরূপের বিরুদ্ধে

শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকারের প্রশ্নে ভারতীয় সংবিধান নির্দেশাত্মক নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের ওপরেও কিছু দায়িত্ব আরোপ করেছে। শিশু কে? সুরক্ষা কি ? শিশু সুরক্ষার বিষয় বস্তু নিয়ে ভারতীয় সংবিধান বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে, একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে যা লঙ্ঘিত করেছে শতরূপ ঘোষ। আইনের চোখে যা অপরাধ

সোমনাথ বিশ্বাস

মুখ আর মুখোশের পার্থক্যটা স্পষ্ট। সর্বহারার মুখোশ পড়ে কৌটো নাড়িয়ে চাঁদা আর মুখোশের আড়ালে বিলাসবহুল জীবনযাত্রা। ২২ লাখি গাড়ি চেপে হোলটাইমার শতরূপ ঘোষের ভোগের জীবনযাত্রা আজ কমিউনিস্ট-এর নামে লজ্জা! শুন্য ছাপ আর তিনবারের হারের শাপ-এর “শঠ-রূপ” প্রকাশ্যে। সেই সাঁইবাড়ির হত্যাকারী খোকন সেনদের “সুযোগ্য” উত্তরসূরি, কমরেড অনিল বসুদের সন্ত্রাসী ভাষায় পুষ্ট শতরূপ সুযোগ পেলে কতটা হিংস্র, ভয়ঙ্কর, বর্বর, পিশাচ হয়ে উঠতে পারে সম্প্রতি আলিমুদ্দিনে বসেই সেই পরিচয় বহন করছে কসবা থেকে হারের হ্যাট্রিক করা বিমানবাবু, সেলিম সাহেবদের হাতে গড়ে ওঠা এই আদদের রত্নটি।

এহেন শতরূপের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মানহানি মামলা ঠুকে দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। রাস্তার বখাটে ছেলেদের মতো অসভ্য-অশালীন শব্দ প্রয়োগের মাশুল এবার কোর্টের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দিতে হবে সিপিএমের এই কাল কা যোগীকে। সেদিন কুণাল ঘোষ ও তাঁর প্রয়াত চিকিৎসক বাবাকে অপমান করেই ক্ষান্ত থাকেনি অসভ্য শতরূপ, হাজার হাজার নলজাতক (টেস্ট টিউব বেবি) ও তাদের মা-বাবাকে কালিমালিপ্ত করেছে সর্বহারার মুখোশধারী এই কুলাঙ্গার।

কলেজে ফেল করা শতরূপের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বিমান;সেলিমদের এই কচি খোকা টুম্পা সোনাদের নেতা জনেই না, টেস্ট টিউব বেবিরও বাবা-মা থাকে, তারা অবৈধ নয়! শতরূপের টেস্ট টিউব বেবি মন্তব্য হাজার হাজার নিষ্পাপ নলজাতক ও তাদের মা-বাবার হৃদয়ে আঘাত করেছে। শুধু তাই নয়, টেস্ট টিউব বেবীদের সামাজিক সম্মান এতে ক্ষুন্ন হয়েছে। বাচাল শতরূপের মন্তব্য সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর, টেস্ট টিউব বেবিদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। রাস্তা-ঘাটে টেস্ট টিউব বেবি ও তাদের বাবা-মায়েরা শতরূপের মতো অভদ্রদের দ্বারা লাঞ্ছিত অপমানিত হতে পারেন, তার দায়িত্ব কে নেবে? যেভাবে শতরূপ টেস্ট টিউব বেদিদের নিয়ে ঘৃণা প্রদর্শন করেছে, তাতে অবিলম্বে শিশু সুরক্ষা আইনে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। প্রয়োজনে শিশু সুরক্ষা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করুক। সাংবাদিক সম্মেলনে টেস্ট টিউব বেদিবের প্রতি শতরূপের মানসিক বিকৃতি স্পষ্ট। তার অকাট্য প্রমাণ ওই সাংবাদিক বৈঠকের ফুটেজ থেকেই মিলবে।

শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকারের প্রশ্নে ভারতীয় সংবিধান নির্দেশাত্মক নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের ওপরেও কিছু দায়িত্ব আরোপ করেছে। শিশু কে? সুরক্ষা কি ? ইত্যাদি শিশু সুরক্ষার বিষয় বস্তু নিয়ে ভারতীয় সংবিধান বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে। কিভাবে শিশু সুরক্ষাকে সুনিশ্চিত করে ভারতীয় সংবিধান নির্দেশাত্মক নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের ওপরেও কিছু দায়িত্ব আরোপ করেছে যেমন শিশু সুরক্ষাকে সুনিশ্চিত করার নির্দিষ্ট আইন বর্তমানে শিশুসুরক্ষার জন্য প্রকল্প চালু আছে। যেখানে সুরক্ষা বলতে বোঝায়, যে কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শিশুরা সব রকমের বঞ্চনা, নির্যাতন (শারীরিক ও মানসিক) লাঞ্ছনা থেকে রক্ষা পাবে এবং তাদের প্রাথমিক অধিকারগুলি অর্জনের মাধ্যমে তাদের সামগ্রিক বিকাশ সাধনে সাহায্য করবে। বর্তমান আইন, পরিষেবা, ব্যবহার এবং কাজের ধারার মাধ্যমে তা রক্ষা করতে হবে।

ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কুণাল ঘোষকে অপমান করতে গিয়ে শতরূপ ঘোষ যেভাবে টেস্ট টিউব বেবিদের ঘৃণ্য নজরে দেখার অভিপ্রায় দেখিয়েছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক শুধু নয়, আইনের চোখেও অপরাধ। শিক্ষিত নাগরিক সমাজ বামেদের চার আনার এই টেলিভিশন নেতাকে ধিক্কার জানাচ্ছেন। নাম না করে শতরূপকে নীতি-শিক্ষা দিয়েছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ সুজয় দাশগুপ্ত। শতরূপকে ধিক্কার জানিয়েছেন আরেক চিকিৎসক ডাঃ ইন্দ্রনীল সাহা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে শতরূপের এমন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইন্দ্রনীলবাবু। তিনি লিখেছেন, “টেস্ট টিউব বেবিরও বাবা মা থাকে। তারা অবৈধ সন্তান নয়। এটা নিয়ে মজা করা অশিক্ষার পরিচয়।” শতরূপ হাজার হাজার টেস্ট টিউব বেবি ও তাঁদের বাবা-মা’কে আঘাত দিয়েছেন, অপমান করেছেন বলেও মনে করেন ডাঃ সুজয় দাশগুপ্ত ও ইন্দ্রনীল সাহা। শতরূপের এমন মন্তব্য নিয়ে নেটিজেনরাও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। দাবি উঠেছে, টেস্ট টিউব বেবি ও তাঁদের মা-বাবার উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার। অবিলম্বে শিশু সুরক্ষা কমিশনের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার দাবি তোলা হচ্ছে কোনও কোনও মহল থেকে।

কুণাল ঘোষ সম্পর্কে শতরূপের অশালীন ও দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি লম্বা পোস্ট করে ডাঃ সুজয় দাশগুপ্ত লিখেছেন— এখানে রাজনীতি আনবেন না, দয়া করে। শুধু কলকাতা বা ভারতে নয়, সারা পৃথিবী জুড়ে যেসব দম্পতিরা টেস্ট টিউব বেবি বা আইভিএফ করছেন বা করেছেন, এটা তাঁদের কাছে একটা ভীষনভাবে অপমানজনক মন্তব্য। মনে রাখতে হবে, আইভিএফ কিন্তু কোন হাল ফাশ্যানের জামাকাপড় নয়, পাঁচতারা হোটেলের দামী ব্রেকফাস্ট নয় বা শখ করে কেনা ২২ লক্ষ টাকার গাড়ি নয়, যে লোকে শখ করে আইভিএফ করবে। যাঁরা করছেন, তাঁরা কতটা মানসিক ও শারীরিক ভাবে বিধ্বস্ত থাকেন, সেটা তাঁরা নিজেরাই জানেন। এটা শুধু বড়লোকেরা করছে (“আমার বাবার টাকা দিয়ে আইভিএফ করছি তো কে কি বলবে”) তা নয়, আমাদের মত গরীব দেশে অনেক নিঃসন্তান দম্পতি ঘটিবাটি বিক্রি করেও আইভিএফ এর পথে এগোন, যখন সন্তানলাভের অন্য সব রাস্তা তাঁদের কাছে বন্ধ হয়ে যায়। এখনো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দম্পতিরা (সে মার্সিডিজ চড়ে যাঁরা আসেন, তাঁরাও) বলেন, “দেখুন না, যদি স্বাভাবিক ভাবে প্রেগন্যান্সি টা আসে”।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আইভিএফ এ যে বাচ্চা হয়েছে, সেটা “biologically” সেই দম্পতিরই। কারণ তাঁদের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু নিয়েই তো আইভিএফ করা। কিন্তু যদি ডোনার শুক্রাণু বা ডিম্বাণু (যেটা দম্পতির অনুমতি নিয়ে করা হয়) ব্যবহার করা হয়, সেই ক্ষেত্রে ও তো তাঁরাই বাবা মা হলেন।যারা এই পদ্ধতিতে সন্তান পান তারা তাদের সন্তান কে ভালোবাসেন না, নাকি দামী গাড়ি কিনে দেওয়াই ভালো বাবা হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা। এটা আমার মতামত মাত্র। খারাপ লাগল প্লীজ ক্ষমা করে দিয়ো।”

আরও পড়ুন- বেনজির! হাই কোর্টে ডেকে জেলব.ন্দি মানিককে জেরা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের

 

 

 

 

Previous articleবেনজির! হাই কোর্টে ডেকে জেলব.ন্দি মানিককে জেরা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের
Next articleমুঘল বিতর্কের মাঝেই সিলেবাসে বাদ ‘গান্ধী হ.ত্যা’, ‘RSS নিষিদ্ধ ঘোষণা’, সরব কংগ্রেস