‘সরস মার্ক টোয়েন’, উৎপল সিনহার কলম

উৎপল সিনহা

‘ স্বর্গে হাসি নেই ‘ ।
‘ হাসির আক্রমণের সামনে কোনো কিছুই দাঁড়াতে পারে না ‘ ।
‘ উৎফুল্ল বোধ করার সেরা উপায় হচ্ছে অন্য কাউকে উৎফুল্ল করে তোলার চেষ্টা করা ‘ ।
‘ সর্বদা সৎভাবে নিজের ভুল স্বীকার করুন । এরকম স্বীকারোক্তিতে কর্তৃপক্ষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়বেন , আর আপনিও আরও ভুল করার সুযোগ পেয়ে যাবেন ‘ ।
‘ ছোটখাটো দোষ ত্রুটি নেই এমন লোকের উপর আমার বিন্দুমাত্র আস্থা নেই ‘ ।
‘ দুজন মানুষ নিজেদের মধ্যে খুব কথা বলছে , কিন্তু আপনার উপস্থিতিকে পাত্তা দিচ্ছে না , এর চেয়ে বিরক্তিকর কিছু হতে পারে না ‘ ।
‘ আজ থেকে কুড়ি বছর পরে আপনি এই ভেবে হতাশ হবেন যে , আপনার পক্ষে যা যা করা সম্ভব ছিল তা করতে পারেন নি । তাই নিরাপদ আবাস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ুন । আবিষ্কারের জন্য যাত্রা করুন , স্বপ্ন দেখুন, আর শেষমেষ আবিষ্কার করুন ‘ ।
‘ পোশাকই মানুষের পরিচয় । সমাজে উলঙ্গদের কোনো প্রতিপত্তি নেই ‘ ।
‘ সত্যবাদিতা স্মৃতিশক্তির উপর চাপ কমায় ‘ ।
‘ সবচেয়ে খারাপ একাকীত্ব হলো নিজেকেও ভালো না লাগা ‘ ।
‘ সবার সাথে যে তাল মিলিয়ে কথা বলে সে ব্যক্তিত্বহীন ‘ ।
‘ জীবনকে এমনভাবে পরিচালিত করা উচিত , যেন মৃত্যুর পরে সবাই কাঁদে ‘ ।
‘ দুঃখ নিজেই নিজের খেয়াল রাখতে পারে , কিন্তু আনন্দের পুরোটা উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই তোমাকে তা কারো সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে ‘ ।
‘ স্বাস্থ্য বিষয়ক বই পড়ার সময় সাবধান থাকবেন । ছাপার ভুলের কারণে আপনার মৃত্যু হতে পারে ‘ ।
‘ সব উক্তিই মিথ্যা — এটাও ‘ ।

উপরিউক্ত বিখ্যাত উক্তিগুলির স্রষ্টা কিংবদন্তি মার্ক টোয়েন । মার্ক টোয়েনের আসল নাম স্যামুয়েল ল্যাংহর্ন ক্লিমেন্স , যাঁর জন্ম ১৮৩৫ সালে এবং মৃত্যু ১৯১০ সালে । ‘ মার্ক টোয়েন ‘ ছদ্মনামটির অর্থ হলো দুই ফ্যাদম ( fathom ) অর্থাৎ বারো ফুট গভীর জল । এটি মূলত আমেরিকার মিসিসিপি এলাকার স্টিমবোট চালকদের একটি পরিভাষা । মার্ক টোয়েন একজন বিখ্যাত মার্কিন ঔপন্যাসিক , রম্য লেখক ও অসামান্য বাগ্মী ।
তাঁর সারা জীবনের বিপুল অভিজ্ঞতালব্ধ কিছু অসাধারণ উক্তি ও বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতার জন্য উনি অবিস্মরণীয়।
আবার ফেরা যাক সরস মার্ক টোয়েনে ।

‘ মাফ করবেন , আমি স্বর্গ ও নরক নিয়ে কোনো মন্তব্য করবো না । কারণ , ওই দুই জায়গায় আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে গেছেন ‘ ।
‘ যে পড়তে জানে না তার চেয়ে একটুও বেশি সুবিধা পায় না যে পড়ে না ‘ ।
‘ অজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস থাকলে জীবনে সাফল্য সুনিশ্চিত ‘ ।
‘ বয়স নিয়ে তুমি যদি না ভাবো তাহলে এটা কোনো বিচার্য বিষয়ই নয় ‘ ।
‘ স্পষ্টভাবে এমন কিছু নেই যা আজ ঘটতে পারে না ‘ ।
‘ জলবায়ু হলো যা আমরা আশা করি , আর আবহাওয়া হলো যা আমরা পাই ‘ ।
‘ স্কুলে যাওয়াকে তোমার শিক্ষার অন্তরায় হতে দিও না ‘ ।
মার্ক টোয়েনের সমাধিতে বসে গোর্কির কথা বলেছি … গেয়েছেন ভূপেন হাজারিকা ।

নিজের সমাগত মৃত্যুর ইঙ্গিত সম্ভবত পেয়েছিলেন মার্ক টোয়েন । দার্শনিকপ্রতিম এই মহৎপ্রাণ কিন্তু নিজের সম্ভাব্য মৃত্যু নিয়েও রসিকতা করতে ছাড়েন নি । ১৮৩৫ সালে ৩০ নভেম্বর তাঁর জন্মের সময় হ্যালির ধূমকেতু আকাশে দৃশ্যমান ছিল । ১৯১০ সালে ২১ এপ্রিল আবার ধূমকেতু দেখা গেল রাতের আকাশে যেদিন মার্ক টোয়েন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন । কী আশ্চর্য সমাপতন ! মার্ক টোয়েন তাঁর মৃত্যুর একবছর আগে বলেছিলেন , আমি ১৮৩৫ সালে হ্যালির ধূমকেতুতে এসেছিলাম ।‌আগামী বছর ( ১৯১০ ) আবার ধূমকেতু আসছে এবং আমি তার সাথে যেতে চাই । যদি তার সাথে না যেতে পারি তাহলে সেটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় হতাশা হবে । সর্বশক্তিমান বলেছেন কোনো সন্দেহ নেই ; এখন এখানে দুটি অজেয় আক্রমণ , তারা একসাথে এসেছেন , একসাথেই তাদের যেতে হবে । ১৯১০ সালে ধূমকেতুটি আকাশে দৃশ্যমান হওয়ার একদিন পরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি । বিদায় নেন সংসার থেকে ।

সরস মার্ক টোয়েনের আরও কিছু অমৃতকথা দিয়ে ইতি টানা যাক এ নিবন্ধে ।

‘ আবহাওয়ার জন্য স্বর্গে যাও , আর নরকে যাও সঙ্গলাভের জন্য ‘ ।
‘ ধূমপান ত্যাগ করা কোনো ব্যাপারই নয় , আমি হাজার বার ধূমপান ছেড়েছি ‘ ।
‘ ভালো বন্ধু , ভালো বইপত্র এবং সুপ্ত বিবেক নিয়ে আদর্শ জীবন ‘ ।
‘ তুমি যদি সত্যি কথা বলো , তাহলে তোমাকে কিছু মনে রাখতে হবে না ‘ ।
‘ দয়া হলো এমন এক ভাষা যা বধির শুনতে পায় এবং অন্ধ দেখতে পায় ‘ ।
‘ দেশপ্রেমিক তিনিই , যিনি বিশাল চিৎকার করতে পারেন কেন চিৎকার করছেন তার কারণ না জেনেও ‘ ।
‘ তোমাকে কতটা জোয়ান দেখাচ্ছে তা নিয়ে বন্ধুরা যখন প্রশংসা করে , তার অর্থ নিশ্চিত তুমি বৃদ্ধ হচ্ছো ‘।

আরও পড়ুন- স্বাস্থ্য পরিষেবায় কেন্দ্রের পুরস্কার পেল আমতার বি বি ধর গ্রামীণ হাসপাতাল

Previous articleস্বাস্থ্য পরিষেবায় কেন্দ্রের পুরস্কার পেল আমতার বি বি ধর গ্রামীণ হাসপাতাল
Next articleBreakfast news : ব্রেকফাস্ট নিউজ