রাজা লক্ষ্মণ সেন হলেন সিং! বাংলার ইতিহাসে নেই পাল বংশ: ‘আজব’ প্রদর্শনী বিজেপির

তাৎপূর্ণভাবে বাংলার গৌরবের ইতিহাসের অধ্যায় থেকে পাল বংশকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস বলছে, এই পাল বংশের রাজত্বকালেই উপমহাদেশে বাংলার ক্ষমতা এবং প্রতিপত্তি তুঙ্গে উঠেছিল

উদ্ভট ইতিহাস আর শিক্ষা ব্যবস্থায় গৈরিকীকরণের অপচেষ্টায় এবার বাংলার রাজাদের ছবি বদল করছে মোদি সরকার। বিজেপি (BJP) যে বঙ্গসংস্কৃতির উপরে কতটা শ্রদ্ধাশীল, লোকসভা ভোটের মুখে তা প্রমাণ করার জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে আয়োজন করেছে এক ছবির প্রদর্শনী (Photo Exhibition)। দলের দু’দিনের কর্মশালাকে সামনে রেখে এই আয়োজন। কিন্তু আগাগোড়া ভুলে ভরা এই প্রদর্শনীই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে গেরুয়া শিবিরের অজ্ঞতা। ব্যাপক বিভ্রান্তি জেগেছে মহারাজা লক্ষ্মণ সেন (Lakhman Sen) এবং শশাঙ্কের ছবিকে কেন্দ্র করে।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, রাজা লক্ষ্মণ সেনের ছবি বলে চালানো হয়েছে রাজস্থানের দুঙ্গারপুরের শেষ রাজা মহারাওয়াল লক্ষ্মণ সিং-এর ছবিকে। এই লক্ষ্মণ সিং ছিলেন রাজস্থান বিধানসভার অধ্যক্ষ। রাজ্যসভার সদস্যও হয়েছিলেন ক্রিকেটার রাজ সিং দুঙ্গারপুরের বাবা মহারাওয়াল লক্ষ্মণ সিং। সবচেয়ে বড় কথা, দ্বাদশ শতকে যখন রাজত্ব করেছিলেন লক্ষ্মণ সেন তখন এত নিখুঁতভাবে ছবি তুলে রাখা বা আঁকা ছিল অসম্ভব। তবে কার কোন গবেষণার ফসল ওই ছবি? প্রশ্ন তুলেছেন ইতিহাসবিদরা।

প্রশ্ন উঠেছে শশাঙ্কের ছবি নিয়েও। শশাঙ্ককে কেমন দেখতে ছিল, তা নিয়ে কোনও সুস্পষ্ট তথ্য- প্রমাণ নেই। গবেষণাতেও কিছু উঠে এসেছে কি না তাও অজানা। যা কিছু ছবি আমরা দেখি তা সবই কাল্পনিক। ঐতিহাসিকরা অন্তত সেকথাই বলেন। তা হলে এ কার ছবি? তাছাড়া রাজা শশাঙ্কের পেছনে যে স্তূপাকৃতি ভবনের ছবি দেখানো হয়েছে, ঐতিহাসিকদের মতে, সেটি নালন্দা মহাবিহারের তৃতীয় স্তূপ। এটি সারিপুত্রের স্তুপ নামেও পরিচিত। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, শশাঙ্ক তো গোঁড়া হিন্দু হিসেবে তীব্র বিরোধী ছিলেন বৌদ্ধধর্মের। তা হলে তাঁর পেছনে হঠাৎ নালন্দা বৌদ্ধবিহারের ছবি কেন? কী বোঝাতে চেয়েছে গেরুয়া বাহিনী!

তাৎপূর্ণভাবে বাংলার গৌরবের ইতিহাসের অধ্যায় থেকে পাল বংশকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস বলছে, এই পাল বংশের রাজত্বকালেই উপমহাদেশে বাংলার ক্ষমতা এবং প্রতিপত্তি তুঙ্গে উঠেছিল। স্বাভাবিকভাবেই বিস্মিত ইতিহাসবিদরা। প্রশ্ন উঠেছে, শুধুমাত্র বৌদ্ধ হওয়ার অপরাধেই কি বিজেপির প্রদর্শনীতে জায়গা পেল না পালবংশ! রাজনৈতিক স্বার্থে ইতিহাসকে বিকৃত করে এইভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অধিকার কে দিল বিজেপিকে? ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা, নাকি নিছকই লোক ঠকানোর বাসনা? অনেকের মতে অবশ্য, বঙ্গ বিজেপি-র ‘পণ্ডিত’দের উপরে চোখ বুজে ভরসা করতে গিয়ে হাসির খোরাক হয়ে গেল গেরুয়া শিবির।

Previous articleরাতভর লাগাতার বৃষ্টির জের! অযোধ্যা পাহাড়ে নামল ধস, অবরুদ্ধ রাস্তা
Next article‘আদিপুরুষ’-এর রেকর্ড ভেঙে প্রথম দিনেই ৪০ কোটির ব্যবসা ‘গদর ২’-এর