কুনোয় চিতার মৃ*ত্যুমিছিল! আরও মৃ*ত্যু দেখতে হবে, সতর্কবার্তা দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞের

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে রীতিমতো ঢাকঢোল বাজিয়ে বিশেষ বিমানে চাপিয়ে চিতাদের নিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল ভারতে। মোদি সরকারের আমলে এত চিতা একসঙ্গে আনার পর প্রচারও কম করেনি বিজেপি। কিন্তু কুনোর জাতীয় উদ্যানে চিতাবাঘগুলিকে ছাড়ার পরই শুরু হয়েছে বিপত্তি। একের পর এক কুনোর মৃত্যু হয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহ তো রয়েইছে, সেইসঙ্গে স্ত্রী কুনোর মৃত্যু হয়েছে পুরুষ কুনোর সঙ্গে সংঘর্ষে। যা খুবই ‘উদ্বেগজনক’ বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞ ভিনস্যান্ট ভ্যান ডের মেরওয়ে।পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, এভাবে ছোট জায়গায় চিতার বাসস্থান তৈরির চেষ্টা করা হলে তা গোটা প্রজাতির জন্য ভয়ের বিষয়।

আরও পড়ুন:ফের কুনো উদ্যানে চিতার মৃ.ত্যু! বন্যপ্রাণ নিয়ে ছেলেখেলা করছে কেন্দ্র? উঠছে প্রশ্ন
কুনোর জাতীয় উদ্যানের তরফে তথ্য অনুযায়ী,বুধবারের পর বৃহস্পতিবারেও তিন তিনটি চিতা শাবকের মৃত্যু হয়। প্রবল গরম এবং ডিহাইড্রেশনের কারণেই মৃত্যু হয়েছে চিতা শাবকগুলির। গত মার্চ মাসে ‘জ্বালা’ নামে একটি স্ত্রী চিতা ৪টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল। বুধবার সেগুলির মধ্যে একটির মৃত্যু হয়েছিল। অসুস্থ ছিল বাকি ৩টিও। বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে আরও দুটি শাবকের মৃত্যু হল। কুনোর আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গত ২৩ মে ওই এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেদিনই ছিল মরশুমের উষ্ণতম দিন। সেদিনই বনকর্মীরা খেয়াল করেন চিতা শাবকগুলি অত্যন্ত রুগ্ন, দুর্বল এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কয়েকটির ওজনও স্বাভাবিকের তুলনায় কম ছিল। পশু চিকিৎসকরা সেদিনই এ বিষয়ে বনকর্মীদের সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও পরপর দু’দিনে দু’টি চিতার মৃত্যু হল।
এক সাক্ষাৎকারে ভ্যান ডের মেরওয়ে মন্তব্য করেন, আরও দু’টি চিতা মারা গেল! খুবই দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু অপ্রত্যাশিত নয়।’ তিনি আরও জানালেন, চিতার পুনর্বাসনের যে প্রকল্প ভারত সরকার নিয়েছে, তা আগামী কয়েক মাসে আরও মৃত্যুকে ডেকে আনবে। এখন চিতারা তাদের নিজেদের জায়গা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। চিতাবাঘ এবং বাঘেদের মুখোমুখি হতেও শুরু করেছে। এর ফলে আরও অনেক বিপদ হবে কুনো উদ্যানে।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দু’দফায় ২০টি চিতা ভারতে নিয়ে এসে সংরক্ষণ করার যে প্রকল্প, তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত রয়েছেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ ভ্যান ডের মেরওয়ে। তিনি যদিও দাবি করেছেন, যে ক’টি চিতা মারা গেছে এবং যেভাবে পরপর তিনটি শাবক মারা গেল তা যে সহনশীলতার বাইরে চলে গেছে তা নয়।

তাঁর কথায়, ‘একথা ঠিকই, ইতিহাসে এর আগে এতগুলি চিতার এমন সফল পুনর্বাসন হয়নি। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অন্য দেশে চিতা নিয়ে গিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছিল অন্তত ১৫ বার। তবে কখনওই তা সফল হয়নি। চিতার মৃত্যুহার এমনিতেই খুব বেশি। তবে ভারত যেভাবে করছে কাজটি, তা আমরা পূর্ণ সমর্থন করছি না। সমস্ত চিতাকে ছোট জায়গায় ফেন্সিং করে রাখার কারণেই সমস্যা হচ্ছে। ওখানে যে জায়গা রয়েছে, তাতে ২টি বা ৩টি চিতা রাখলে ঠিক হবে। ২০টি চিতার জন্য বিষয়টি সমস্যার।’
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণীবিদরা বলছেন, আফ্রিকান চিতা এইভাবে থাকে না। তাদের বিচরণের জন্য অনেক বড় খোলা জায়গা লাগে। কুনোর জাতীয় উদ্যানে সেই ব্যবস্থা নেই। তাদের খোলামেলা জায়গায় ছাড়তে হবে, হাতের কাছে যাতে শিকার থাকে তা দেখতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে ভ্যান ডের মেরওয়ে-ও জানিয়েছেন, মুকুন্দ্রা পাহাড়ে যে অরণ্য আছে, সেখানে ৩-৪টি চিতাকে সরানো যেতে পারে। ‘তাঁর কথায়, মুকুন্দ্রা হিলও ঘেরা জায়গা। ওখানে জায়গা বেশি। চিতারা ভাল থাকবে। তবে কিছু হরিণ, চিঙ্কারা ছাড়তে হবে সেখানে। নইলে খাবার কম পড়বে। তবে জায়গা কম হলে, খাবার বেশি থাকলেও চিতারা মারামারি করবে। নানাভাবে আঘাত পাবে। এমনকী একে অপরকে মেরেও দিতে পারে জায়গার জন্য ও স্ত্রী চিতার অধিকার পাওয়ার জন্য। চিতাবাঘের আর বাঘের ভয় তো আছেই। আরও অনেক মৃত্যু দেখতে হবে।’

 

Previous articleঅপেক্ষার অবসান! আর কিছুক্ষণের মধ্যেই জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফলপ্রকাশ
Next articleশহরে ‘আবার বিবাহ অভিযান’! বাঙালিকে হাসানোর প্রমিস প্রিমিয়ারে