গরমে গলাবন্ধ কোট পরে বিরোধীদের মদত! রাজ্যপালকে তীব্র ক.টাক্ষ কুণালের, নি.শানায় রামধনু জোটও

কুণাল রাজ্যপালকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, একবার মণিপুরের দিকে তাকিয়ে দেখুন। দেখুন কী হচ্ছে ওখানে। আর তা না করে রাজ্যপাল যদি মনে করেন উপনিষদের গল্পের মতো বিবৃতি দেবেন, বানী দেবেন সেটা মেনে নেওয়া যায় না।

রাজ্যপাল (Governor) এমন অবাঞ্ছিত বিবৃতি দিচ্ছেন যেখানে বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে এবং বিরোধীদের অক্সিজেন জোগাচ্ছেন তিনি। মণিপুরের (Manipur) দিকে তাকিয়ে দেখুন কী হচ্ছে ওখানে? অন্য রাজ্যগুলির হাল দেখেছেন? অন্য পঞ্চায়েত নির্বাচনগুলির সঙ্গে বাংলার তুলনা করে দেখেছেন? শুক্রবার পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বের অশান্তি নিয়ে ভাঙড়ে দাঁড়িয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (CV Anand Bose)। সেই ইস্যুতেই এবার পাল্টা দিল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। বৃহস্পতিবারই ভাঙড়ের ঘটনা নিয়ে কড়া বিবৃতি দিয়েছিলেন। আর তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শুক্রবার ভাঙড়ে (Bhangar) পৌঁছে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এদিন সরজমিনে পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি রাজ্যবাসীর উদ্দেশে রাজ্যপালের বার্তা নির্বাচনে হিংসার কোনও জায়গা থাকবে না। আর এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যপালের আসল স্বরূপ প্রকাশ্যে আনেন।

এদিন কুণালের অভিযোগ, গলা বন্ধ করে কালো কোট পরে রাজ্যপাল কোনও জায়গায় গিয়েছেন। এখন এই প্রবল গরমে গলা বন্ধ কোট পরে ঠাণ্ডা মাথায় তো কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। গরমে কোনওভাবেই মাথা ঠিক রাখা সম্ভব নয়। ফলে কিছু পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ আমরা রাজ্যপালের থেকে দেখতে পেয়েছি। এরপরই কুণাল মনে করিয়ে দেন এত বড় নির্বাচন, ৬১ হাজার বুথ সেখানে দু-তিনটে গণ্ডগোল হয়েছে। এসবের জন্য দায়ী আইএসএফ, সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি। অশান্তিতে আমাদের কর্মীদেরও প্রাণহানি ঘটছে। সেখানে রাজ্যপাল অবাঞ্ছিত বিবৃতি দিচ্ছেন। তবে এদিন মণিপুরের অশান্তি প্রসঙ্গে রাজ্যপালকে একহাত নেন কুণাল। তিনি রাজ্যপালকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, একবার মণিপুরের দিকে তাকিয়ে দেখুন। দেখুন কী হচ্ছে ওখানে। আর তা না করে রাজ্যপাল যদি মনে করেন উপনিষদের গল্পের মতো বিবৃতি দেবেন, বানী দেবেন সেটা মেনে নেওয়া যায় না। এরপরই রাজ্যপালকে নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করার বার্তা দেন কুণাল ঘোষ। এরপরই রাজ্যপালকে খোঁচা দিয়ে কুণাল প্রশ্ন তোলেন, সাধারণ লোক কালো শার্ট পরতে ভয় পাচ্ছেন সেখানে রাজ্যপাল কী ভাবে গলা বন্ধ কালো কোট পরে রয়েছেন?

তবে এদিন শুধু রাজ্যপালই নন, কুণালের নিশানায় উঠে আসেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder) ও আইএসএফ বিধায়ক আব্বাস সিদ্দিকির (Abbas Siddiqui) প্রসঙ্গ। তিনি সাফ জানান, সুকান্ত মজুমদার একজন ট্রেনি সভাপতি। বালুরঘাটে যার নিজের ওয়ার্ডে জেতার ক্ষমতা নেই উনি ইলেকশন মেশিনারি নিয়ে কথা বলছেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিলে বা ফেসবুকে ছবি দিলে ভোট করা যায়না। এরপরই সুকান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কুণাল বলেন ক্ষমতা থাকলে রাজ্যের যতগুলি সিটে ভোট হচ্ছে প্রতিটিতে নিজেদের প্রার্থীর নাম ও ভোটার লিস্ট দেখান। অন্যদিকে, নিরাপত্তা চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেছেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। আর সেই প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, নওশাদ চিঠি লিখুন বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করুন, রাষ্ট্রসংঘে চিঠি লিখুন, মিলিটারি ফোর্স নামান তাতে লাভের লাভ কিছুই হবে না। একটা বিষয় দিনের আলির মতো পরিষ্কার বিরোধীরা হারছে, বিরোধীরা হারবে। তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের ভোটে জিতবে। এসব নাটক অনেক দেখা আছে। কুণালের অভিযোগ, নওশাদ বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র বিধায়ক। শূন্য পাওয়া সিপিএম-কংগ্রেস ওকে সামনে রেখে এসব নাটক করাচ্ছে আর বিজেপি পিছন থেকে উস্কানি দিচ্ছে।

এদিন কুণালের বক্তব্যে উঠে আসে বাম বুদ্ধিজীবীদের প্রসঙ্গ। তাঁর অভিযোগ, বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা যারা বিবৃতি দিচ্ছেন তারা কী ২০০৩-২০০৮ সবকিছু ভুলে গেলেন? এখন সব সাধু সাজছেন বুদ্ধিজীবীরা? আপনাদের চরণ কমলে প্রণাম জানিয়ে বলছি এই দ্বিচারিতা করবেন না। এর আগে আপনাদের বিবৃতি কোথায় ছিল? তবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে রাজ্যে নির্বাচন করানো প্রসঙ্গে কুণালের সাফ জবাব, আমরা নীতিগতভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আপত্তি জানাচ্ছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আমাদের এতটুকু মাথাব্যথা নেই। প্রতিটি বুথে ১০ জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘুরে বেড়াক। তাও ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে বিরোধীরা। দেশের নিয়ম অনুযায়ী লোকসভা, বিধানসভা, নির্বাচন অবশ্যই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে করানো হোক। কিন্তু একটা রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে করানো হবে? রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্যের বাহিনী এটাই হওয়া বাঞ্ছনীয়।

অন্যদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে (Adhir Ranjan Choudhury) শূন্য পাওয়া নেতা কটাক্ষ করে কুণালের প্রশ্ন অধীরবাবু কংগ্রেসিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে সিপিএমের সঙ্গে জোট করেছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী এনেও শূন্য পেয়েছেন। আবার বড় বড় কথা। নিজের জেলা মুর্শিদাবাদে শূন্য। এরপরই কুণাল প্রশ্ন তোলেন, যদি এতই অশান্তি হয় তাহলে দেড় লক্ষ বিরোধীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন কী করে? আসলে ওদের প্রার্থী নেই দেওয়ার মত তাই এসব করে অশান্তির চেষ্টা করছে। তৃণমূল অবাধ গণতন্ত্র দেখিয়েছে বলেই শান্তিপূর্ণভাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

 

 

Previous articleমহিলা IPSকে যৌ.ন হেন.স্থা! প্রাক্তন DGPকে তিন বছরের কারাদ.ণ্ড
Next articleবৃষ্টি আনবে ‘বিপ*র্যয়’, আশায় বাঁচে বাংলা!