স্মরণে সতীনাথ, মননে উৎপলা: সাদাকালো যুগের সুরেলা স্মৃতিতে জন্মশতবর্ষ উদযাপন! 

কথায় সুরে কখনও ফিরলেন পবিত্র মিত্র সতীনাথ মুখোপাধ্যায় জুটি আবার কখনও মান্না- সতীনাথ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই 'এল বরষা যে সহসা মনে', করতালিতে ফেটে পড়ল প্রেক্ষাগৃহ।

যাঁরা বলেন বাংলা গান (Bengali Song) হারিয়ে গেছে, যাঁরা বলেন বাংলা গানের অনুষ্ঠানে দর্শক হয় না, বুধের সন্ধ্যায় তাঁরা একবার যদি উপস্থিত হতে পারতেন মহানায়ক উত্তম মঞ্চে (Mahanayak Uttam Mancha), তাহলে কত বড় ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বেঁচে আছেন সেই ভুল এক লহমায় ভেঙে যেত। বাংলা গানের উত্তম – সুচিত্রা মানেই সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ও উৎপলা সেন (Satinath Mukherjee and Utpala Sen)। তাঁদের সৃষ্টিকে এক সন্ধ্যায় কি আর ধরা যায়? নবীন-প্রবীণ শিল্পী আর শ্রোতার মেলবন্ধনে জৈষ্ঠ্যের সান্ধ্য দাবদাহ এক মুহূর্তে নিরুদ্দেশ। ১৯২৩ এর আজকের দিনে অর্থাৎ ৭ জুন কিংবদন্তি শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের (Satinath Mukherjee) জন্ম। ১০০ তম জন্মদিবসে কলকাতার উত্তম মঞ্চে তাই তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য ( centenary tribute)  হ্যান্ডিক্যাপড ডেভেলপমেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (The Handicapped Development Welfare Association) উদ্যোগে বিশেষ সুরেলা সন্ধ্যার আয়োজন। গানের জুটিতে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের অমর সঙ্গী উৎপলা সেন। এই বছর যে তাঁরও জন্ম শতবর্ষ। আহা! সুরেলা দাম্পত্যের স্মৃতি বিজড়িত এই জুটিকে স্মরণের মাহেন্দ্রক্ষণ কি ভুলে যাওয়া যায়?

 

দুই অমর শিল্পীর রেশম কোমল কণ্ঠস্বর আজও বাঙালির কানে গুনগুনিয়ে ওঠে শুধুই গানের গুণে। কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী উৎপলা সেন ও সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের শততম জন্মদিবস উদযাপনে সঙ্গীত মুখর সন্ধ্যার ব্যবস্থাপনায় বাবুতাই ঘোষ(Babutai Ghosh), তিনি আবার সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ও উৎপলা সেনের পরিবারেরই সদস্য। তোচন ঘোষ (Tochon Ghosh) জানালেন উৎপলা সতীনাথ তাঁর পিসি-পিসেমশাই। অনুষ্ঠানে প্রায় ৩০ জন শিল্পী উপস্থিত। টুকরো কথায় ফিরল নস্টালজিয়া। রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক দেবাশিস কুমার (Debasish Kumar) বললেন হলভর্তি দর্শক প্রমাণ করলেন বাংলা গানের প্রতি বাঙালি আজীবন অনুরক্ত। কোন্নগর থেকে এলেন উৎপলা- সতীনাথের দীক্ষাগুরু মাধবানন্দ গিরি মহারাজের আশ্রমের প্রতিনিধিও। এই মুহূর্ত যে ভোলার নয়। তাই গোটা পরিবার ‘ভাগ্যচক্র ‘ গানে ট্রিবিউট দিলেন সুরেলা জুটিকে।

কথায় সুরে কখনও ফিরলেন পবিত্র মিত্র সতীনাথ মুখোপাধ্যায় জুটি আবার কখনও মান্না- সতীনাথ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘এল বরষা যে সহসা মনে’, করতালিতে ফেটে পড়ল প্রেক্ষাগৃহ। চন্দ্রাবলী রুদ্রদত্ত গাইলেন (Chandrabali Rudra Dutta) ‘আমি তোমার কাছে বারে বারে নতুন হতে চাই’, শম্পা কুণ্ডুর (Shampa Kundu) হারমোনিয়ামে তখন ‘এমন অনেক কথাই বলো তুমি মন থেকে যা বলো না’ এর মেজাজ। সারেগামাপা খ্যাত অরিত্র মুখোপাধ্যায় গাইলেন বিখ্যাত সেই গান, ‘তুমি ফিরায়ে দিয়েছো বলে’, সুজয় ভৌমিক শোনালেন ‘জীবনের খেলাঘর’। শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় (Sreeradha Bandopadhyay) শোনালেন সুরকার সতীনাথ মুখোপাধ্যায় আর গায়িকা লতা মঙ্গেশকরের (Lata Mangeshkar) অমোঘ সৃষ্টি ‘ আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে’।

লোপামুদ্রা মিত্র (Lopamudra Mitra) ভেবেছিলেন এক গান আর হলভর্তি দর্শকের আবেগে ভেসে গাইলেন এক কালজয়ী সৃষ্টি ‘হরিনাম লিখে দিও অঙ্গে’। শিল্পীর গানের শেষে নিস্তব্ধ প্রেক্ষাগৃহ,কেউ বাকরুদ্ধ কেউ আবার চোখের জল মুছছেন। এভাবেই সেই যুগের গান এই যুগের শিল্পীদের সঙ্গে শ্রোতা দর্শকের আলাদা সংযোগ তৈরি করল। গান গাইলেন মনোময় ভট্টাচার্য (Manomay Bhattacharya) থেকে হৈমন্তী শুক্লা (Haimanti Shukla) , সুরের ছন্দে জীবন্ত হয়ে উঠল জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান। নতুন প্রজন্মের উঠতি শিল্পীরাও যেভাবে দরদ দিয়ে সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ও উৎপলা সেনের গান গাইলেন তাতে বোঝা গেল বাংলা গানের উত্তম সুচিত্রা চির আধুনিক।

বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo) বললেন এমন শিল্পী যুগল অমর। এদের সৃষ্টি নিয়েই সব প্রজন্মের বর্তমান আর ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সংস্কৃতি গড়ে তোলার পালা।


 

Previous articleমুখ্যমন্ত্রীর গ্রিভান্স সেলের হাল হকিকত জানতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তি মুখ্যসচিবের
Next articleদুরন্ত হেড-স্মিথ জুটি! ঘুরে দাঁড়াল অজিরা চাপে ভারত