রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেকে দার্জিলিং চা! নজর কাড়ল আর কোন কোন জিনিস?

শনিবার রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেককে কেন্দ্র করে কার্যত উৎসবের মেজাজ ব্রিটেনে। শনিবার ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন দেশ বিদেশ থেকে আসা ২ হাজারেরও বেশি অতিথি।

ব্রিটেনের রাজা হিসেবে শনিবার শপথ নিয়েছেন তৃতীয় চার্লস (King Charles iii)। ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের ৪০তম সিংহাসন আরোহী হিসেবে এদিন তিনি শপথবাক্য (Oath Taking Ceremony) পাঠ করেন। একই সঙ্গে রাজ্যাভিষেক হয়েছে চার্লসের স্ত্রী কুইন কনসর্ট ক্যামিলারও ((Queen Consort Camilla)। ক্যান্টারবরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি রাজা চার্লসের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তবে এদিন ব্রিটেনের রাজ পরিবারের শোভা বাড়াল বাংলা। হ্যাঁ, শুনতে একটু অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। এদিন সুদূর দার্জিলিং (Darjeeling) থেকে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পৌঁছে যায় মকাইবাড়ির চা (Makaibari Tea)। আর সেই গরম পানীয়ের স্বাদেই একদিকে যেমন মন জয় হল রাজা তৃতীয় চার্লসের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেশ বিদেশের অতিথিবর্গের, ঠিক তেমনই অনুষ্ঠানের শোভাবর্ধন করল সুদূর দার্জিলিং থেকে ব্রিটেনে যাওয়া এই বিশেষ চা। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই চায়ের ছবি শেয়ার করেছেন দার্জিলিঙয়ের সেন্ট জোসেফ কলেজের সহকারি অধ্যাপক বিক্রম রাই। আর এমন বিষয় সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেনদের মতে, সে দেশ হোক বা বিদেশের যে কোনও প্রান্ত প্রতিটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে বাংলার যোগ যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার।

উল্লেখ্য, শনিবার রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেককে কেন্দ্র করে কার্যত উৎসবের মেজাজ ব্রিটেনে। শনিবার ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন দেশ বিদেশ থেকে আসা ২ হাজারেরও বেশি অতিথি। এদিন সকালেই বাকিংহাম প্যালেস থেকে একটি ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে পৌঁছন রাজা তৃতীয় চার্লস এবং কুইন কনসর্ট ক্যামিলা (Queen Consort Camilla)। যদিও এদিন রাজার সেই মুকুটে নেই রানির (Queen Elizabeth) কোহিনুর হীরে। এরপরই প্রার্থনা সারেন তাঁরা। প্রার্থনার পর শপথ পাঠ করানো হয় নতুন রাজাকে। পাশাপাশি রাজদণ্ড ও রাজগোলক তুলে দেওয়া হয় রাজার হাতে। তবে একেবারে চূড়ান্ত পর্বে তাঁর মাথায় মুকুট পরিয়ে দেন আর্চবিশপ ক্যান্টারবরি। এদিন চার্লসের রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুই ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ও হ্যারি। এছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক সহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে। এদিন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক বাইবেল পাঠ করেন এবং তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেককে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক গর্বিত অভিব্যক্তি।” পাশাপাশি এদিন তৃতীয় চার্লসের মাথায় রাজমুকুট ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর স্ত্রী ক্যামিলা অফিসিয়ালি হলেন রানি ক্যামিলা। তাই তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক পরেই রাজমুকুট পরিয়ে ক্যামিলাকে রানির স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

নজরকাড়া উপস্থিতি

তবে অন্যদিকে, প্রায় ৭০ বছর আগে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের পর প্রথম হতে চলা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সস্ত্রীক ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। শুক্রবারই তিনি লন্ডনে পৌঁছে যান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী সোনম কাপুর। মুম্বইয়ের বিখ্যাত ডাব্বাওয়ালাদের হয়ে দু’জন প্রতিনিধিও। এদিন রাজা তৃতীয় চার্লসকে উপহার হিসেবে ওয়ারকারি সম্প্রদায়ের তৈরি একটি পাগড়ি ও চাদর দেন তাঁরা। এছাড়া, চার্লস ফাউন্ডেশনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৭ বছরের স্নাতক সৌরভ ফাডকে নামের আর্কিটেক্টকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন। উপস্থিত ছিলেন বিদেশের রাজ পরিবারের সদস্য যেমন, মোনাকোর রাজকুমার দ্বিতীয় অ্যালবার্ট ও রাজকুমারী শার্লিন, ভুটানের রাজা জিগমি খেসার নামগেল ওয়াংচুক ও রানি জেটসুন পেমা, স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপ ও রানি লেটিজিয়া।

তবে এদিন শুধু দার্জিলিং থেকে আসা মকাইবাড়ির চা নয়। আরও বিশেষ কিছু জিনিস নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর। সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল-

 

করোনেশন স্পুন: রুপোর উপর সোনার জল করা সাড়ে ১০ ইঞ্চির এই চামচ ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের একমাত্র স্মারক। ১৬৪৯ সালে রাজা প্রথম চার্লসের মৃত্যুর পর এই সেটের বাকিগুলি নষ্ট হয়ে যায়।

সেন্ট এডওয়ার্ড’স ক্রাউন: এই মুকুটের ওজন ২.০৮ কেজি। ১৬৬১ সালে রাজ্য দ্বিতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেকের জন্য নির্মিত এই মুকুটই এদিন তৃতীয় চার্লসকে পরানো হয়।

করোনেশন চেয়ার: ওক কাঠ দিয়ে তৈরি ৬ ফুট ৯ ইঞ্চির চেয়ারটি ১৩০৮ সাল থেকে প্রতিটি করোনেশনের অংশ। স্বাভাবিকভাবেই সেই চেয়ারের দিকে নজর ছিল আগত সকলের।

গোল্ড স্টেট কোচ: কাঠের উপরে সোনার পাত লাগানো ঘোড়ায় টানা এই গাড়ি ১৭৬২ সাল থেকে রাজ পরিবারের সঙ্গী। ১৮৩১ সাল থেকে প্রতিটি করোনেশনেই দেখা মেলে এই ঐতিহ্যবাহী গাড়িটির। এদিন এই গাড়িতে চড়েই চার্লস-ক্যামিলার বাকিহাম প্যালেসে ফিরবেন।

কালিনান হিরে: ২ স্টোন কাট এই হিরে এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে বড় ‘রাফ ডায়মন্ড। ১৯০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় এর সন্ধান মেলে। এদিনের করোনেশনের অন্যতম আকর্ষণীয় এক উপাদান এটি।

 

 

 

Previous articleময়নার ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রে,ফতার করল পুলিশ 
Next articleঅতিভক্তি চোরের লক্ষণ”, লেনিন থেকে এসপ্ল্যানেড, শুভেন্দুর “নাম-ইতিহাস বদল” রাজনীতিকে কটাক্ষ কুণালের