রাজভবনে কঠিন পিচে ব্যাট করলেন রাজ্যপাল-জায়া

রাজভবনে প্রথা মাফিক স্বাধীনতা দিবসের সন্ধেয় চা-চক্র। আমন্ত্রণ রক্ষায় সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyaya)। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের (CV Ananda Bose) সঙ্গে এক হিমশীতল সৌজন্যমূলক আচরণ করতে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এমনকী, চা-চক্রের মূল হল ছেড়ে লনে যেখানে বাদ্য সংগীত পরিবেশন করা হচ্ছিল, তার সামনে গিয়ে একেবারে পাঁচিলে বসে পড়লেন চিরকাল আমজনতার সঙ্গে মিশে যাওয়া রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। আর এখানেই কঠিন পিচে ব্যাট করতে নেমে পড়েন রাজ্যপালের স্ত্রী লক্ষ্মী (Laksmi)। একেবারে পাঁচিলের উপর মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসেই গৃহকত্রীর মতো তাঁকে সঙ্গ দিলেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ চেয়ার চান না নেত্রী, তবে দিদিকে প্রধানমন্ত্রী চায় কর্মীরা: ফিরহাদ, কুণাল

বিগত কয়েক দিনের রাজ্য-রাজভবনের সংঘাত প্রবল আকার নিয়েছে। ১৪ অগাস্ট বেহালার অনুষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে একের পর এক তিরে আনন্দ বোসকে বিদ্ধ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, রাজভবনের (Raj Bhavan) নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা বাজতে ছ’মিনিট আগে সেখানে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় রাজ্যপাল ছিলেন না। রাজ্যপাল আসেন ঠিক পাঁচটায়। তারপর দুজনের মধ্যে একেবারেই প্রথা মাফিক সৌজন্য বিনিময় এবং তারপরেই জাতীয় সংগীত। জাতীয় সংগীতের পরে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপাল দু’জন দুদিকে। এই অনুষ্ঠান যেখানে হচ্ছিল রাজ্যপাল সে জায়গা ছেড়ে একেবারে রাজভবনের অন্য প্রান্তে, অন্য অতিথি আপ্যায়নের দিকে চলে যান। আর মুখ্যমন্ত্রী চলে যান আরেক প্রান্তে। স্বভাবতই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে একটি ভিড় তৈরি হয়। সেখানে যেরকম রাজ্যের মন্ত্রীরা ছিলেন, ছিলেন রাজনীতিবিদ, উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক, সাংবাদিকরা। একই সঙ্গে বিদেশি অতিথি, কনসুলেটরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আলাপচারিতায় মেতে ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে চলে আসেন রাজভবনের লনে। সেখানে তখন ব্যান্ডে বিভিন্ন রকম দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত সুর বাজাচ্ছিলেন যন্ত্রসংগীত শিল্পীরা। সেখানেই পাঁচিলের উপর বসে পড়েন মমতা। একেবারে স্বভাবসিদ্ধভঙ্গিতে উৎসাহ দেন শিল্পীদের। যিনি বাঁশি বাজাচ্ছেন তাঁকে বলেন, “একটু দম নিয়ে নিন। বাঁশি বাজাতে গেলে ফুসফুসে জোর পড়ে।” যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের উৎসাহ দিতে থাকেন। তাল দেন বিভিন্ন গানের সুরের সঙ্গে। মমতাকে ঘিরেই ভিড় চলে আসে লনে। এক বিরল দৃশ্য তখন রাজভবনের লনে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সেখানেই সৌজন্য বিনিময় করেন অতিথিরা।

এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ কাটার পরে রাজ্যপাল জায়া লক্ষ্মীর খেয়াল হয় মুখ্যমন্ত্রী কোনও হলেই নেই। তিনি অবশ্য তখন ছিলেন আনন্দ বোসের সঙ্গেই। সেখান থেকে সটান লনে চলে আসেন আনন্দ বোসর স্ত্রী। সোজা গিয়ে বসে পড়েন রাজভবনের পাঁচিলের উপরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে। তারপরে টুকরো আলাপচারিতা চলতে থাকে দুজনের। দু একবার মুখ্যমন্ত্রীকে ভিতরে যাওয়ার অনুরোধ করেন লক্ষ্মী। তবে বিনীতভাবে মমতা জানান, সংগীত সুর তাঁর ভালো লাগছে, এখানে ঠিক আছেন তিনি। প্রায় আধঘণ্টা ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে পাঁচিলে বসেই পরিস্থিতির ব্যালেন্স করেন রাজ্যপালের স্ত্রী।

রাজভবনের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা ছিল পৌনে ছটায়। পাঁচটা তেতাল্লিশ নাগাদ রাজ্যপাল চলে আসেন লনে। তিনি অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রীকে ভিতরে যাওয়ার জন্য, কারণ অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী ভিতরে চলে যান। আবার জাতীয় সংগীত পরিবেশন হয় এবং পাঁচটা ৪৬ নাগাদ রাজভবন ছাড়েন মমতা।

সৌজন্য বজায় রইল। রইল শীতলতাও। চা-চক্র ঠিকই তবে চা-পান দূরের কথা রাজভবনে এক ফোঁটা জলপানও করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার মাঝে কঠিন পরিস্থিতি সামালে গৃহকত্রী হিসেবে ফুল মার্কস পেলেন আনন্দ বোসের ঘরের লক্ষী।

Previous articleধূপগুড়ি উপনির্বাচন: শহিদ জওয়ানের স্ত্রীকে প্রার্থী করেও হারের আশঙ্কায় বিজেপি
Next articleযাদবপুরকাণ্ডে রাজভবনে জরুরি বৈঠক!’গা বাঁচাতে’ মরিয়া রাজ্যপাল